পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ૨ (t দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে এই মধ্যশ্রেণীর জন্য বহু বিদ্যার আলয় আছে। এ দেশে এই পঙ্গপালের আশ্রয়স্থান নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপরাশ পাইয় তাহার। তবু ভদ্রসমাজে স্থান পাইত ! বিশ্ববিদ্যালয় তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে তাহারা যায় কোথায় ? বিশ্ববিদ্যালয় তাহাদিগকে উপাধি না দেন, একটা জীবনধারণের অনুমতি বা লাইসেন্স আপাততঃ দিতে এত আপত্তি কেন ? তার পর আর একটা কথা—শিক্ষার আদর্শ দুরূহ হওয়া উচিত, পরীক্ষাও কঠিন হওয়া উচিত, কিন্তু শিক্ষার পদ্ধতিটা সঙ্গে সঙ্গে তোলাইবার চেষ্টা উচিত নয় কি ? আগে ভাল শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা না করিয়া কোন পরীক্ষা কঠিন করিলে কি ফল হইবে ? কিন্তু শিক্ষাদানের উন্নতির ব্যবস্থা সম্বন্ধে কিছুই শোনা যায় না কেন ? জৰ্ম্মনিতে, আমেরিকায়, জাপানে যেমন শিক্ষার ব্যবস্থা আছে, এখানে সে ব্যবস্থা করিবে কে? গবর্ণমেণ্ট কিছু বলেন না, দেশের লোকেও কিছু বলে না, পরস্পর মুখ চাহিয়া আছে মাত্র | © উচ্চশিক্ষা যত উচ্চ হয় ততই ভাল। কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য উচ্চশিক্ষকের প্রয়োজন, সে শিক্ষক কোথায় ? এ কালের উচ্চশিক্ষার সরঞ্জামে খরচ চাই—এখন ধান দিয়া লেখাপড়া হইবে না—দু লাখ দশলাখের কাজ নয়, এক একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দু কোটি দশ কোটি আবশ্যক। মাকিনের দেশে, জৰ্ম্মনিতে ও জাপানে সেইরূপ ব্যবস্থা। আগে সেইরূপ ব্যবস্থা কর, তার পর সেই সকল দেশের সঙ্গে এক তুলাদণ্ডে শিক্ষার তুলনা করিও । নূতন আইনে ত বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষাদানের ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে। নূতন বিশ্ববিদ্যালয় সে বিষয়ের কি করেন, দেখিতে চাই । দেশের বডলোকের কাছে হাত পাতিয়া বিশেষ ফল হইবে না। এ কালের বিদ্যাদান তাহাতে হয় না। অন্য দেশে গবর্ণমেণ্ট উচ্চশিক্ষায় কি খরচ করেন সেটা একবার দেখা আবশ্যক । বাগানে ভাল ভাল গাছ থাকিলেই বাগানের শোভা, কিন্তু মালী যদি কেবল আগাছা উপড়াইবার জন্যই ব্যস্ত থাকে, তাহাতে ভাল গাছ ত জন্মায় না, আগাছা উপড়াইয়াও অত পাওয়া যায় না। ভাল গাছের চারা পুতিয়া উচিতমত সার গোবরের বন্দোবস্ত আবখ্যক । একটা কথা মনে রাখা উচিত। সকল বিষয়েরই দেশকালপাত্রবিবেচনা আছে। ঐ বিবেচনাদির নাম কাণ্ডজ্ঞান । কাগুজ্ঞানটা বর্জন করা ঠিক নহে। যিনি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যালেণ্ডারের পাতায় লম্বাচোড়া Syllabus ছাপাইয়া দেশ উদ্ধার করিতে চাহেন, তিনি নিতান্তই “উৎপলপত্ৰধারয়া শমীলতাং ছেত্ত,ং ব্যবস্ততি।” ( 'ভাণ্ডার, জ্যৈষ্ঠ ১৩১২ ) A. স্বদেশী বিশ্ববিদ্যালয় স্বদেশী বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কাল্পনিক পদার্থ। নিম্নোক্ত কথাগুলি পড়িবার সময় বর্তমান বাস্তবিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধ-কল্পনার কিছু মাত্র প্রয়োজন নাই। ]