পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ 8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র হইবে, যতদিন ইহার অভ্যন্তরে হৃদয়ের স্পন্দন অনুভূত না হইবে, ততদিন কেবল অট্টালিকা এবং লাইব্রেরি ও লেবরেটারির ঐশ্বৰ্য্য বাড়াইয়া জাতীয় জীবনের অভিব্যক্তিতে অধিক ফল পাওয়া যাইবে, সে বিষয়ে আমার সংশয় আছে। অট্টালিকা এবং লাইব্রেরী ও লেবরেটারি অর্থ-সাপেক্ষ ; অর্থ থাকিলে ঐ সকল সম্পত্তি বাজারে কিনিতে পাওয়া যাইবে। কিন্তু প্রকৃত প্রাণশক্তি, যাহার বলে দেহমধ্যে অঙ্গের সহিত অঙ্গের ঘাতপ্রতিঘাত হয়, যাহাতে স্পন্দমান হৃৎপিণ্ডের শোণিতধারা সৰ্ব্বশরীরে সঞ্চালিত করিয়া দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সজীব ও সুন্দর রাখে, তাহা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যায় না। আইনের বলেও তাহার ক্ৰষ্টি হয় না। পূর্বে বলিয়াছি এবং এখনও বলিতেছি, শিক্ষাপ্রণালীই এই প্রবন্ধের আলোচ্য, শিক্ষার বিষয় লইয়া কোন কথা উত্থাপন অপ্রাসঙ্গিক । সহস্র বা চতুঃসহস্ৰ বৎসর পূর্বে মহন্তের জ্ঞানের পরিসর যতদূর বিস্তৃত ছিল; বর্তমান কালের পরিসরের সহিত উহার তুলনা হয় না। মানব জাডির সৌভাগ্যবলে মানবেতিহাসে ঋষির অভাব কোন যুগেই ঘটে নাই। পুরাতন ঋষিগণের আবিষ্কৃত বিদ্যার সহিত আধুনিক ঋষিগণের আবিষ্কৃত বিদ্যার সংযোগ হইয়াছে। জ্ঞানের প্রবাহ এখন শতমুখে সহস্ৰমুখে ধাবিত হইতেছে ; শতমুখী জাহ্নবীর প্রবাহের ন্যায় এই জ্ঞানের প্রবাহ মানবের মনোভূমিকে আর্দ্র, সিক্ত ও উর্বর করিতেছে। শিক্ষাদানের যে প্রণালীই অবলম্বিত হউক না, এই জ্ঞান-তরঙ্গিণীর এই সহস্র ধারাকে তাহার অনুকূল করিয়া লইতে হইবে। এই বিষয়ে কাহারও কোন মতদ্বৈধ হইতে পারে না। তবে কোন প্রণালী অবলম্বিত হইলে দেশ কাল পাত্র বিবেচনায়, জাতিগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় সম্যকৃ ফল পাওয়া যাইতে পারিবে, অম্মদেশে স্বধীগণের ও মনীষিগণের পক্ষে এক্ষণে তাহাই বিচাৰ্য্য। ( মানসী’, আশ্বিন ১৩১৭) আমাদের দেশের শিক্ষার আদর্শ এখনকার অপেক্ষ দুরূহতর ও পরীক্ষা কঠিনতর করা ভাল, কি মন্দ ? শিক্ষার আদর্শ দুরূহ ও পরীক্ষা কঠিন হওয়া উচিত, ইহাতে আর সন্দেহ কি ? পরীক্ষোৰ্ত্তীর্ণ ব্যক্তি যতই উচুতে থাকেন, সমাজের ততই লাভ। শত মূখের অপেক্ষ এক পণ্ডিত পুত্র বঙ্গজননীর অঙ্কশোভা করুক, ইহাই চাণক্য পণ্ডিতের সহিত আমরাও প্রার্থনা করি। এ বিষয়ে আবার বিবাদ কি ? যেখানে বিবাদ, সেখানে অন্য পক্ষ নিরুত্তর। দুর্ভাগ্যক্রমে কোন জননীই কেবল পণ্ডিত প্রসব করেন না, এ বিষয়ে তাহার ইচ্ছামত কাজ হয় না ; জননী প্রসববিষয়ে ঠিক কৰ্ত্ত নহেন, অনেকটা অধিকরণস্থানীয় । একশটা সন্তানের মধ্যে নব্বইটা গণ্ডমূখ, নয়ট না পণ্ডিত না মুখ ও একটা পণ্ডিত জন্মে । বিশ্ববিদ্যালয় দুরূহ শিক্ষা ও কঠিন পরীক্ষায় পণ্ডিতকে বাছিয়া সব্বজনমান্য করুন ; মুখগুলা প্রাইমারী স্কুলে কাগজে কলমে চাষ শিখুক ; কিন্তু মধ্যশ্রেণীর উপায় কি হইবে ? তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিত্যক্ত ও কৃষিবিদ্যায় অনধিকারী। তাহাদের জন্য কি কেবল B class ও C class এর ব্যবস্থা ও চরম স্থান কেরাণীর ডেস্ক ? অন্য