পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : আনি বেসান্ট 象>茨 বৈরাগ্য অর্থে জীবনে অনাশক্তি, এবং এই অর্থে বৈরাগ্য আধুনিক হিন্দুর মজ্জাগত, এরূপ নির্দেশ করিলে সম্পূর্ণ ভুল না হইতে পারে। কৰ্ম্ম এদেশে নাই, এমন নহে ; কেন না, কৰ্ম্মই জীবন। কৰ্ম্মলোপে জীবনের অস্তিত্ব টিকে না। তবে বৈরাগ্য-ধর্শ্বের এতটা প্রাচুর্ভাব, অন্য কোনও জাতির মধ্যে দেখা যায় না । তবে চিরকাল এমন ছিল না। বৈদিক সময়ে আৰ্য্য মানবের জীবন সংসারে বীতস্পৃহ হয় নাই। তখন কৰ্ম্মই জীবনের উদেশ্ব ছিল। নতুবা আর্য্যনিবাস ও আর্য্যধর্মের অভু্যদয় হইত না । যখন চারি দিকে শত্রুপরিবেষ্টিত হইয়া বাস করিতে হয়, তখন জীবনে সহসা অনাসক্তি আসিয়া উপস্থিত হইলে জীবনযাত্রা বড়ই সংক্ষিপ্ত হইয় পড়ে । বৈরাগ্য ছিল না, তৎপরিবর্তে ছিল আশা আর উদ্যম, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম, আর সঙ্গে সঙ্গে স্বার্থময়ত । আজি কালি যাহারা পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের সুরে সুর মিলাইয়া বৈদিক ধৰ্ম্মের স্তুতিগান ও পৌরাণিক হিন্দুধর্মের নিন্দাবাদ ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াছেন তাহার 'ধৰ্ম্ম’ শব্দটার কিরূপ অর্থবিপৰ্য্যয় করিয়া ফেলেন,—দেখিয়া একটু ব্যথিত হইতে হয়। ইংরাজী ভাষায় রিলিজন (religion) শব্দ যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, আমাদের পুরাতন ধৰ্ম্ম শব্দটার সে অর্থে ব্যবহার করিতে আমরা বড়ই নারাজ। রিলিজনের প্রতিশব্দ বাঙ্গালা ভাষায় ঠিক পাওয়া যায় না ; কেন না, ভারতবর্ষে স্বতরাং বঙ্গদেশে রিলিজন নামক একটা কিছু গত চারি হাজার বৎসরের মধ্যে ছিল না । খ্ৰীষ্টানের রিলিজন কতকটা খ্ৰীষ্টানের জুতা, টুপি প্রভৃতি পরিচ্ছদের স্থলীয় একটা কিছু ; কতকটা শোভার জন্ত, কতকটা লোক দেখানর জন্য এবং হয়ত শরীরট। একটু গরম রাখিবার জন্য উহার আবশ্বকতা । কিন্তু আমাদের ধৰ্ম্ম আমাদের জীবনের সহিত সৰ্ব্বতোভাবে সহবর্তী ও সহব্যাপী ; জীবনের প্রধান লক্ষণ ও বিশেষণ । মনুষ্যের সম্পাদিত ক্রিয়ার সমষ্টিকে যদি জীবন বলা যায়, মনুষ্যের সম্পাদ্য কৰ্ত্তব্যের সমষ্টিকে ধৰ্ম্ম বলা যাইতে পারে। ইংরাজীতে এক ডিউটি ( duty ) ভিন্ন ইহার সমার্থসূচক সমকক্ষ প্রতিশব্দ আর পাওয়া যায়"। মানুষের কর্তব্য-সমষ্টিকে স্থূলতর তিন ভাগ করিতে পারা যায় ; নিজের প্রতি কৰ্ত্তব্য, আপনার লোকের প্রতি কৰ্ত্তব্য, এবং পরের প্রতি কৰ্ত্তব্য । এই তিন কৰ্ত্তব্যের সমষ্টিতে ধৰ্ম্ম । ধর্শের অভু্যদয়ের ইতিহাস মনুষ্যজাতির ইতিহাসের সহিত আলোচনা করিলে দেখা যায়, নিজের প্রতি কৰ্ত্তব্যজ্ঞানটারই উৎপত্তি সকলের আগে । মানুষকে প্রাণী হিসাবে দেখিলে দেখা যায়, আত্মপ্রীতিই তাহার স্বভাবগত ধৰ্ম্ম । সমাজবন্ধনের সহকারে পরপ্রীতি আত্মপ্রীতির অনুকূল হয়, তাই ক্রমশঃই প্রীতিটা আপনার সঙ্কীর্ণ পরিধি ছাড়িয়া বাহিরের অপরের অভিমুখে প্রসার লাভ করে। পরপ্রীতি কতকটা আত্মপ্রীতির প্রতিকূল, কিন্তু সামাজিক মানুষের নিকট সৰ্ব্বতোভাবে প্রতিকূল নহে, কতকটা অমুকুল। পরকে ক্রমশঃ আপনার করিয়া না নিলে সমাজবন্ধন চলে না। তাই পয়গ্ৰীতি ক্রমশঃ ধর্শ্বের অন্তভূক্ত হইয়া পড়িয়াছে। এমন কি কোনও কোনও বিচক্ষণ শাস্ত্রকারের মতে পরার্থপরতাই ধৰ্ম্ম ; এবং স্বার্থপরতাই