পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : ইংরাজী শিক্ষার পরিণাম ○> > জল আইসে না ? লেখনী কি সরে ? re দধিসমূদ্র ও ইক্ষুসমূত্রের কথা তুলিয়া হাসিও না ; তৈলে পাত্র, কি পাত্রে তৈল বিতর্কের কথা তুলিয়া বিদ্রপ করিও না ; উনবিংশ শতাব্দীর উপাজিত জ্ঞানের সহিত, সেকালের জ্ঞানের তুলনা করিয়া তাচ্ছিল্য দেখাইও না। মনে রাখিও, সে কোন কালের কথা ; মনে রাখিও, তখন পৃথিবীর অবস্থা কি ছিল, তখন এ দেশেরই অবস্থা কিরূপ ছিল। নিউটন যাহা জানিতেন না, এখন তুমি জান ; তথাপি তুমি নিউটনের চরণরেণুর যোগ্য নও এ কথাও স্মরণ রাখিও। তবে সেকালের মাহাত্ম্য বুঝিবে। অজিত জ্ঞানের পরিমাণ লইয়া কথা নহে ; জ্ঞানার্জনস্পৃহা ও জ্ঞানার্জনক্ষমতা লইয়া কথা। আমরা ইংরাজের নিকট শিখিতেছি ; সেকালেও তাহার পরের কাছে না শিখিত, এমন নহে। গ্রীকের নিকট জ্যোতিষশিক্ষা প্রমাণ। তবে বিদেশ হইতে বীজ আমদানি করিয়া তাহার চাষ করিতে জানিত, তাহ ফলাইতে পারিত ; আমরা তাহ পারি না। আর যে জ্ঞান স্বাবলম্বনে নিজের চেষ্টায় উপজ্জিত হইয়াছিল, তাহার পরিমাণ ও মাত্রাই কি সামান্য ? সে কথা উত্থাপনের প্রয়োজন নাই । সেকালের সহিত এ কালের তুলনা করিও না । পুরাকালের কাহিনী দূরের কথা, সে দিন মুসলমানী আমলে আমাদের যা ছিল, এখনও তাই আছে কি ? মুসলমান রাজার সময়ে আমাদের অবস্থা অতি নিকৃষ্ট ছিল, এখন বড় উন্নত হইয়াছে, এইরূপ একটা কথা গম্ভীরভাবে অনেকে যখন তখন বলিয়া থাকেন। ছি ছি! লোকে যখন কুনিশ করিয়া সাত পা পিছাইয়। কাজি সাহেবের সম্মুখে যাইত, যখন ভট্টাচাৰ্য্য লম্বিত শিখা সহ টোলে বসিয়া ন্যায়শাস্ত্রের কচকচি লইয়া কাল কাটাইতেন ও গৃহস্থ ভদ্র পারসীর বয়েদ আবৃত্তি করিয়া মুন্সিয়ানা জানাইত, এবং পাঠশালার গুরুমহাশয় পোড়োদের স্বাবা তামাক সাজাইয়া লইতেন ও উকুন তোলাইতেন, সেকালের অবস্থা মনে করিতেও আমাদের ঘৃণা আইসে। ছি, ছি, সেকালের প্রসঙ্গ মুখে আনিও না। আমরা লজ্জার মাথা খাইয়। তখনকার প্রসঙ্গও উত্থাপিত করিতে চাই, এবং তখনকার ইতিবৃত্ত স্মরণ করিয়া সময়ে সময়ে চোখে হাত দিয়া থাকি। ভট্টাচার্য্যের টোলঘরের পাশ্বস্থ গোশালা ও ইজার-পরিহিত কাজি সাহেবের মুখে পলাণ্ডুর গন্ধ ভুলিয়া যাই। প্রতাপ ও শিবাজী, নানক ও কবীর, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ও ধৰ্ম্মক্ষেত্রে যুদ্ধার্থ দণ্ডায়মান দেখিতে পাই। চতুষ্পাঠীমধ্যে গণিত ও জ্যোতিষ, বেদান্ত ও ন্যায়, কাব্য ও অলঙ্কারের স্বাধীন আলোচনা মনে পড়ে। এ সকল সত্য কথা ; ইতিহাসের অপলাপ করিও না । সেকালে যত দুর্দশাই থাক, সজীবতার লক্ষণ ছিল ; শত্রুতেও আমাদের মর্য্যাদা করিত, ভয় করিত। এখন কি ? সুতরাং জ্ঞানার্জনে স্পৃহা ও ক্ষমতা আমাদের কোনও কালে ছিল না, এ কথা বলা সাজিবে না। ইংরাজী বিদ্যার কেহ দোষ দিবে না ; সে কথা যে বলিবে, তাহার জিহ্বা কাটিয়া ফেল। তবে সম্প্রতি এ দুরবস্থার কারণ কি ? কারণ অনুসন্ধেয়। অদৃষ্টদোষেই হউক, আর শিক্ষাপ্রণালীর দোষেই হউক, ইংরেজী শিক্ষা ঘাট বৎসরে আমাদের দেশে ফলে নাই। বৎসর বৎসর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধির্মান