পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র טאצ9\ জগতের যেখানে যাহা কিছু সুন্দর, তৎসমুদ্বয়ের অংশ একত্র করিয়া দেখিলে কেমন দেখায়, তাহা দেখিবার লালসায় কালিদাসের উমাকে স্বষ্টি করিয়াছিলেন; কালিদাসও সেইরূপ জগতের অসীম সৌন্দৰ্য্যভাণ্ডারের মধ্যে যা কিছু সুন্দর, সমস্ত একত্র করিয়া তাহার সমাবেশে কিরূপ অপরূপ সৌন্দর্য্যের উৎপত্তি হয়, তাহারই নমুনা আমাদিগের চোখের উপর রাখিয়াছেন। কিন্তু এই পৰ্য্যন্ত বলিলে কালিদাসের ক্ষমতার পরিমাণ হইল না । আর একটা কথা এখানে বলিতে হইবে । পৃথিবীতে যে স্বভাবতঃই কতকগুলা সুন্দর জিনিস আছে, আর কতকগুলা কুংসিত জিনিস আছে, এইরূপ নির্দেশ সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত নহে। সৌন্দর্ঘ্যের অস্তিত্ব অনেক সময়ে সৌন্দৰ্য্যভোগীর অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। অনেক সময়ে কেন, বোধ হয় সৰ্ব্বত্র ও সৰ্ব্বদা সৌন্দর্য্যভোগী নিজের ব্যবহারের জন্য সৌন্দর্য্যের স্বষ্টি করিয়া লয়। মকুন্তবিশেষে এইরূপ একটা ধৰ্ম্ম বা ক্ষমতা বিদ্যমান আছে ; সেই ধৰ্ম্মের বা ক্ষমতার এক কথায় অনুরাগ আখ্যা দেওয়া যাইতে পারে। এই অনুরাগের পরিমাণ সকল ব্যক্তিতে সমান পরিমাণে বর্তমান নাই। যাহাতে যে পরিমাণে বর্তমান আছে, সে বাহা জগৎকে সেই পরিমাণে সুন্দর দেখে ; বাহা জগতে সেই পরিমাণে অনুরক্ত হয়। প্রাচীন দার্শনিকগণের ব্যবহৃত একটি উপমা প্রয়োগ করিলে বলা যাইতে পারে যে, কাচ যেমন স্বভাবতঃ স্বচ্ছ ও বর্ণহীন, কিন্তু জবাফুল তাহার সন্নিধানে আসিয়া তাহাকে আপন আভায় আভাযুক্ত করে ; সেইরূপ বাহ জগৎ সৰ্ব্বতোভাবে ও সম্পূর্ণরূপে স্বভাবতঃ বর্ণহীন ও রূপবজ্জিত ; অতুরাগীর চোখে তাহ বিবিধ বর্ণ ও বিচিত্র রূপ প্রকাশ করে । সংসারে সম্পূর্ণ বিরাগী কেহ আছে কিনা, জানি না ; তবে ধৰ্ম্মশাস্ত্রে ও দর্শনশাস্ত্রে সেরূপ বিরাগীর উল্লেখ দেখা যায়। যদি সেরূপ বিরাগী কেহ থাকেন, তবে তাহার চক্ষে সুন্দরও কিছু নাই ও কুৎসিতও কিছু নাই। আমাদের মত সাধারণ মনুষ্য সে পর্য্যায়ভুক্ত নহে , আমরা সদাসৰ্ব্বদা কোন-না-কোন রঙের চশমা পরিয়া চতুঃপার্শ্বস্থ বিস্তীর্ণ বিশাল জগতে নিরীক্ষণ করিয়া থাকি ; এবং যখন চশমাথানি যে রঙের থাকে, বাহা জগৎটাকেও যেন সেই রঙে রঞ্জিত হইতে দেখি। আমাদের অবস্থা স্বখের হইতে পারে, অথবা দুঃখের হইতে পারে, সে কথা স্বতন্ত্র ; যেটা প্রকৃত ঘটনা ও প্রকৃত অবস্থা, তাহারই নির্দেশ করিলাম মাত্র। সেই জন্য আমরা আমাদের অন্তনিহিত অনুরাগের প্রভাবে জগতের কতকটা সুন্দর দেখিয়া থাকি ও কতকটা কুৎসিত দেখিতে পাই। বাহ জগৎটা সম্পূর্ণ আমারই আত্মগত বটে কি না, সে বিষয়ে বিচার উপস্থিত করা এ প্রবন্ধে বাঞ্ছনীয় নহে ; তবে এ অনুরাগটা সম্পূর্ণভাবে আমারই নিজস্ব, সে বিষয়ে সন্দেহের কারণ নাই। এবং এই অমুরাগের বশে আমি যে সৌন্দৰ্য্য নিরীক্ষণ করি বা যে বিরূপতা দেখি, সেই সৌন্দৰ্য্য ও বিরূপতা ষে এই হিসাবে অামারই নিজের স্মৃষ্টি, তাহাও বলা ষাইতে পারে । সুতরাং এই ব্যক্তিগত অমুরাগের মাত্রা • অনুসারে জগতে সৌন্দর্য্যের তারতম্য হয়—উহার মাত্রা বাড়ে ও কমে। যাহাদের অভ্যস্তরে অম্বুরাগের মাত্রা কম,