পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ-ভবন 3ציל ও পুরাতত্বের আলোচনায় যিনি আমাদের অগ্রণী, তাহার স্বভাবসিদ্ধ ওজস্বিনী ভাষার উদ্দীপনা এষ্ট প্রস্তাবের গুরুত্বের উপযোগী হইয়াছিল ; এবং বঙ্গীয়সাহিত্য-সম্মিলনের আহবানকৰ্ত্ত মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র, র্যাহার অকৃত্রিম ভক্তিসহকুত পুষ্পাঞ্জলিলাভে বঙ্গভারতী কখনও বঞ্চিত হন না, র্যাহার বদান্ততার অজস্র ধারাবর্ষণে বঙ্গের সাহিত্যক্ষেত্র উর্বর হইতে চলিয়াছে, সর্ববিঘ্ন অতিক্রম করিয়৷ র্যাহার উপস্থিতি অদ্য আমাদের হৃদয়ে নূতন বল ও নূতন উৎসাহ সঞ্চার করিয়া দিতেছে, তিনি এই প্রস্তাবে আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করিয়াছিলেন। তারপর দুই বৎসর গত হইল, কিন্তু আমাদের সেই মানস স্বপ্ন, সেই সারস্বত ভবন এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। প্রতিষ্ঠিত হয় নাই বটে, কিন্তু সেই সারস্বত ভবনের যে সকল উপকরণ সঞ্চিত হইবে, তাহার সংগ্ৰহকাৰ্য্য আরদ্ধ হইয়াছে। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের রঙ্গপুরস্থিত শাখা, সেই সংগ্রহকৰ্ম্মে যথাসাধ্য শক্তি নিয়োগ করিতেছেন ; ভাগলপুরের এই সাহিত্য-সম্মিলনের প্রদর্শনী-গৃহেও আপনার সেই চেষ্টার ব্যাপকতার কতক পরিচয় পাইতেছেন। বঙ্গের নানা স্থানে অনেক লোক এই সঙ্কলন কার্য্যে নিযুক্ত হইয়াছেন। বহু বর্ষ অতীত হইতে চলিল, বঙ্গসাহিত্যেব তদানীন্তন নেতা বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শনে’ বঙ্গের সাহিত্যসেবীকে বাঙ্গালী জাতির উৎপত্তি, গতি ও স্থিতি বিষয়ে তথ্য নিরূপণের জন্য আহবান করিয়াছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মৰ্ত্ত দেহে দিব্য দৃষ্টি সংস্থিত ছিল ; তিনি দৈব প্রেরণায় বঙ্গের ভবিষ্যৎ নথদর্পণে দেখিতে পাইয়াছিলেন ; স্বর্গে বসিয়াও র্তাহার অঙ্গুলিপ্রেরণায় তাহার স্বদেশবাসীকে তিনি অদ্যাপি গন্তব্য পথে নিয়ন্ত্রিত করিতেছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের নবনিৰ্ম্মিত মন্দিরে আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের নির্মাতাদিগের আলেখ্যসমূহের মধ্যভাগে সেই স্বর্গগত মহাপুরুষের যে পটচিত্র প্রতিষ্ঠিত আছে, তাহার অভ্যন্তর হইতে দিব্য জ্যোতির স্ফুরণ আমরা ভক্তের চক্ষুতে নিরীক্ষণ করি, এবং সেই দিব্য জ্যোতির প্রেরণায় আমরা বৰ্ত্তমান ক্ষেত্রে কৰ্ত্তব্যসাধনে উদ্যত হইয়াছি। কোদালি হাতে ও বাজর মাথায় আমরা মজুরি করিতে উপস্থিত হইয়াছি ; ধাতু, পাথর ও মাটির টুকরায় আমরা সুপনিৰ্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইয়াছি ; ছেঁড় কাগজের ও পোকায় কাটা তালপাতার জঞ্জালে আমাদের মাৰ্ব্বেলমণ্ডিত কুঠরী যুগবং অধুন্য ও অভিগম্য হইয়া পড়িয়াছে ; হিজিবিজি হস্তাক্ষরের দেীরাত্ম্যে আমাদের পরিষৎ-পত্রিকা সভ্যগণের ভয়প্রদ হইয়া উঠিয়াছে ; এবং প্রত্নতত্ত্বেও বিভীষিকা আমাদের কাব্যকলাকুতুহলী বন্ধুগণের হৃদয়ে আতঙ্কসঞ্চারের উপক্রম করিয়াছে। বিধাতা জগতের প্রতি নিরীক্ষণ করিবার জন্য আমাদিগকে চক্ষু দিয়াছেন ; কিন্তু বাহিরের দিকে নিরীক্ষণ করিবার পূৰ্ব্বে আপনার দিকে নিরীক্ষণ করা আবশ্বক। সকল দর্শনের উচ্চে অবস্থিত আত্মদর্শন। আমাদের বাঙ্গালী জাতির এই আত্মদর্শনের সময় উপস্থিত। বাঙ্গালা দেশে কোথায় কি আছে, বাঙ্গালী জাতির কবে কি ছিল, ইহার প্রতি দৃষ্টিপাতই আমাদের এখন আত্মদর্শন। দেশে ষে হাওয়া উঠিয়াছে, এই আত্মদর্শন তাহার অনুকূল। এমন একটি স্থান চাহি, যেখানে বসিয়া বাঙ্গাল দেশের অতীতের পর্য্যালোচনা করিব, বৰ্ত্তমানের প্রতি নিরীক্ষণ করিব,