পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯ • রামেন্দ্রমুন্দর রচনাসমগ্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ দেশে পাশ্চাত্ত্য বিজ্ঞানের চর্চা আরম্ভ হইয়াছে, কিন্তু এত কাল আমরা সম্পূর্ণভাবে পরমুখাপেক্ষী ছিলাম। দূরদেশে কে কি নূতন তত্ত্ব আবিষ্কার করিতেছে, গলা বাড়াইয়া দেখিবার জন্য আমরা উদগ্রীব থাকিতাম ; কে কি নূতন কথা বলিতেছে, তাহ শুনিবার জন্য উৎকর্ণ থাকিতাম। যাহা দেখিতাম এবং শুনিতাম, তাহাই প্রচার করিতে পারিলে আমাদের কর্তব্য শেষ হইল, ইহাই আমরা জানিতাম । এইরূপে দেখিয়া এবং শুনিয়াই আমাদের জীবন ধন্য হইল মনে করিতাম। স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করিয়া জগতের নূতন তত্বের আবিষ্কার আমাদের দ্বারা যে হইতে পাবে, সে ক্ষমতা যে আমাদের থাকিতে পারে, এ বিষয়েই আমাদের সন্দেহ ছিল। বোধ করি, এখনও বিশ বৎসর অতীত হয় নাই, এশিয়াটিক সোসাইটিব তাৎকালিক সভাপতি Sir Alexander Pedler কতকটা ক্ষোভের এবং কতকটা তিবস্কারের সহিত প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, এশিয়াটিক সোসাইটির কাগজপত্র হইতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ দেশের লোক স্বাধীন বৈজ্ঞানিক আলোচনায় একান্ত অক্ষম। বিশ বৎসর একটা জাতির জীবনে অধিক দিন নহে, কিন্তু এশিয়াটিক সোসাইটির এখনকাব সভাপতি বোধ হয়, সেইরূপ মন্তব্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করিবেন। এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় বিশ বৎসর পূর্বে যে প্রমাণ পাওয়া যাইত না, পাশ্চাত্ত্য দেশের বিবিধ বৈজ্ঞানিক সভার পত্রিক উদঘাটন করিলেই আজকাল তাহার প্রচুর প্রমাণ পাওয়া যাইবে। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র এই সভার শোভাবৰ্দ্ধনের জন্য উপস্থিত নাই। কিন্তু প্রফুল্লচন্দ্রের কৌমুদীতে এই সভা প্রদীপ্ত হইতেছে। সভাস্থলে আর যে সকল নমস্য বিজ্ঞানাচাৰ্য্যগণকে সমবেত দেখিতেছি, তাহাতে কেবল এই সাহিত্য সম্মিলনী যে দীপ্তি লাভ করিয়াছে, এমন নয়, বঙ্গদেশের এই সাহিত্যকেন্দ্র হইতে যে আলোকের বিকিরণ আরম্ভ হইয়াছে এবং যাহা ক্রমশঃ প্রসার লাভ করিয়া দেশ-বিদেশে প্রতিফলিত হইবে, তাহা মনে কবিয়াই আমার হৃদয় চঞ্চল হইয়া উঠিতেছে। বঙ্গের এই ক্ষুদ্র বৈজ্ঞানিকমণ্ডলীকে আমি সাদরে অভ্যর্থনা করিতেছি । বঙ্গজননীর আশীৰ্ব্বাদ তাহাদেব মস্তকের উপরে মঙ্গল পুষ্পেব ন্যায় বর্ষিত হউক। যে আশা ও আকাঙ্ক্ষা লইয়া আমি তাহাদের প্রতি চাহিয়৷ আছি, তাহ। আমার জীবনের এই অপরাহ্নকালে ভগ্নদেহে সামর্থ্য দান করিবে। পৃথিবীর নিষ্ঠুর দ্বন্ধক্ষেত্রে অধ:শয্যায় শয়ানা আমার প্রাচীন জননী ধূলিশয্যা পরিত্যাগ করিয়া, গৌরবের মুকুট পরিয়া জগতের সম্মুখে পুনরায় দণ্ডায়মান হইবেন, এই আশ অন্তিম দিনে অামাব বলাধান করিবে। বলা বাহুল্য, জগতের বিজ্ঞান-মন্দিরে আমবা এখনও শিক্ষার্থী এবং আরও বহুদিন ধরিয়া আমাদিগকে শিক্ষার্থী থাকিতে হইবে । যে সকল বৈদেশিক আচাৰ্য্যগণের পদপ্রাস্তে বসিয়া আমরা শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছি, র্যাহাঁদের প্রসাদে আমরা পাখিব জীবনের ধূলি ঝাড়িয়া জীবনকে মধুময় করিতে সমর্থ হইয়াছি, তাহদের নিকট আমরা চিরদিন প্রণত থাকিব । জাগতিক বিধানে সত্যের মুখ হিরন্ময় পাত্রের .া পিছত ও আচ্ছাতি রহিয়াছে, প্রতিভাবলে ও সাধনাবলে বাহাবা সেই ক্ষ্যোতির্ণ আবরণ ভিন্ন করিয়া সত্যের কোন না কোন দেশ দেখিতে পান, ৰে