পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর বালক বলেন্দ্রনাথ যখন “বালক’ ও ‘ভারতী ও বালক’ অবলম্বন করিয়া বাঙ্গালার সাহিত্য- ক্ষেত্রে অবতরণ করেন, তখন র্তাহার সহিত বা র্তাহার রচনার সহিত আমার পরিচয় ছিল না । 'সাধনা' বাহির হইলে তাহার রচনা আমাকে আরুষ্ট করে ; তার পর হইতে তিনি যখন যাহা লিথিয়াছেন, প্রচুর আনন্দপ্রাপ্তির আশা লইয়া তাহাই আগ্রহের সহিত পাঠ করিয়াছি, এবং কোন বারেই যে সেই আনন্দলাভে বঞ্চিত হইয়াছি, তাহা মনে হয় না । সেই আনন্দের উৎস এত শীঘ্র অন্তহিত হইবে এবং বলেন্দ্রনাথের রচনাসংগ্রহকে পাঠক-সমাজে উপস্থিত করিবার ভার আমাকেই গ্রহণ করিতে হইবে, তাহা কখনও ভাবি নাই । এই কাৰ্য্যে কিন্তু আমার অধিকারও নাই, যোগ্যতাও নাই, তৎসত্ত্বেও যখন র্তাহার স্বজনগণ আমাকে এই ভাবু দিলেন, তখন অধিক বাক্যব্যয় না করিয়াই ভার লইলাম। কেন লইলাম, ঠিক বলা কঠিন। বোধ করি, বলেন্দ্রনাথের রচনার প্রতি আমার অনুরাগ প্রকাশের এই অবসর আমি ত্যাগ করিতে চাহি নাই । বলেন্দ্রনাথের রচনাভঙ্গিই আমাকে এ বিষয়ে আকর্ষণ করিয়াছিল ; এমন সযত্নে গাথা শব্দের মালা তার পূৰ্ব্বে আমি দেখি নাই। শুনিয়াছি, বলেন্দ্রের ভাষা তাহার সাধনার ফল । শিক্ষানবিসি অবস্থায় কাটিয়া ছাটিয়া পালিশ করিয়। তিনি ভাবের উপযোগী ভাষা গড়িয়া লইয়াছিলেন । তিনি অলঙ্কারের বোঝ। চাপাইয়া ভাষাকে অস্বাভাবিক উজ্জলতা দিবার চেষ্টা করিতেন না ; কিন্তু শব্দগুলিকে বিশেষ বিবেচনার সহিত বাছিয়া লইয়া কোথায় কোনটি বসাইলে ভাল মানাইবে, তাহ স্থির করিয়া ও গাথনির দৃঢ়তার দিকে নজর রাখিয়া তিনি যত্নের সহিত শব্দের মাল৷ গাঁথিতেন । কাজেই তাহার ভায। কারিগরি হাতের অপূৰ্ব্ব কারুকার্য্য হইয়। দাড়াইয়াছিল। তিনি ঐশ্বৰ্য্যের দীপ্তি অপেক্ষ সৌষ্ঠবের শ্ৰছাদ দিবার চেষ্টা করিতেন , তাহার জন্য যে সুরুচির, যে সামঞ্জস্যবৃদ্ধির, যে সংযমের প্রয়োজন ছিল, তাহা প্রচুর পরিমাণে আয়ত্ত করিয়াছিলেন। আধুনিক বাঙ্গালী-সাহিত্যে ভাষার প্রতি এইরূপ যত্ন অতি দুর্লভ | অধিকাংশ লেখক ভাষাকে কেবল ভাবপ্রকাশের যন্ত্র মাত্র দেখেন, উহাকে কারুশিল্পের হিসাবে দেখেন না। কবিতা রচনায় ছন্দের আবশ্বকতা আছে ; বলেন্দ্রের গদ্যরচনাতেও সেই ছন্দের ঝঙ্কার শুনিতে পাওয়া যায় ; এই ছন্দ ভাবের সহিত মিলিয়া মিশিয়া অপরূপ কলাকৌশলের উৎপত্তি করিয়াছে। বলেন্দ্রের ভাষায় যে স্নিগ্ধ-কোমল-প্রশান্ত উজ্জলতা আছে, তাহ চোখ ঝলসাইয়া দেয় না। কেবলই তৃপ্তি উৎপাদন করে। সেই তৃপ্তি কিন্তু কখনও মাষ্ট্র ছাড়াইয়া পরিতৃপ্তিতে দাড়ায় না । স্রোতস্বতীর মত ইহা স্থির গতিতে আপন নির্দিষ্ট পথে চলে ; ইহার পূর্ণত কখনও উচ্ছ্বাসে পরিণত হইয়া কূল ভাসাইয়া জলপ্লাবন ঘটায় না। ইহার মধ্যে কোথাও ফেনিল আবৰ্ত্ত নাই ; কোথাও ইহা জলপ্রপাতের কোলাহল উপস্থিত করে নাই। বঙ্কিমচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথের ভাষা র্তাহাদের বংশবদ ভৃত্য , তাহারা উহাকে যখন যে কাজে বিনিয়োগ করিয়াছেন, তাহাদের আদেশে বা ইঙ্গিত মাত্রে ভাষা তদনুযায়ী পরিচ্ছদ বা অস্ত্র-শস্ত্র বা ঐশ্বৰ্য্য