পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম రిషి సె নাই। কেন না, রাজশক্তি, সমাজশক্তি হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ইহা অস্বাভাবিক; কিন্তু উপায় নাই। ইহার ফলভোগে প্রস্তুত থাকিতে হইবে। যে পরিবর্তন ঘটিবে, তাহ সমাজের চেষ্টায় ধীরে ধীরেই ঘটবে। অনেকে শ্রুতির দোহাই দেওয়া, শাস্ত্রের দোহাই দেওয়া অনাবশ্যক মনে করেন ; আমরা উহা অনাবশু্যক বোধ করি না । সভ্যতম দেশেও—বিলাতে বা আমেরিকায় শ্রুতির দোহাই না দিলে কোন রাজব্যবস্থা টেকে না । সেখানে শ্রুতির নাম Constitution ; উহা অপৌরুষেয় ; কেন না, উহা অনাদি-উহার মূল কোথায়, খুজিয়া পাওয়া যায় না ও উহা ব্যক্তিবিশেষের প্রতিষ্ঠিত নহে। অপৌরুষেয়ের প্রতিষ্ঠা সৰ্ব্বত্র । বর্ণাশ্রমধর্মের অঙ্গ দুইটি—প্রথম বর্ণধৰ্ম্ম—ইহা লইয়া আমাদের সামgজক জীবনের প্রতিষ্ঠা । দ্বিতীয় আশ্ৰমধৰ্ম্ম—আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ইহার প্রতিষ্ঠা । সমাজজীবনে বর্ণভেদ – ব্যক্তির জীবনে আশ্রমভেদ। বৈদিক কালে উভয় ধর্মের যে মূৰ্ত্তি ছিল, এখন তাহা নাই। পরিবর্তন ক্রমশঃ ঘটিয়াছে—শ্রুতির ভিত্তি বজায় রাখিয়া পরিবর্তন ধীরে ধীরে, কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে ঘটিয়াছে। যেখানে শ্রীতির ভিত্তি ঠেলিয়া আকস্মিক পরিবর্তনের চেষ্টা হইয়াছে, সেখানেই ফল শোচনীয় হইয়াছে—ইতিহাস সাক্ষী । বৰ্ত্তমান কালেও সেইরূপ কালোচিত পরিবর্তন ঘটিতেছে ও ঘটবে ; কিন্তু শ্রুতির ভিত্তি ঠেলিয়া ফেলা বাঞ্ছনীয় নহে । দেখিতে গেলে প্রাচীন কালের চারি আশ্রম, এখন কেবল গৃহস্থাশ্রমেই পরিণতি পাইয়াছে। ব্রহ্মচৰ্য্য ও বানপ্রস্থ একালে নাই। ভিক্ষু আছে ; কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই একালের ভিক্ষু সেকালের ভিক্ষুর বিড়ম্বন মাত্র। বর্ণধৰ্ম্ম কিন্তু সমাজের অস্থি-মজ্জায় বর্তমান । একালের বর্ণগত প্রভেদ প্রধানতঃ তিনটি। প্রথম শোণিতগত—অনাৰ্য্য-সন্তানেরা হিন্দু সমাজে গৃহীত হইয়া নিম্ন শ্রেণীতে স্থান পাইয়াছে। দ্বিতীয় ব্যবসায়গত—কামার, কুমার, ধোপা, নাপিত প্রভৃতির বিভেদ ব্যবসায় লইয়া—এই জাতিভেদ দেশের মধ্যে টেকৃনিক্যাল শিক্ষা বিস্তারের ও ব্যবসায়গত স্বার্থরক্ষার বর্তমান কালের একমাত্র উপায়স্বরূপ রহিয়াছে। যতদিন গ্রামে গ্রামে নূতন ধরণের টেকৃনিক্যাল স্কুল না বসিতেছে ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য বিভিন্ন সমিতি গঠিত না হইতেছে, তত দিন এই জাতিভেদ এদেশ হইতে উঠিবে না। তৃতীয় দেশগত ভেদ—ব্রাহ্মণের মধ্যে আবার বিবিধ শ্রেণী এই প্রাদেশিক ভেদ লইয়া । সেইরূপ অন্যান্য জাতির মধ্যেও এই প্রাদেশিক ভেদ বৰ্ত্তমান । ইংরাজের রাজ্যে রেলওয়ে টেলিগ্রাফের দিনে এই ভেদটা কমিয়া যায়, এইরূপ একটা স্পৃহা সৰ্ব্বত্র দেখা যাইতেছে। ইংরাজীতে যাহাকে Discipline বলে, আমাদের সমাজে বর্ণধৰ্ম্ম কতকটা সেই ডিসিপ্লিনের কাজ করে । সে দিন উপাধ্যায় মহাশয়ের প্রবন্ধের আলোচনাকালে শ্ৰীযুক্ত বিনয়েন্দ্রনাথ সেন মহাশয় বলিয়াছিলেন,—‘প্রবৃত্তির দমন ও প্রতিভার বিকাশ’ এই দুই বিষয়ে কতটা সফল হয়, তাহা দেখিয়া এইরূপ সামাজিক ব্যবস্থার সার্থকতা বিচার করিতে হইবে। বস্তুতই তাহাই। মোটামুটি বলা বাইতে পারে, ইউরোপের সমাজের বন্দোবস্ত প্রতিভার বিকাশের অন্থকূল ;