পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : অধ্যাপক মক্ষমূলর * : పె' সংশোধিত ও উন্নত করিয়া থাকে, কিন্তু অজ্ঞানের মূৰ্ত্তি চিরকালই একরূপ। তথায় কোনরূপ বিকারের সম্ভাবনা নাই। আলোকেরই নীল ও পীত ও হরিং এবং উজ্জল ও তীব্র ইত্যাদি বিবিধ বিশেষণ আছে ; কিন্তু অন্ধকার চিরদিনই আঁধার ; তাহার অন্য বিশেষণ নাই । অধ্যাপক মক্ষমূলর কর্তৃক প্রচারিত ঐতিহাসিক তথ্যসকলে ভ্রম বাহির হইতে পারে এবং তৎক্লত বৈদিক শাস্ত্রের ব্যাখ্যায় কালক্রমে ভ্রাস্তি আবিষ্কৃত হইতে পারে। কিন্তু এ কথা সকলেরই জানা উচিত, যে-ব্যক্তি কাজ করে, তাহারই ভ্রান্তি ঘটে, যে-ব্যক্তি নিশ্চেষ্ট ও নিস্ক্রিয়, তাহার ভ্রান্তির আবিষ্কার বিধাতারও অসাধ্য। মক্ষমূলরের প্রতিভা কেবল ভাষাতত্ত্বেই আবদ্ধ ছিল না ; ভাযাতত্ত্বের পরিধি ছাড়াইয়৷ অন্যান্য শাখাতেও তিনি যে সকল কথা কহিয়। গিয়াছেন, তাহ লইয়৷ পণ্ডিতসমাজে সময়ে সময়ে তুমুল আন্দোলন ঘটিয়া গিয়াছে। ভাষাগত সম্পর্কের মূলে জাতিগত সম্পর্ক বিদ্যমান, এই হিসাবে ভাষাবিজ্ঞান অর্থাৎ philology মানব-বিজ্ঞানের বা anthropologyর যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছে, পূৰ্ব্বে তাহ উল্লেখ করা গিয়াছে । কিন্তু মানবের মধ্যে শোণিতসম্পকের নির্ণয় প্রকৃতপক্ষে জীবতত্ত্বের বিষয়। তোমার সহিত আমার শোণিতগত সম্বন্ধ আছে কি না, উভয়ের কথিত ভাষা ধরিয়| বিচার করিতে গেলে অনেক সময় এ বিষয়ে ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হয়। কিন্তু উভয়ের শরীরগত সাদৃত, উভয়ের গায়ের রঙ, মাথার চুল, হাতের গঠন, চোখের চাহনি প্রভৃতি ধরিয়া বিচার করিতে গেলে সিদ্ধান্ত অনেকট নিভুল হইবার সম্ভাবনা থাকে। কিছু দিন পূৰ্ব্বে মক্ষমূলর-প্রমুখ ভাষাতত্ত্বজ্ঞ পণ্ডিতের কেবল ভাষাগত সাদৃষ্ঠা ধরিয়৷ বিবিধ মানবজাতির শোণিত-সম্পর্ক নির্ণয়ে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। কিন্তু আজকাল জীবতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা তাহাদের এহ আবদার সহ করিতে পারিতেছেন না ; এবং তাহাদিগকে স্বকীয় গণ্ডীর মধ্যে অবস্থান করিতে উপদেশ দিয়া শরীরতত্ত্বের সাহায্যে মানবগণের জাতি নির্ণয়ের চেষ্টা করিতেছেন । তাহাদের সমালোচনায় ভাষ|তাত্ত্বিকগণের সিদ্ধান্ত বহু স্থলে সংশোধন-সাপেক্ষ বলিয়। প্রতিপন্ন হইয়াছে, এবং কালে আরও সংশোধনের প্রয়োজন হইবে সন্দেহ নাই । কিন্তু তাই বলিয়া ভাষা-বিজ্ঞানের মামাংস একেবারে উলটাইয়া যাইবে, এরূপও বোধ হয় না। আমাদের বৈদিক শাস্ত্র ও অন্যান্য শাস্ত্র আলোচনা করিয়া ও তৎসহ গ্রীক প্রভৃতি পাশ্চাত্য জাতির প্রাচীন শাস্থের তুলনা করিয়া অধ্যাপক মক্ষমূলর একটা অভিনব দেবতত্ত্ব ও ধৰ্ম্মতত্ত্বের স্থাপনায় প্রয়াসী হইয়াছিলেন । তিনি দেখাইতে চাহিয়াছিলেন যে, অতি প্রাচীন কালে পুরাতন আধ্য জাতি যখন মধ্য-এশিয়ায় বাস করিতেন, তখন তাহাদের একটা বিশিষ্ট ধৰ্ম্মপ্রণালী ও উপাসনা-প্রণালী ছিল। আর্য্যগণের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন দেশে উপনিবিষ্ট হইলে সেই প্রাচীন ধৰ্ম্মপ্রণালীই ক্রমশঃ প্রাদেশিক বিকার ও পরিবর্তন সহকারে বিবিধ আৰ্য্যধৰ্ম্মে রূপান্তরিত হইয়াছিল ; কিন্তু অদ্যাপি হিন্দুজাতির দেবদেবীগণের সহিত প্রাচীন গ্রীক ও জৰ্ম্মন জাতির দেবদেবীগণের পুরাতন সম্বন্ধ নির্ণয় অসাধ্য নহে ; আর্য্য জাতির প্রাচীন দেবতাগণের সম্বন্ধে বিবিধ উপাখ্যান কিরূপে ক্রমে বিস্তৃত হইয়া বিবিধ জাতির পৌরাণিক উপন্যাসে পরিণত হইয়াছে, তাহার নির্দেশও সম্পূর্ণ অসাধ্য নহে। আৰ্য্য