পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a"ヶ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র একটা লাইব্রেরি হয়। রজনীকান্ত র্তাহার উৎকৃষ্ট লাইব্রেরিতে বৈদেশিকের লিখিত এই সমস্ত গ্রন্থই প্রায় সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন ; কিন্তু স্বদেশীয়ের নিকট তিনি কোন সাহায্যই পান নাই। রজনীকান্ত র্যাহাদের রচিত ইতিহাসের সমালোচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, তাহাদের কথার উপরেই তাহাকে নির্ভর করিতে হইয়াছিল । রজনীকান্তের প্রদর্শিত পথে আজ কাল অনেকেই চলিতে আরম্ভ করিয়াছেন ; কতিপয় কুতবিদ্য লোকে স্বদেশের ইতিহাসের স্বাধীন সমালোচনা আরম্ভ করিয়াছেন। রজনীকান্তের অনুবত্তীর আজকাল অভাব নাই ; কিন্তু ঐতিহাসিক প্রবন্ধে তিনি যে ওজস্বিনী ভাষার অবতারণা করিয়াছিলেন, তেমন ভাষায় কথা কহিতে সকলে সমর্থ হন নাই । তাহার ভাযা তাহার রচিত গ্রন্থগুলির প্রতিপত্তির অন্যতম কারণ। উপরে যে আন্তরিকতা ও সহৃদয়তাকে তাহার বিশিষ্ট গুণ বলিয়। উল্লেখ করিয়াছি, সেই আন্তরিকতা ও সহৃদয়ত হইতে এই ভাষা উৎপন্ন। র্তাহার মনের আবেগ, বণিত বিষয়ের প্রতি র্তাহার শ্রদ্ধা ও অতুরাগ, সেই ভাষায় স্বভাবতঃ প্রকাশ পাইত ; তাহার মৰ্ম্ম হইতে সেই ভাষা বহির্গত হইয়৷ পাঠকের মৰ্ম্মে গিয়া প্রতিহত হইত। ভাষার বিশুদ্ধির দিকে তাহার তীক্ষ দৃষ্টি ছিল । বাঙ্গাল। রচনায় সংস্কৃত ব্যাকরণের কঠোর নিয়ম পালন করা উচিত কি না, এ বিষয়ে তাহার মত সম্পূর্ণ উদার ও অসংকীর্ণ ছিল ; তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের সর্বতোভাবে অন্তসরণের পক্ষপাতী ছিলেন না ; অথচ তিনি স্বয়ং যেরূপ মাজ্জিত ও বিশুদ্ধ ভাষার ব্যবহার করিতেন, তাহা বাঙ্গালা লেখকগণের মধ্যে দুই এক জন ব্যতীত আর কেহ করিয়াছেন কি না জানি না। কিন্তু বিশুদ্ধি রক্ষার জন্য এই প্রয়াস তাহার রচনাকে কখনও কৃত্রিমতাদুষ্ট করে নাই । তাহার আন্তরিকতা ও সহৃদয়ত তাহীকে এই দোষ হইতে রক্ষা করিয়াছিল। ভাষাকে তিনি কেবল ভাবপ্রকাশের উপায়স্বরূপ মনে করিতেন না । এই কারণে র্তাহার রচিত ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক প্রবন্ধগুলি সাহিত্যের শরীর পোষণ করিবে ; সাহিত্যমধ্যে তাহারা আসন লাভ করিবে । সে স্থান কত উচ্চে, তাহার নির্ণয়ের কাল এখনও উপস্থিত হয় নাই। বঙ্গসাহিত্যের বর্তমান দরিদ্র অবস্থায় বাঙ্গালায় লিখিত অন্য কোন ঐতিহাসিক গ্রন্থের বা ঐতিহাসিক প্রবন্ধের সম্বন্ধে এতটুকু বলা যাইতে পারে কি না সন্দেহস্থল। বঙ্গসাহিত্যের সেবা রজনীকান্তের জীবনের মুখ্যতম ব্রত ছিল ; তিনি আপন ক্ষমতানুসারে সেই ব্ৰত যথাসাধ্য পালন করিয়াছেন, এবং সেই ব্রতের পালনেই আপনার সমগ্র শক্তি অর্পণ করিয়া গিয়াছেন। জীবনে তিনি আর কোন কাজই করেন নাই। র্তাহার অপেক্ষ প্রতিভাশালী লেখক বঙ্গদেশে অনেক জন্মিয়াছেন ; বঙ্গসাহিত্যে র্তাহীদের স্থান অনেক উচ্চে অবস্থিত ; র্তাহাদের কার্য্যের সহিত তংকৃত কার্য্যের তুলনার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু এক মাত্র বঙ্গসাহিত্যের, অতএব বঙ্গমাতার সেবাব্রতে সমগ্র জীবন উদযাপনের উদাহরণ অধিক আছে কি না জানি না। এই অনুরক্ত সন্তানের অকালমরণে দরিদ্র বঙ্গমাতা সস্তাপিত হইবেন সংশয় নাই।