পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२b~० রামেন্দ্রস্বন্দর রচনাসমগ্র চাহি, তাহা হইলে আমাদিগকে ভগীরথের মত তপস্যা করিয়াই শঙ্করের জটাকলাপের অন্তরাল হইতে ভগবতী নবগঙ্গাকে আবিষ্কার করিয়া বঙ্গের পল্লীতে পল্লীতে ও বঙ্গবাসীর হৃদয়ে হৃদয়ে তাহার ধারা প্রবাহ বহাইতে হইবে। এই অভিসন্ধি লইয়া আমরা প্রাচীন অঙ্গদেশের রাজধানীর সমীপে আজ আমাদের শিবিরসন্নিবেশ করিয়াছি। পৌরাণিকী কিংবদন্তী অনুসারে প্রাচীন ঋষি দীর্ঘতম যে দিন এই দেশে উপনিবিষ্ট হইয়াছিলেন, সেই দিন অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ নামধেয় তাহার পুত্ৰগণ এই দেশে আর্য্যসভ্যতার বীজ বপন করিয়াছিলেন। সে কোন কালের কথা, ঠিক জানি না ; কিন্তু অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ আজ পর্য্যস্ত সেই বীজ হইতে উৎপন্ন তরুচ্ছায়ায় উপবিষ্ট হইয়া তাহার পুষ্প ফল উপভোগ করিতেছে। এই অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গের সহিত অন্তরঙ্গভাবে পরিচিত হইবার জন্যই আমাদের এই অধ্যবসায় । আমরা বর্ষে বর্ষে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উপস্থিত হইয়া সেখানকার জল ও মাটি, বন ও জঙ্গল, হাট ও ঘাট, সেখানকার তরুলতা, পশু পার্থী, সকলেরই অনুসন্ধান করিতে চাহি ; গ্রাম্য ও নাগরিক সকলের সহিত আলাপ করিয়া তাহারা কি খায়, কি পরে, তাহা জানিতে চাহি । সেখানকার জমিতে কি ফসল জন্মে, সেখানকার হাটে কি পণ্যদ্রব্যের বেচাকেন হয়, গাছে কি ফল ফলে, পুকুরে কি মাছ থাকে, ডালে কোন পার্থী ডাকে ও বনে কোন জন্তু বিচরণ করে, তাহার সন্ধান লইতে চাহি। সেখানকার কুযকে কি গান গায়, পণ্ডিতে কোন শাস্ত্রের চর্চা করে, পুরাঙ্গনা কোন ব্রতের অনুষ্ঠান করে, তাহা আমরা জানিতে চাহি। ভাঙ্গা বাড়ী দেখিলে আমরা তাহার ফটে তুলিব, উচু ডাঙ্গ দেখিলে তাহ খনন করিব, এবং সহস্রমুখী কিংবদন্তী, উপকথা ও ইতিহাসকে একসঙ্গে মিশ্রিত করিয়া যে গ্রাম্য সাহিত্যের হুষ্টি করিয়াছে, তাহ সংগ্রহ ও সঙ্কলন করিব । ঘাটে মাঠে যে শিলাখণ্ড বা তাম্রপত্র অস্পষ্ট অক্ষরে অতীত কালের ইতিবৃত্তের কোন ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ বহন করিতেছে, তাহা আমরা কুড়াইয়া আনিব, তরুতলে যে দেবমূৰ্ত্তি ভগ্ননাস ও ভগ্নপদ হইয়া অযত্নে গড়াগড়ি যাইতেছে, তাহা তুলিয়া আনিব ; আর গৃহস্থের ঘরে ঘরে যে ছেড়া তালপাত। চন্দনচচ্চিত হইয়া পুরুষানুক্রমে পূজা গ্রহণ করিতেছে, তাহ নকল করিয়া লইব । ইটের টুকরা বা কলসীর কাণ ঘষা পয়সা বা ছেড়া কাগজ, যাহা সকলের অবজ্ঞাত, আমরা তাহার কিছুই অগ্রাহ করিব না। বৎসর বৎসর আমরা এই সকল উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়৷ আমাদের ভাণ্ডার পূর্ণ করিতে থাকিব এবং আমরা আশা করি ভবিষ্যতে ধাহাদের হাতে এই ভাণ্ডারের চাবি থাকিবে, তাহারাই বঙ্গমাতার পূজাকৰ্ম্মে পুরোহিত বলিয়া গণ্য হইবেন । বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মিলনের প্রথম অধিবেশন যখন কাশিমবাজারে আহূত হয়, সেই অধিবেশনের প্রথম দিনে আমি সেই সমবেত সাহিত্যসেবকগণের সম্মুখে এই প্রস্তাব উপস্থিত করিয়াছিলাম। পরদিন আমাদের পরমসম্মানভাজন শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয় বঙ্গের কেন্দ্রস্থলে এই উদ্দেশ্বের অনুকূল একটি সারস্বত ভবনের প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থিত করেন। বঙ্গভাষার সাহায্যে বঙ্গের ইতিহাস