পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOWC) о রামেন্দ্রস্বন্দর রচনাসমগ্র আমাদের দেশের সমাজের বন্দোবস্ত প্রবৃত্তি দমনের অনুকূল। ইউরোপে যেকোন ব্যক্তি যে কোন পদবীতে স্থান পাইতে পারে—ইহাই সে দেশের সমাজতন্ত্রের থিওরি। বিলাতের যে-কোন শ্রমজীবি গ্লাড ষ্টোনের আসনে বসিবার আশা করে ; ফ্রান্সে বা আমেরিকায় যে-কোন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হইতে পারে, প্রত্যেকেই যখন এইরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণের অধিকারী, তখন সে দেশেরসামাজিক নিয়ম যে প্রতিভার বিকাশের অনুকূল হইবে, তাহা আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা থাকিলেই আকাঙ্ক্ষা মিটে না । ক্ষমতার অভাবে বা সুবিধার অভাবে বা ঘটনার চক্রে নিম্নশ্রেণীর অধিকাংশ লোকই চিরজীবন নিম্ন শ্রেণীতেই জ্ঞাবদ্ধ থাকে ; যাহার অন্ধকাজক্ষা মেটে, সে হয় খুব প্রতিভাবান বা খুব সৌভাগ্যশালী। সাধারণত প্রতিভা ও সৌভাগ্য, উভয়ই একত্র না হইলে আকাঙ্ক্ষা মেটে না। ফলে দাড়ায় এই দুই চারি জন ক্ষমতাবলে বা সৌভাগ্যবলে গ্লাড ষ্টোনের পদে ওঠে বটে ; কিন্তু অধিকাংশ লোকেরই উচ্চাকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকায় একটা দারুণ অসন্তোষের স্বষ্টি হয় ; ফ্যাক্টরীর ভিতর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর বিলাতের দুর্ভাগা শ্রমজীবী যখন দেখিতে পায়, তাহার দিনান্তে অন্নের সংস্থান হইল না—সে জানে, সে গ্লাড ষ্টোনের আসনে বসিবার অধিকারী, অথচ অদ্য রাত্রিটা তাহাকে রাজপথে ভূমি-শয্যাতেই কাটাইতে হইবে, তখন সে মনের ক্ষোভে বড়লোকের ঘরে ঢেল ছুড়িয়া অসন্তোষের পরিচয় দেয় ও কেহ কেহ বা স্ববিধ পাইলেই রাজারাজড়ার বুকে গুলি চালায়। আমাদের দেশের ব্যবস্থা কতকটা অন্যরূপ। চাষার ছেলে ও তাতীর ছেলে কখনও মনেও ভাবে না যে, তাহার রাজতক্তে বা রাজদরবারে বসিবার কোনও সম্ভাবনা আছে । সে জানে, সে পৈতৃক জাতিধৰ্ম্ম ও জাতিব্যবসায় অবলম্বনেই চিরজীবন কায়ক্লেশে কাটাইতৃে বিধাত কত্ত্বক নিয়োজিত হইয়াছে। তাহার উচ্চাকাঙ্ক্ষার লেশ নাই। তাহার স্বাভাবিক প্রতিভা উচ্চমুখে তাকায় না ; তথাপি প্রতিভা এমনই জিনিস যে, কচিং কোনও স্থলে দুরন্ত প্রতিভা সমাজের বন্দোবস্ত ঠেলিয়া দিয়া কৃষকপুত্রকে বা তাতীর পুত্রকে রাজতক্তে বসাইয়াছে ; এইরূপ উদাহরণ এদেশের ইতিহাসেও না মেলে, এমন নহে। কিন্তু এইরূপ উদাহরণ সাধারণ নিয়মের ব্যভিচার মাত্র। সাধারণ নিয়মমতে প্রত্যেকেই পৈতামহিক পদবীতেই চিরজীবন শাস্তির সহিত ও সন্তোষের সহিত কাটাইয়। দেয়। এবং বিধাতা যদি নিতান্ত বিরূপ হইয়া দেশে দুভিক্ষ উপস্থিত করেন, তখন নিতান্ত সন্তোষের সহিত মৃত্যুর ক্রোড়ে শান্তিলাভ করে,—রাজার বুকে ছুরি বসায় না। কোন ব্যবস্থাটা ভাল, সে কথা নাই বা তুলিলাম। সকল জিনিসেরই ভাল মন্দ দুই দিকৃ আছে। পাশ্চাত্ত্য সমাজের ব্যবস্থার এক দিকৃ ভাল, অন্য দিকৃ মন্দ । আমাদের ব্যবস্থারও এক দিকৃ ভাল, অন্য দিকৃ মন্দ। তবে না হয় এই পৰ্য্যন্ত বলা যাইতে পারে, ওদের ব্যবস্থা উন্নতির অনুকূল, কিন্তু স্থিতির অনুকূল নহে। পাশ্চাত্য সমাজ জমকাল, কিন্তু হয়ত ভঙ্গপ্রবণ। আমাদের ব্যবস্থা স্থিতির অনুকুল, কিন্তু উন্নতির তেমন अश्कूल नरश्।