পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

^\98 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র এতগুলি বুদ্ধিমান লোক একবাক্যে যাহা বলেন, তাহ মানিতে আমরা বাধ্য ; তবে ভারতবর্ষের ইতিহাস হইতে ব্রাহ্মণকে পুছিয়া ফেলিলে কি অবশিষ্ট থাকে, তাহার কোন ঠাহর পাই না ; এবং বাকী যাহা থাকে, তাহার উন্নতিই বা কি, আর অবনতিই বা কি, তাহাও বুঝিতে পারি না। বুঝি আর না বুঝি, ব্রাহ্মণের দুরন্ত শাসননীতিতে ভারতের জাতীয় জীবন ষে একেবারে কণ্ঠে আসিয়া পড়িয়া কেবল উড্ডয়নের অপেক্ষা মাত্র করিতেছিল, তাহা যুক্তি প্রয়োগে তন্ন তন্ন বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইতে পারা যায়। এবং যে পণ্ডিতই দুর্ভাগ্য তারতের অধঃপতনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করিতে বসেন, তিনিই এই ঐতিহাসিক ঘটনার মুখ্য কারণগুলি একে একে গণিয়া দিতে সঙ্কোচ করেন না ! কিন্তু এইখানে একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলিতে হইতেছে, বর্তমান প্রবন্ধে পুনঃ পুন: অধঃপতন ও অবনতির কথা উল্লেখ করাট ঠিক হইতেছে কি না, তাহা লইয়াই তর্ক উঠতে পারে। কেন না, বিলাতের টাইম্স পত্র সম্প্রতি বলিয়াছেন, আমরা এককালে উন্নত ছিলাম, এখন অবনত হইয়াছি, ইহা মনে করাও আমাদের পক্ষে ঐতিহাসিক ভ্রম ও মহাপাপ । কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে এ কালের কোনও কথা আলোচিত হইতেছে না। এ কালে আমরা হিমালয়ের শিখরদেশে কেন, রাজা হরিশ্চন্দ্রের মত একবারে বিমানমার্গে উন্নীত হইয়াছি, সে বিষয়ে যেমন কোনও সংশয় নাই, মুসলমানের সময়েও সেইরূপ আমাদের দুর্দশার পরাকাষ্ঠী হইয়াছিল, ইহাও তেমনই স্বতঃসিদ্ধ বাক্য । প্রাচীন ভারতবর্ষে ব্রাহ্মণের শাসননীতির বিশ্লেষণ করিয়া আমাদের অবনতির কতকগুলি নিদিষ্ট কারণ পাওয়া যায়। এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর আরস্তে সেই কারণগুলি পুঞ্জীভূত হইয়া হিন্দুস্থানের অবস্থা ঠিক এইরূপ করিয়া তুলিয়াছিল যে, তখন মুসলমানের আগমন ও তৎকর্তৃক আমাদের পরাজয় অনিবাৰ্য্য হইয়া উঠিয়াছিল। প্রথম—ব্রাহ্মণের সমুদয় বিদ্যা একটা সিন্ধুকের মধ্যে পুরিয়া তাহার চাবি আপন হস্তে রাখিয়াছিলেন। জনসাধারণ বিদ্যার অালোকে বঞ্চিত হইয়া মূর্খতার আঁধারে হাবুডুবু খাইতেছিল। দ্বিতীয়-মূৰ্খতা হইতে কুসংস্কারের উৎপত্তি হয়। ব্রাহ্মণের আপনাদের চালকলার স্ববন্দোবস্ত করিবার জন্য সেই কুসংস্কারগুলির প্রশ্রয় দিতেছিলেন এবং মানাবিধ কুপ্রথার ও উপধর্শ্বের স্বষ্টি করিয়া জনসাধারণের সমবেত আত্মাকে জড়ীভূত ও নিশ্চেষ্ট করিয়া রাখিয়াছিলেন । তৃতীয়—ব্রাহ্মণের জনসাধারণের পায়ে যে অধীনতার শিকল পরাইয়া দিয়াছিলেন, এবং তাহানের প্রতি যে অত্যাচার ও নিৰ্য্যাতনের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, বিধৰ্ম্মীর অধীনতা ও অত্যাচারও তাহার নিকট মুখের বুলিয়। বিবেচিত হইয়াছিল। চতুর্থ-ব্রাহ্মণের জাতিভেদের স্বষ্টি করিয়া বিবিধ জাতির মধ্যে পরস্পর বিবাদ লাখাইয়া দিয়াছিলেন ও তাহাদের পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা ও বিদ্বেষের বহ্নিতে কেবলই ইন্ধন প্রয়োগ করিয়া আমোদ দেখিতেছিলেন। গৃহবিবাদে হীনবল