পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : পরাধীনতা *)8○ অন্তবিধ ফলের উৎপত্তি হয় নাই ? মনে কর ইউরোপ। ইউরোপ একটা মহাদেশ । কিন্তু রুসিয়াখণ্ড ছাড়িয়া দিলে এই মহাদেশের যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহা আয়তনে ভারতবর্ষ অপেক্ষা অধিক বড় হইবে না। - সেখানেও ঠিক জাতিভেদ, বর্ণভেদ, আচারভেদ আমাদের মতই বিভিন্ন। ইউরোপীয়েরা সকলেই আর্য্যবংশীয় বলিয়া ষতই আস্ফালন করুন না, তাহাদের মধ্যে অনেকেরই রক্তে বার আন অনার্য্যরক্ত রহিয়াছে, ইহা প্রকৃত কথা। তবে ইউরোপে আর্য্যে ও অনার্য্যে যতটা মিশিয়া গিয়াছে, আমাদের দেশে ততটা মিশিতে পায় নাই, ইহা সত্য বটে। আর্য্য অনার্য্য বিভেদ ততটা পরিস্ফুট না থাকিলেও এক আর্য্য জাতিরই বিবিধ শাখা ইউরোপের মধ্যে স্থান পাইয়াছে। এবং তাহাদের মধ্যে পরস্পর অসাদৃশ্ব, এমন কি, বিদ্বেষের ভাবও নিতান্ত কম নহে । তার পর ভাষাভেদ, সে ও নিতান্ত ফেলিবার নহে। ইউরোপে যতগুলা দেশ, ততগুলা ভাষা ; এমন কি, একটা দেশের মধ্যে ও পাচটা ভাষার অস্তিত্ব নিতান্ত বিরল নহে। একটা ধৰ্ম্মের বন্ধন উপর উপর দেখা যায় বটে ; তুকি ছাডিয়া দিলে ইউরোপের সকলেষ্ট খ্ৰীষ্টান । কিন্তু সে বন্ধনটা কেবল নাম মাত্র, কাজে নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর । কেন না, খ্ৰীষ্টানের সঙ্গে খ্ৰীষ্টানের যেমন বিবাদ, অন্য কোন ধৰ্ম্মাবলম্বীর সঙ্গে তত নহে। খ্ৰীষ্টান খ্ৰীষ্টানকে পোডাইতে যেমন আনন্দলাভ করিয়া থাকে, অন্য কোন কার্য্যে তাহার তেমন আনন্দ নাই বা আগ্রহ নাই। সাম্প্রদায়িক ধৰ্ম্মগত বিদ্বেষ কত দূর ভীষণ আকার ধারণ করিতে পারে, ইউরোপের ইতিহাস আগুনের অক্ষরে তাহার বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছে। ফলে ভারতবর্ষও যেমন কখনও একছত্র হয় নাই, ইউরোপও তেমনই কখনও একছত্রাধীনতায় আসে নাই । ভারতবাসী একত্র হইয়া যেমন মহাজাতিতে পরিণত হয় নাই, ইউরোপবাসী ও সেইরূপ মহাজাতিতে পরিণতি লাভ করে নাই, উভয়ত্র একই কারণ । ভারতবর্ষ একটা দেশ নহে, একটা মহাদেশ। ইউরোপও তেমনই একটা দেশ নহে, একটা মহাদেশ । ভারতবর্ষে যেমন একটা জাতি নাই, অনেক জাতি, ইউরোপেও তেমনই একটা জাতি নাই, অনেক জাতি। ভারতবাসীর যেমন ভারতের জন্য প্রাণ র্কাদে না, ইউরোপবাসীরও সেইরূপ ইউরোপের জন্য প্রাণ কাদে না । একই কারণে একই ফল উৎপন্ন হয়। ভারতবর্ষ ও ইউরোপ দুই মহাদেশে একই কারণে একই ফল উৎপন্ন হইয়াছে। কিন্তু উভয়ের সাদৃশু এই পৰ্য্যন্ত । ইহার পর আর সাদৃশু নাই। ইউরোপবাসীর ইউরোপের জন্য প্রাণ কাদে না বটে, কিন্তু ফরাসীর প্রাণ ফ্রান্সের জন্য র্কাদে ; জাৰ্ম্মানের প্রাণ জাৰ্ম্মানির জন্য আবেগের সহিত কঁাদিতেছে ; ইতালীয়ের প্রাণ ইতালীর জন্য র্কাদিয়া উঠিয়া ইতালীকে এক মহারাজ্যে পরিণত করিয়াছে ; ইংরাজের প্রাণ রোমের জন্য র্কাদিয়া থাকে, গ্রীসের প্রাণের অবরুদ্ধ প্রবাহ বাহির হইতে না পারিয়া অন্তঃসলিল বহিতে থাকে । আধুনিক ইতিহাস তাহার প্রমাণ। কিন্তু বাঙ্গালীর প্রাণ বাঙ্গালার জন্য কখনও কাদে নাই। পঞ্জাবীর প্রাণ পঞ্জাবের জন্য র্কাদে নাই—সে একবার কাদিয়াছিল অত্যাচারী ধৰ্ম্মদ্বেষী মুসলমানের রক্ত পানের অবসর না পাইয়া। মারাঠা মহারাষ্ট্রের