পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৬ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র নুতন কথা বলিতেন ও পুরাতন কথাকেও নূতন ভাষায় বলিতেন। মৃতন সামগ্রীর আস্বাদনে আমাদের রসনা নিত্য নিত্য পরিতৃপ্ত হইত ; নূতন নূতন তথ্যের আভাস পাইয়া আমাদের অস্তরিক্রিয় বহির্মুখে আসিত ও তন্দ্র ত্যাগ করিয়া জাগিয়া উঠিত। এ দেশে লেখকের পক্ষে ইহা সামান্য প্রশংসা নহে ; এবং এ দেশে পাঠকের পক্ষে ইহ সামান্য সৌভাগ্য নহে। উমেশচন্দ্র প্রধানতঃ স্বদেশের পুরাতন ইতিহাস উদ্ধারে ব্যাপৃত ছিলেন। সম্প্রতি স্বদেশের ইতিহাস উদ্ধারের চেষ্টা যেন একটু জাগিয়া উঠিয়াছে বোধ হইতেছে। এটা অত্যন্ত শুভ লক্ষণ । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এত দিন ধরিয়া আমাদিগকে যে বিদ্যা বিতরণ করিয়া আসিতেছেন; তাহার ফলে দেশে ইতিহাস জানিবার আকাঙ্ক্ষা বিশেষ উদ্দীপিত হইয়াছে, এ পর্য্যন্ত এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। প্রাচীন ভারতবর্মীয়ের ইতিহাসের গৌরব বুঝিতেন না, এইরূপ একটা বিলাপধ্বনি সচরাচর শুনা যায় ; কিন্তু আমাদের নব্য সম্প্রদায়ের কতবিদ্যেরাও যে ইতিহাসের গৌরব বুঝিয়াছেন, তাহাও প্রমাণ সাপেক্ষ। পরন্তু নব্যসম্প্রদায়ের এ বিষয়ে আচরণ অনেক সময় স্বায়ুমণ্ডলীর উত্তেজনাজনক। পাশ্চাত্য হিসাবে স্বদেশানুরাগ যাহাকে বলে, তাহ বোধ হয় প্রাচীন কালেও আমাদের ছিল না ; এবং এ-কালের শিক্ষা ও তাহা হয়ত জন্মষ্টিতে পারে নাই। মূলে স্বদেশান্তরাগের ভিত্তি না থাকিলে স্বদেশের উন্নতিচেষ্টা কেপল পণ্ডশ্রম ; এবং যে-জাতির আপনার পুরাতন কাহিনী জানিবার প্রবৃত্তি নাই, তাহার স্বদেশানুরাগের আস্ফালন সৰ্ব্বতেভাবে উপহাস্য। স্বদেশের উন্নতির জন্য এ দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন, শিল্পশিক্ষার প্রচার, বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রচার, শিল্প-সমিতি স্থাপন প্রভৃতি নানাবিধ উদ্যম দেখা যাইতেছে ; কিন্তু সকল উদ্যমই ব্যর্থ ও বন্ধ্য হয়। তাহার মূল কারণ এক। আপনার জাতির অতীত ইতিহাসে যাহার শ্রদ্ধ নাই, সে যেন স্বদেশপ্রিয়তার স্পৰ্দ্ধা না করে ; আপনার জাতিকে যে চেনে না, সে যেন কৃত্রিম স্বদেশানুরাগের আস্ফালন না করে । o আধুনিক কৃতবিদ্যগণের মধ্যে যে দুই চারিজন স্বধী পুরুষ আপনার জাতিকে চিনিতে চেষ্টা করিয়াছেন, উমেশচন্দ্র বটব্যাল তাহীদের অন্যতম। আমাদের শিক্ষিত সমাজে তাহদের স্থান অতি উচ্চে । সত্য কথা, উমেশচন্দ্র তাহার ইচ্ছানুরূপ ও ক্ষমতামরূপ কাজ করিয়া যাইতে পারেন নাই। পারেন নাই, সে আমাদের দুর্ভাগ্য। এক-এক বার মনে হয়, যদি তিনি রাজকাৰ্য্য জীবিকার উপায় স্বরূপ গ্রহণ না করিতেন, তাহা হইলে বোধ হয় আরও অধিক কাজ করিয়া যাইতে পারিতেন । কিন্তু সেও বুঝি মনের ভ্রম। কৃতবিদ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে যাহাদিগকে পরাধীন বৃত্তি গ্রহণ করিতে হয় নাই, র্যাহাদের শক্তির বা অর্থ-সামর্থ্যের বা অবকাশেরও অভাব নাই, তাহাদের মধ্যেই বা কয়জন উমেশচন্দ্রের মত দেশের প্রাচীন ইতিবৃত্তের জন্য অনুরাগ দেখাইতেছেন। আমাদের শিক্ষিতগণের মধ্যে র্যাহারা ভাবেন, এ দেশের প্রাচীন ইতিহাসের শিক্ষায় বা আলোচনায় কোন লাভ নাই, তাহাদের কথা ধরিলাম না। র্যাহারা প্রাচীনকালের জন্য কেবল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন, তাহদের পরিতাপও স্বদেশানুরাগের