পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8影 রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র জন্য কাদিয়াছিল বলিলে বোধ করি ভুল হয়, সে যে একবার অশ্রু ফেলিয়াছিল, সে বোধ হয় আনন্দের অশ্রু ও উল্লাসের অশ্র । আনন্দ—মোগল সেনাপতির গলার মুক্ত ছড়াটার জন্য, উল্লাস—যবন রাজার টুপি কাড়িয়া ও দাড়ি মুড়াইয়া আপন উৎকট পরিহাসরসিক বৃত্তির চরিতার্থতায় । ভারতবাসী কেহ কখনও স্বদেশের জন্য বা স্বজাতির জন্য কঁদে নাই, ইহাই সাধারণ নিয়ম ; সাধারণ নিয়মের ব্যভিচারের কেবল একটা মাত্র উদাহবণ ইতিহাস লেখে,—তেমন উদাহরণ জগতের ইতিহাসেও বোধ করি দুর্লভ, সে উদাহরণ মেওয়াবের রাজপুত । এইখানে ইউরোপীয় ও ভারতবাসীতে তফাং । ইউরোপবাসী মহাদেশের ভাবন। ভাবে না ও মহাজাত প্রতিষ্ঠায় তাহার আগ্রহ নাই , কিন্তু সে তাহার খণ্ড দেশ মধ্যে খণ্ড জাতির প্রতিষ্ঠা করিয়া আপনাকে সেই জাতিশরীরের অঙ্গীভূত করিয়া স্পন্দিত হয়। সমগ্ৰ ইউরোপ মহাদেশ কতকগুলি খণ্ড খণ্ড ক্ষুদ রাজ্যে বিভক্ত হইয়াছে, এবং এক একট। রাজ্যে এক একটা দুৰ্দ্দম দৃঢবদ্ধ সবল জাতির প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। ফরাসী জাৰ্ম্মানির শোণিত পানের তৃষ্ণায় বু্যাকুল ; কিন্তু ফরাসী আবার ফ্রান্সের জন্য আপন শরীরের শেষ শোণিতবিন্দু প্রদান করিতে প্রস্তুত । তেমনই জাৰ্ম্মান, তেমনই ইংরাজ । ইউরোপে এই অর্থে জাতীয় ভাবের স্ফুরণ ও বিকাশ হইয়াছে, ইউরোপে এই অর্থে প্যারিয়টিজম উগ্র মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছে। তারপর রাজায় প্রজায় সম্বন্ধ। আমাদের দেশে এই সম্বন্ধও ইউরোপ হইতে সম্পূণ বিসদৃশ। অনেক ঐতিহাসিক ভারতের প্রাচীন শাসন-প্রণালীকে রাজতন্ত্র বা যথেচ্ছাচার প্রণালী বলিয়া বণনা করেন। কিন্তু আমার বিবেচনায় সেকালের শাসনপ্রণালী সম্পূর্ণ প্রজাতান্ত্রিক ছিল ; প্রজা যে পরিমাণে স্বাধীনতা ভোগের আপন হইতে অধিকার পাইয়াছিল, সহস্ৰ বৎসরের বিবাদের ফলে আধুনিক ইউরোপীয় প্রজ। তাহ পাইয়াছেন কি না সন্দেহ। প্রাচীন হিন্দু রাজা পুরাণপ্রথিত রামচন্দ্র বা যুধিষ্ঠিরের সদৃশ ছিলেন, এরূপ আমার বিশ্বাস নাই। র্তাহারা দোষের গুণের মাঙ্গয ছিলেন ; এবং রাজ-জাতীয় মনুষের স্বাভাবিক নিয়মমত বোধ হয়, গুণের ভাগ অপেক্ষা দোষের ভাগই অধিক ছিল। স্বার্থের জন্য বা রাজ্যের জন্য বন্ধু বন্ধুকে, ভ্রাতা ভ্রাতাকে, পুত্র পিতাকে, ভূত্য প্রভুকে হত্যা পর্য্যস্ত করিতে কুষ্ঠিত হইতেন না ; এরূপ উদাহরণ ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসেও বিরল নহে। কিন্তু অন্যত্র প্রজার সহিত রাজার যে একটা বিরোধ দেখা যায়, এখানে সেটা তেমন প্রবল মাত্রায় ছিল না। রাজার ও প্রজার মধ্যে তেমন দৃঢ় বন্ধনই বোধ হয় ছিল না। প্রজা খুব সামান্ত ভাবেই রাজার প্রভুশক্তির অধীন ছিল। প্রজার রাজার নিকট নিপীড়িত হইবারও বিশেষ অবসর ঘটে নাই, রাজার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরিবারও তেমন দরকার হয় নাই । অত্যাচারী প্রজাপীড়ক রাজা কেহ ছিল না, এমন কথা নহে। কথাটা হইতেছে সাধারণ নিয়ম লইয়। । কয়েকটা বিষয় আলোচনা করিলে এ বিষয়টা বুঝিবার পক্ষে সুবিধা হইতে পারে। সেকালের রাজার কেবল একটা কাজ। তিনি দগুধর । তিনি সৈন্যপরিবৃত হইয়৷ শক্ৰ হইতে রাজ্য রক্ষা করেন ও রাজসিংহাসন রক্ষা করেন। এবং তিনি রাজ্যের মধ্যে দুষ্টের শাসন দ্বারা শান্তি রক্ষা করিতেন। সর্বত্র না হউক, অনেক স্থানে