পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : ইংরাজী শিক্ষার পরিণাম \96 సె কে আছে, জানি না। আমরা বালকের হাতে কর্দম ; কাঠিন্য মাত্র বজ্জিত। আমাদিগকে লইয়া যাহা গড়িবে, আমরা তাহাতেই পরিণত হইব । আমরা এক দিনের মধ্যে তেত্রিশ কোটি দেবতা ভাঙ্গিয়া একেশ্বরবাদী বা নাস্তিবাদী হইয়৷ দ্বাডাই, আবার এক বক্তৃতায় আমাদিগকে থিয়সফিষ্ট করিয়া তুলে। আমরা হাতচালা ও ভূত নামান গল্প শুনিয়া উৎকট হাস্তে গৃহপ্রাকার ধ্বনিত করি, আবার পরমুহূৰ্ত্তে টেলিপ্যাথি বা সাইকিক ফোর্স শুনিলেই আত্মহারা হইয়া গলিয়া যাই । আমরা বিজ্ঞান শিখিতেছি সত্য ; কিন্তু বৈজ্ঞানিকেব ধাতু আমাদেব শোণিতে আসে নাই। বিজ্ঞানের নামে আমরা আটখানা হই, কিন্তু আমরা যাহা শিখি তাহা মোটের উপর উপবিজ্ঞান বা অপবিজ্ঞান। মানুষের চুল তাডিতের পরিচালক নহে শুনিবা মাত্র আমরা লম্বা লম্বা টিকি রাখিতে আরম্ভ করি , এবং চন্দ্রের অবস্থান ভেদে জোয়ার ভাট হয়, পাঠ করিবা মাত্র কোষ্ঠী গণাইতে বসি । এমন শোচনীয় অবস্থা কি হয় ! বস্তুত: বিজ্ঞানের পদ্ধতি যে কি, তাহা আমরা জানি না ও জানা আবশ্বক বোধ করি না। মস্তিষ্কে কতকগুলা মশলা পুরিতে পারি, কিন্তু তাহা সাজাইয়া গোছাইয়া যথাবিন্যস্ত করিবাব ক্ষমতা রাখি না। সমগ্রট একবারে নিরীক্ষণ করিতে না পারিয়া কেবল এক প্রদেশই দেখিতে থাকি ও তাহা হইতে লম্বা চৌড় সিদ্ধান্তের আবিষ্কার করি। খাইতে পারি, কিন্তু হজম করিবার শক্তি নাই। প্রাকৃতিক নিয়মের অন্বেষণ করিতে গেলে আগে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি তন্ন তন্ন করিযা অনুসন্ধান করিয়া চোখের সমক্ষে দাড করাইতে হয় ও পরে সহস্র উপায়ে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া, ছেদ করিয়া, জোডা লাগাইয়া, ভাঙ্গিয়৷ গডিয়া, বিপুল পরিশ্রম ও অধ্যবসায় সহকারে পরস্পরের সম্বন্ধ নিরূপণ করিতে হয়, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। আমরা এক লম্ফে সাগর পার হইতে চাই, সেতুবন্ধনের অপেক্ষা করিতে পারি না। ডিম হইতে বাহিরিব মাত্র উডিতে চাই, পক্ষোদ্ভবের দেরী সহে না। উদ্যমও নাই, অধ্যবসায়ও নাই ; ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করিয়া বহির্জগতে প্রেরণ করিবার দরকার বোধ করি না ; কেবল একবার চকিতের মত দৃষ্টিপাত করিয়া, পরে ধ্যানযোগে বিশাল বিশ্বের কার্য্যপ্রণালীর সামঞ্জস্ত করিতে চেষ্টা করি। পাদরি সাহেব জাতিভেদের নিন্দা করিলেই আমরা পৈতা ছিড়িয়া ফেলি, আবার রিসলি সাহেব নাক মাপিয়া জাতিভেদের মূল আবিষ্কার করিয়াছেন শুনিলেই কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া নেত্র বিস্ফারিত করিয়া থাকি। এমন স্বায়ুহীন পেশীহীন জীব কি আর আছে ? ইংরাজী শিক্ষায় আমাদের শতধা উন্নতি হইয়াছে ; কিন্তু বৈজ্ঞানিকতা জন্মিয়াছে স্বীকার করিতে পারি না । দেশী হউক আর বিলাতী হউক, গুরুবাক্য যত দিন আমরা দ্বিধাহীনচিত্তে গ্রহণ করিব, তত দিন আমাদের বৈজ্ঞানিকতার উৎপত্তি সম্ভাবনা নাই । বিজ্ঞান ছাড়িয়া সাহিত্যক্ষেত্রে, অন্যত্রই বা আমরা কি করিয়াছি ? কিছু দিন ইংরাজী ভাষায় চটকদার গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লিখিয়া বাহাত্রী লইবার তৃষ্ণ