পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র א לס\ কালে প্রতিনিধি চ্যান্সেলারের মুখে এই আপেক্ষই শুনা যায়। আমাদের জানার্জনে মতিরতি হইল না, জ্ঞান-রসের প্রতি আমাদের তৃষ্ণ জন্মিল না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বৎসর বৎসর হাজার দরুণে গ্রাজুয়েট স্বষ্টি করিতেছেন, কিন্তু একজনও একখান লাঙ্গল আনিয়া জ্ঞানরাজ্যের এক ছটাক জমিতে চাষ দিল না। দুঃখের বিষয় সন্দেহ নাই, কিন্তু ততোধিক দুঃখের বিষয় আর একটা আছে। সরস্বতী যত্বের সহিত কোলে লইয়া তাহার বীণা পুস্তক তাহার সন্তানগণের হাতে দেন ; কিন্তু কৃতী সন্তানের মায়ের কোল হইতে নামিবা মাত্র বীণাটি ভাঙ্গিয়া ও পুস্তকখানি বেচিয়া মায়ের সপত্নী লক্ষ্মীদেবীর দাসত্বে নিযুক্ত হয়েন। জ্ঞানার্জনে শক্তি নাই, সে স্বতন্ত্র কথা ; কিন্তু অর্থোপার্জন জ্ঞানচর্য্যার একমাত্র উদ্দেশ্য, এ বড় ভয়ঙ্কর ও লোমহর্ষণ বাক্য। এবং সত্য বল দেখি, ইংরাজী শিক্ষা কি আমাদের সমাজে অর্থোপার্জনেব ও জীবিকার্জনের সুগম উপায় মাত্র হইয়া দাড়াইয়াছে ? ইংরাজী শিক্ষার প্রথম আবির্ভাবকালে যে সকল মহায়ত্ব সহসা আবিভূত হইয়া সমাজকে উণ্টাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহাদের হৃদয়ের উৎসাহবহ্নি শেষ পর্য্যন্ত হাকিমী, উকীলী, ও কেরাণীগিরি প্রভৃতিতে কথঞ্চিং উপশমিত হয়। সেই অবধি আজ পর্য্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত শিক্ষার বলে হাকিম ও উকীল ও কেরাণীতে দেশটা প্লাবিত হইয়া গেল। ফলতঃ মুষিক অতিবৃষ্টি প্রভৃতির ন্যায় গ্রাজুয়েটের অতিস্থষ্টি রাষ্ট্রের পক্ষে একটা ঈতিস্বরূপ বলিয়া গণ্য হইতেছে। রাজা ব্যস্ত ; ইহাদিগকে লইয়া কি করিবেন ? সমাজ ব্যস্ত, কিরূপে ইহাদের খোরাক যোগাইবে ; বিশ্ববিদ্যালয়জননীও প্রস্থত অপোগণ্ডগুলির সংখ্যাধিক্যে লজ্জিতা ও কাতরা । আমাদের মত যাহারা বিশ্ববিদ্যালয়-মাতার অরুতি সস্তান, তাহারাও ভ্রাতৃসংখ্যাধিক্যে ভীত হইয়া সম্বোধন করিয়া ডাকিতেছে —‘সম্বর ! স্বভগে, দিনকতক ক্ষান্তি দাও ; এ যদুকুল আর বাড়াইয়া ফল কি! আমাদের খোরাকের কিছু আধার হউন ! শেষে ভূভার হরণের জন্য অবতারের প্রয়োজন যেন না হয়! জননী, উকীল-প্রসবিনি, উকীলের আর স্থান নাই মা । অন্য দেশে কি অবস্থা, জানি না ; কিন্তু সম্প্রতি ভারতবর্ষে লোকে জীবিকার্জনের পন্থা শিখিবার জন্য বিদ্যামন্দিরে প্রবেশ লাভ করে। এবং ইহাও একটা লোমহর্ষণ সত্য কথা, যে ব্যক্তি বিদ্যামন্দির হইতে বাহির হইয়া অর্থোপার্জনে সমর্থ না হইল, তাহর জীবন নিরর্থক বলিয়া বিবেচিত হয় । সমাজ তাহাকে অবজ্ঞা করে, তাহার আত্মীয় স্বজন তাহাকে টিটুকারী দেয় ; সে দুষ্কৃতকারীর মত মুখ ঢাকিয়া লোকসমাজে বেড়ায় ; তাহার জীবনে ভারবোধ হয়। সে অক্ষম ও ভাগ্যহীন, সংসারমধ্যে সে দয়ার পাত্র । বিষ্ঠার এইরূপ লাঞ্ছনা দেখিয়া গাত্রে লোমাঞ্চ জন্মে ; ভবিষ্যতের জন্য কোন আশা থাকে না, সমাজের অধঃপতন দেখিয়া হৃদয় বিদীর্ণ হয়। ইংরাজ অনেক আশায় ভারতবাসীর মূর্ধত্ব অপনোদনের জন্য বিদ্যা বিতরণ করিতেছেন ; কিন্তু তাহাজের প্রদত্ত অমূল্য রত্বের কি এই মূল্য ? বানরের গলায় মুক্তার হার শোভা পায় না ; ভারতবর্ষের বিদ্যা-মন্দিরগুলি ভাঙ্গিয়া ফেল । §