পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা ঃ উমেশচন্দ্র বটব্যাল ર ૨છે এবং বহির্জগতের ও অন্তর্জগতের অস্তস্তলে অবস্থিত substance ; কোন অজেয় কারণে প্রকৃতি ও পুরুষের সম্মিলনে বা সম্বন্ধ স্থাপনে এই প্রতীয়মান বিশ্ব-জগতের অর্থাং phenomenon-সমষ্টির উৎপত্তি। এই সম্বন্ধ স্থাপনেই বিশ্ব-জগতের উৎপত্তি, সৃষ্টি ও অভিব্যক্তি । এই সৃষ্টি-ব্যাপারকে তিনি “দার্শনিক স্বষ্টি” আখ্যা দিয়াছিলেন। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা সাংখ্যদর্শনকে এভলুশনিষ্ট বা অভিব্যক্তিবাদী বলিয়া থাকেন । কিন্তু তাহার এই অভিব্যক্তির তাৎপৰ্য্য ঠিক বুঝিয়াছেন কি না, বলিতে পারি না । ইংরেজী দর্শনে যে এভলুশন শব্দের প্রয়োগ আছে, তাহাতে জড় জগতের অভিব্যক্তি বুঝায়, তাহাতে ব্যাবহারিক প্রতীয়মান জগতের বা ফেনোমেনাল জগতের ব্যাবহারিক অভিব্যক্তি বুঝায়। সাংখ্যদর্শনের অভিব্যক্তি ব| দার্শনিক পারমার্থিক অভিব্যক্তি ঐ ব্যাবহারিক বা বৈজ্ঞানিক অভিব্যক্তি হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রপ্রকৃতিক, এই কথাটা বটব্যাল মহাশয়ের সাংখ্যদর্শনেব ব্যাখ্যায় যেমন স্পষ্টভাবে প্রদশিত হইয়াছে, তেমন অন্য কোথাও হইয়াছে কি না, জানি না ; অন্ততঃ, আমার জ্ঞানের সঙ্কীর্ণ পরিধির মধ্যে কোথায়ও দেখি নাই । ভবিষ্যতের দর্শন-ব্যাখ্যাতৃগণ যদি এই পার্থক্যটা সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম করিয়া দর্শনশাস্ত্রের ব্যাখ্যা করেন তাহ হইলে হিন্দুজাতির দর্শনশাস্ব অনেক অপব্যাখ্যা হইতে নিষ্কৃতি পায়। উমেশচন্দ্রের সাংখ্যদর্শনের ব্যাখ্যাপাঠে যথেষ্ট উপকার পাইয়াছি, কিন্তু তাহার দার্শনিক দ্বৈতবাদ গ্রহণ করিতে পারি নাই । পুরুষের বাহিরে বহির্জগতের অন্তস্তলে প্রকৃতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব একটা অনুমান ব৷ হাইপথেসিস বলিয়া ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে । কিন্তু এই অল্পমানের পক্ষে স্বতন্ত্র প্রমাণ পাওয়া যায় না, এবং প্রকৃতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব অস্বীকার করিয়াও জাগতিক রহস্য ও দার্শনিক সৃষ্টি বুঝা যাইতে পারে। সে বিষয়ের আলোচনা বর্তমান প্রবন্ধে নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিক। পুরুষ অর্থে স্থলতঃ যদি আত্ম ধরা যায়, তাহ হইলে আমার মত অন্যান্য মানবের ও আত্মা আছে, ইহা স্বতঃসিদ্ধরূপে উমেশচন্দ্র গণ্য করিতেন ! এ কথাটাও ঠিক বৈজ্ঞানিক যুক্তিসঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না । আমার আত্ম। আমার নিকট স্বতঃসিদ্ধ পদার্থ হইলে ও অপরের আত্মা আমার নিকট অকুমান-গম্য ও কল্পিত পদার্থ। জড় জগৎ যেরূপ আমার অল্পমান-লব্ধ কল্পিত পদার্থ, জড় জগতে বিচরণশীল জড় শরীরধারী জীবগণের অজড় আত্মাও আমার নিকট সেইরূপ অনুমান-লব্ধ কল্পিত পদার্থ ; ইহার অধিক বৈজ্ঞানিক যুক্তিবলে আসে না । বৈদাস্তিক সমগ্র বিশ্বকে একমাত্র “অহম” পদার্থে পরিণত করিয়াছিলেন ; এবং সেই “অহম কেই রহ্ম উপাধি দিয়া বিশ্বের হৰ্ত্ত কর্তা বিধাতার স্থানে স্থাপিত করিয়াছিলেন। সাংখ্য-মতে যেমন অনির্দেশ কারণে প্রকৃতি ও পুরুষের, জ্ঞ ও জ্ঞেয়ের সম্মিলনে জ্ঞানের উৎপত্তি, অর্থাৎ বিশ্বের দার্শনিক দৃষ্টি ; বেদান্ত-মতে সেইরূপ "অহম” বা ব্রহ্ম নামধেয় পদার্থ হইতে কোনও অনির্দেশ কারণে বা অবিদ্যাযোগে বিশ্বের উৎপত্তি। উভয়ত্রই একটা অনির্দেগু কারণ বৰ্ত্তমান আছে। জ্ঞ ও জ্ঞেয়ের সন্মিলন কিরূপে ঘটিল, অথবা “অহম'-এর কিরূপে বিকার ঘটিয়৷ বিশ্ব-জগতে পরিণতি হইল, তাহার প্রণালী নির্দেশ করিতে গেলেই এই অনির্দেগু হেতুর অবতারণ আসিয়া পড়ে। প্রচলিত