পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সাহিত্যকথা ՎՀ ծ হয়ত কোন দিকৃ হইতে আমার অজ্ঞাতসারে বায়ুপ্রবাহ আসিয়া নিক্তির একটা পাল্লাকে উত্তোলিত করিয়া দিতেছে । এইরূপ বিচারপ্রণালী দ্বারা মকুন্যের পুরস্কার বিধান ও দণ্ড নির্দেশ দেখিয়া দুঃখও হয়, হাসিও পায়। ফলে অমুক ব্যক্তি মেরুদণ্ড নমিত করিয়া যাইতেছে দেখিয়া একেবারে সিদ্ধান্ত করিও না যে, উহার আভ্যন্তরিক আত্মগত পাপের বোঝা উহার ভারকেন্দ্রকে নামাইয়া দিয়াছে, এবং অমুক ব্যক্তি লঘুপদক্ষেপে উড়িয়া উড়িয়া চলতেছে দেখিয়া স্থির করিও না যে, পুণ্যাত্মতার হাইড্রোজেন বাষ্প উহার দেহরূপ বেলুনখানি স্ফীত করিয়া রাখিয়াছে। মনে রাখিও, ময়ূন্যের ভাগ্য নামক একটা অনির্দেশু অনিরূপ্য কিছু আছে, প্রাক্তন বা অনুষ্ট বলিয়া নির্দেশ করিলে যাহার সম্বন্ধে জ্ঞানের মাত্রা বিশেষ বৃদ্ধি পায় না, সেই পদার্থ টা হয়ত অধিকাংশ স্থলেই এইরূপ তুলা-বিভ্রাটের জন্য দায়ী । 蠍 এই প্রবন্ধের আরস্তে যে তত্ত্বকথাটার উল্লেখ করিয়াছিলাম, তাহা এক্ষণে একটু পরিস্ফুট হইয়া থাকিবে । সাহিত্যের মহাকবিগণ মধ্যে যাহারা নৈতিক জগতের এই অংশটা লইয়। নাড়াচাড়া করেন, তাহার এই তত্ত্বকথাটা পরিষ্কার করিয়া বলেন । নীতি-প্রচারক ও শাস্ত্রকার ও সমাজ-বিধাতার দলে যে কথাটা গোপন করিয়া মনুষ্য-সমাজের চোখে ধূলিমুষ্টি নিক্ষেপ করিতে চাহেন, মহাকবিগণ সেই কথাটাই খুলিয়া বলেন এবং সত্যবাদিতা যদি প্রশংসনীয় হয়, তবে সেই প্রশংসা এই শ্রেণীর মহাকবিগণের প্রাপ্য। কথাট। এই, যে ব্যক্তি আপনার ভাগ্যদোষে নিগৃহীত ও লজ্জিত ও মনুষ্যত্বের উচ্চ পদবী হইতে অবনমিত হইয়াছে তাহার উপর আবার সমালোচনার তীব্র বাণ নিক্ষেপ কতকটা হৃদয়হীনতার কাজ। তাহার নিজের দুৰ্ব্বলতা বা নিজের হীনতা তাহার এই অবনতির জন্য একেবারে দায়ী নহে, তাহ বলিতেছি না, তবে কি না উপরে ভাগ্য বলিয়া যাহার নির্দেশ করা গিয়াছে, সেই ভাগ্যের উপর তাহার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব নাই, ইহাও মনে রাখা কৰ্ত্তব্য। সে আপন ভাগ্যের বিধাত আপনি নহে, অথৰা কতক পরিমাণে হইলেও সম্পূর্ণ পরিমাণে নহে। জগতের কোন বিধানকৰ্ত্তা স্বাভাবিক ক্রুরতার বশে নিরীহ জীবকে লইয়া খেলা করিতেছেন ও আমোদ দেখিতেছেন, এরূপ মীমাংসারও এ স্থলে অবতারণা নিম্প্রয়োজন। তাহার সেই ভাগ্যের বিধাতা কোন ব্যক্তিবিশেষ নহে ; হয়ত তাহার পিতা মাতা, তাহার পূর্বপুরুষ, তাহার প্রতিবেশীবর্গ অথবা তাহার পরিবেষ্টনকারী সমগ্র জগৎ তাহার ভাগ্যকে গড়িয়া তুলিয়াছে ও নিয়ন্ত্রিত করিতেছে। তাহার প্রধান দোষ এই যে, তাহার শরীরে এমন বল নাই যে, সে এই বাহির হইতে আপতিত প্রচণ্ড শক্তির প্রতিকূলে দাড়াইতে সমর্থ হয়। অথবা পিচ্ছিল পথে চলিতে যেরূপ সাবধানতা আবশ্বক, সে হয়ত তত দূর সাবধান হয় নাই। সে হয়ত জানিত না যে, পিছন হইতে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে একটা অপরিচিত ধাক্কা আসিয়া তাহাকে ভূমিশায়ী করিবে। এরূপ স্থলে তাহার অধঃপতনের ফলভাগী অবশ্য সে নিজে ; প্রকৃতির নিয়মই এই এবং প্রকৃতির বিচারই এই। তাহাতে হা হুতাশ করিয়া কোন ফল নাই । তোমরা কিন্তু তাহার রা--২১