পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३***9 রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র এ কালেও যে সকল স্কুলপাঠ্য পুস্তক প্রকাশিত হইতেছে, তাহ ঐ কয়খানির তুলনায় নিম্ন পদই পাইবে । স্কুলপাঠ্য নহে, জনসাধারণের মধ্যে জ্ঞানপ্রচার উদ্দেশুে লিখিত, এরূপ গ্রন্থেরই বা একালে প্রাচুর্য্য কোথায় ? বাঙ্গালা সাহিত্যের চারি দিকে শ্ৰীবৃদ্ধি হইতেছে, অথচ বিজ্ঞানাঙ্গের এরূপ অধোগতির কারণ কি ? আমি যে কারণ অনুমান করি, তাহা স্পষ্ট ভাষায় বলিতে গেলে এই সভায় উপস্থিত বিদ্বজ্জনের বিশেষ শ্লাঘার হেতু হইবে না। পঞ্চাশ বৎসরের পূর্বকালের তুলনায় আজিকার দিনে আমাদের দেশে মনীষী পণ্ডিতের অভাব নাই, অভিজ্ঞ পণ্ডিতের অভাব নাই, রচনাপটু দক্ষ লেখকের অভাব নাই, তবে কিসের অভাব ? আমি অনুমান করি, ইহার মুখ্য কারণ—শ্রদ্ধার অভাব, প্রীতির অভাব, অমুরাগের অভাব, প্রেমের অভাব। আমি যাহা পাইয়াছি, তাহা পাচজনের সঙ্গে বাটিয়া লইব, আমি যাহা অর্জন করিতেছি, দেশবাসীকে তাহ বিতরণ করিব, আমি যে রসের অধিকারী হইয়াছি, দীনদরিদ্রনির্বিশেষে আমার ভাই ভগিনীকে সেই অদ্ভুতরসের আস্বাদনের ভাগ না দিলে, দুই হাতে তাহা বিলাইতে না পারিলে, আমার প্রাণের পিয়াস মিটিবে না। যে প্রেম হইতে এই মহাভাবের উৎপত্তি হয়, সেই মহাভাবের অসম্ভাবই ইহার মুখ্য কারণ বলিয়া আমি অনুমান করি। কৃষ্ণমোহন ও রাজেন্দ্রলাল ! ভূদেব ও অক্ষয়কুমার ! তোমরা প্রতির ধারা বিলাইয়া তোমাদের পার্থিব জীবনের লীলাভূমিকে উর্বর করিয়া গিয়াছিলে ; তোমাদের পরবর্তী আমরা সেই ভূমির সম্পদ অধিকার করিতেছি, কিন্তু তোমাদের তর্পণকৰ্ম্মে আমাদের অধিকার নাই। অদ্যকার সভায় সমবেত সভ্যমণ্ডলীকে এই লজ্জাবিমোচনের জন্য আমার বিনীত অনুরোধ জানাইয়া আমার বক্তব্যের উপসংহার করিতে ইচ্ছা করি। আপনার কৃতবিদ্য, আপনারা জ্ঞানী, আপনারা মনস্বী, আপনার যশস্বী, আপনাদের চেষ্টায় বঙ্গের নবজাগরণ আরব্ধ হইয়াছে। জননী বঙ্গভূমির কীৰ্ত্তিধ্বজ। আপনাদের হস্তে ধৃত রহিয়াছে। আপনাদের নিজের যশোরশ্মি দেশ বিদেশে ব্যাপ্ত হইতেছে। কিন্তু বঙ্গজননী আপনাদের মুখের দিকে চাহিয়া আছেন, বঙ্গভাষা আপনাদের স্নেহ প্রার্থনা করিতেছে, বঙ্গসাহিত্য আপনাদের করুণাপ্রার্থী, বঙ্গের জনসাধারণ আপনাদিগের অস্তেবাসী ; আপনাদিগের সম্মুখে এই বিশাল কৰ্ম্মক্ষেত্র পড়িয়া আছে, এক্ষণে আপনারা অবতরণ করুন । * জ্ঞান বিজ্ঞান মনুষ্যজাতির সাধারণ সম্পত্তি ; দেশবিশেষের বা জাতিবিশেষের ইহাতে কোনরূপ বিশিষ্ট অধিকার নাই। গণিতবিদ্যা বা জ্যোতিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা বা রসায়নবিদ্যা, জীবনবিদ্যা বা অধ্যাত্মবিদ্যা, কোন বিদ্যাতেই ভারতবর্ষের, কিংবা বঙ্গদেশের কোন বিশিষ্ট স্বত্বাধিকার থাকিতে পারে না। র্যাহার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, র্তাহাদের সকলেরই সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে। তথাপি ভারতবর্ষের অথবা বাঙ্গালা দেশের সহিত কোন কোন বিজ্ঞানের বিশিষ্ট অঙ্গের বিশিষ্ট সম্পর্ক আবিষ্কার করা যাইতে পারে । আমাদের এই বঙ্গীয়-সাহিত্য-সম্মিলনে এবং আমাদের বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদে বঙ্গীয় স্বধীগণ কর্তৃক সেই সকল বিশিষ্ট অঙ্কের বিশিষ্ট আলোচনা করিতে ইচ্ছা করি। বাঙ্গালার জলবায়ুতে, বাঙ্গালার আবহাওয়ার গতিতে ৰে বিশিষ্টতা আছে, তাহার বিশিষ্ট আলোচনায় বঙ্গের চিকিৎসক হইতে