পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র "למסאי কেহ যদি জ্ঞান বিজ্ঞানের একটা নূতন কথা প্রচার করিলেন, তৎক্ষণাৎ রাজাদেশে প্ৰজলিত চিতানলে তাহার শরীরকে ভস্মীভূত করিয়া আত্মার সদগতির ব্যবস্থা হইল । ফলে অজ্ঞানের তমোময় অন্ধকার সমগ্র মহাদেশকে সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া আচ্ছন্ন করিয়া রাখিল। ভূমধ্যসাগরের পূর্বপ্রান্তে যে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রদীপ্ত শিখা জলিয়া উঠিয়া সমগ্র জগৎকে আলোকিত করিবার উদ্যোগ করিতেছিল, বর্বর খ্ৰীষ্টানের বর্বর রাজশক্তি ও বর্বর যাজকশক্তি একত্র সম্মিলিত হইয় তাহাতে শীতল বারিধারা নিক্ষেপ করিয়া অচিরে নির্বাণ করিয়া ফেলিল। জ্যোতিষ, বিজ্ঞান, গণিত, পদার্থবিদ্যা অঙ্কুরিত হইয়া সতেজে শাখা-প্রশাখা স্বষ্টি করিতেছিল ; তাহার একবারে উন্মুলিত ও উৎপাটিত হইল। স্বকুমার কলাবিদ্য মানবের দুঃখময় জীবনে স্বখের ও শাস্তির প্রতিষ্ঠার জন্য নানা উপায়ে নিযুক্ত হইতেছিল ; বর্বরগণের প্রবল কুঠারাঘাতে তাহার চিহ্ন পৰ্য্যন্ত বিলুপ্ত হইল। জ্ঞানের পন্থা কণ্টকিত হইল ; স্বাধীন চিন্তার দ্বার আবদ্ধ হইল ; ইউরোপের নগবে নগরে, গ্রামে গ্রামে চিতার অনলে দার্শনিকের ও তত্ত্বাত্নসন্ধানীর নশ্বর দেহ ভস্মীভূত হইতে লাগিল। রাজসম্প্রদায়ের ও যাজকসম্প্রদাযের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় নাই। মানবাত্মার সম্প্রসারণের পথ রোধে সমবেত যাজকশক্তি ও রাজশক্তি কুতকার্য্য হয় নাই। মকুন্য আপন স্বাভাবিক স্বাতন্ত্র্য বলপূর্বক অধিকার করিয়াছে। খডগহস্তে আপনার ন্যায্য সম্পত্তি ফিরাইয়া আনিয়াছে । কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর এই অন্তিম কালে, বিজ্ঞান যখন দৰ্পের সহিত অগ্রসব হইতেছে, দর্শন যখন অজ্ঞানের তিমিররাশি ভেদ করিয়া সত্যের রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য চলিয়াছে, এখনও কি সেই পুরাতন জরাজীর্ণ রাজশক্তি ও যাজকশক্তি পৈশাচিক কুটিল কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া তাহার দিকে চাহিয়া নাই ? ভারতবর্ষে বিধান অন্যরূপ। এখানে যে মানবসম্প্রদায়ের হস্তে জ্ঞানালোচনার ভার অপিত ছিল, রাজশক্তি সভয়ে তাহার নিকট প্রণত থাকিত। মনুষ্যের ধীশক্তি অপ্রতিহতপ্রভাবে সহস্র দ্বার উন্মুক্ত করিয়া সহস্র দিকে প্রধাবিত হইয়াছিল , কেহ বলিতে সাহস করে নাই, ঐ পন্থায় তুমি চলিও না । যিনি বলিতে চাহেন, ভারতের ব্রাহ্মণ মল্লষের চিন্তাশক্তিকে শৃঙ্খলিত ও নিগডবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন, তিনি হয় অন্ধ, নতুবা মিথ্যাবাদী। তাহার সহিত বিচারের অবতারণা বিড়ম্বন । সামাজিক, নৈতিক, ভৌতিক ও মানসিক, সকল ব্যাপারেই ভারতীয় প্রজ সৰ্ব্বতোভাবে স্বাধীন ছিল ; ঠিক এই কাবণে রাজার সহিত কখনই তাঁহার বিরোধের আশঙ্কা ঘটে নাই। এই জন্য সে কখন অস্থধারী সৈনিকের ব্যবসায় অবলম্বনে বাধ্য হয় নাই। রাজার সহিত রাজার যুদ্ধ হইত ; এক রাজার হস্ত হইতে রাজদও অন্যে কাড়িয়া লইতেন ; কিন্তু প্রজার স্বাতস্থ্যের বিরুদ্ধে কেহই দণ্ডায়মান হইতেন না। প্রজাও সেই জন্য রাজপরিবারের ও রাজবংশের ভাগ্যপরিবর্তনে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল। রাজার সহিত বিরোধ করিতে হয়, রাজার নিকট আপনার পাওনা গণ্ডী বুঝিয়া লইতে হয়, কথায় কথায় রাজার কৈফিয়ৎ চাহিতে হয়, ভারতের প্রজার এই শিক্ষালাভের অবসরই ঘটিয়া উঠে নাই। যে শিক্ষা ও ষে পরীক্ষা, যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব হইতে জাতীয় ভাব ও রাজনৈতিক ভাব বিকশিত হয়, এদেশে তাহার সম্পূর্ণ অভাব ছিল। কারণের ক্ষমভাব, ফলেও সেইরূপ । @