পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রকুন্দর রচনাসমগ্র سراوان به সহস্র দিকে, অন্য পক্ষে সাহেবদের অসুবিধা লক্ষ দিকে । অতএব এ ওজর চলিবে না । বলা হইবে, সাহেবেরা যাহা বলিয়াছেন ও লিখিয়াছেন, তাহা ভুল। ভুল হইবারই কথা। তাহাতে বিস্ময়ের কিছু মাত্র কারণ নাই। সাহেবের এত উৰ্দ্ধে অবস্থান করেন যে, দূরবীণ যোগেও তাহারা আমাদের কার্য্যকলাপ ঠিক দেখিতে পান না। তাহার উপর আমাদের গায়ের গন্ধ এত বিকট যে, তাহারা আত্মবক্ষার জন্য বহু উৰ্দ্ধে থাকিতে বাধ্য। তথাপি তাহার। ষে দুটা কথা লেখেন ও বলেন, তাহা তাহদের অনুগ্রহ ও বাহাদুরি। তাহার নিন্দ করা উচিত নহে । স্বীকার করিলাম, তাহার। ভুল বলেন । কিন্তু আমরাই বা সে ভুল সংশোধনের কি চেষ্টা করিলাম ? কেবল বসিয়া হাসিলে, সে হাস্য শ্বেতশরীরে কলঙ্কলেপ করিবে না। আমরা আমাদের সম্বন্ধে কয়টা নিভুল কথা জানি বা জানিবার চেষ্টা করিয়াছি ? অথচ কথা জানিবার আছে । এ যে অতল বারিধি—ইহার পার নাই , ইহার জলতলে কত রত্ব আছে, তাহাব ইয়ত্ত নাই ; কেহ কি একবার সেই রত্বের জন্য জাল ফেলিবে না ? এই ঔদাস্য, এই অশ্রদ্ধা মার্জনীয় নহে। চহ মহাপাতক । মাতর্জন্মভূমি, তোমার কোলে শুইয়া, তোমার স্তন্তে লালিত হইয়। আমরা এই জডদেহ ধারণ করিয়াছি, তোমাকে আমরা চিনিতে চাহি ন—তুমি কে, তাহ জানিবার আমাদের প্রবৃত্তি নাই। কোন কালে তোমার কি মূৰ্ত্তি ছিল, আমরা তাহা দেখিতে চাহি না , কবে তুমি কেমন ছিলে, কেন তুমি এমন হইলে, তাহ অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন বুঝি না। তোমার পূর্বতন সস্তানগণ কেমন ছিল, কি করিয়াছিল, আমাদিগের জন্য কি রাখিয়া গিয়াছে, তাহা জানিবার জন্য আমাদিগের ব্যাকুলত নাই। ঋষিঋণ ও পিতৃঋণ স্কন্ধে লইয়৷ আমরা ভূমিষ্ঠ হইয়াছি, সেই ঋণশোধে আমাদের প্রবৃত্তি নাই। ধিকৃ আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায়কে প্রাচীনের ইতিহাসের গৌরব বুঝিতেন না, তাহারা দেশের ইতিহাস লখিয়া যান নাই। আমরা বৎসর বৎসর ইতিহাসে পাণ্ডিত্যের উপাধি লাভ করিতেছি, আমরা ইতিহাসের গৌরব বুঝিয়াছি ! এরূপ তর্কও শুনিয়াছি—ভারতবর্ষের ইতিহাসে আবার কি আছে যে, তাহার আলোচনা করিব ? অরে হতভাগ্য ! বিদেশী আসিয়া যখন ভারতবর্ষের ইতিহাস লিথিয়া দিবে, তখন তাহা অধ্যয়ন করিয়৷ পণ্ডিত্যের উপাধি লইবে ! অরে পাপিষ্ঠ ! • আবার এমন তর্কও না শুনিয়াছি, এমন নহে—শঙ্করাচার্য্য বা চৈতন্যদেব যাহা উপদেশ দিয়া গিয়াছেন, যাহা শিখাইয়া গিয়াছেন, তাহার ফলভোগ করিতেছি, জীবনে তাহা কাজে লাগাইয়া জীবনকে উন্নত করিতেছি, তাহার কোন তারিখে জন্মিয়াছিলেন, কোন তারিখে দেহত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহা জানিয়া কি লাভ ? আরে চতুর ! কেবল ঋণ গ্রহণ করিব তাহার পরিশোধের জন্য ভাবিব না ! ইতিহাস আলোচনা—উহা অতীতের উপাসনা—উহা পিতৃপুরুষের নিকট ঋণমোচনের একটা উপায় ।