পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, নানাকথা ; পরাধীনতা 98సె ভারতের প্রজা জানিত না, রাজার সহিত বিরোধ করিতে হয় ; সে জনিত না, রাজার ছত্ৰ দণ্ড লইয়া অপরে টানাটানি করিলে রাজার পাশ্বে গিয়া দাড়াইতে হয় ; সে জানিত না, রাজবিপ্লবের ফলের সহিত প্রজার সামাজিক জীবনের শুভাশুভ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হইতে পারে। অতি প্রাচীন কালে যুদ্ধ ব্যবসায় চালাইবার জন্য একটা সম্প্রদায়ের স্বষ্টি হইয়াছিল। তাহাধের নাম ছিল ক্ষত্রিয়। রাজার সিংহাসন রক্ষার জন্য, শক্ৰহস্ত হইতে দেশ রক্ষার জন্য এই ক্ষঞ্জিয় জাতিই প্রয়োজনমত অস্ত্র ধারণ করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইত। বৌদ্ধ বিপ্লবের সময় প্রাচীন ক্ষত্রিয় জাতির উচ্ছেদ হইয়াছিল। ভারতবর্ষে যুদ্ধব্যবসায়ী মহন্তসম্প্রদায় বর্তমান ছিল না ; যাহারা বেতন গ্রহণ করিয়া যুদ্ধের ব্যবসায় চালাইত, তাহাদের কোন নৈতিক দায়িত্ববোধ ছিল না। প্রাচীন ক্ষত্রিয় জাতির লোপ হইয়াছিল। প্রাচীন সমাজ ভাঙ্গিয়৷ গিয়া,ছল, নূতন সমাজ গঠনের কার্য্য আরম্ভ হইতেছিল মাত্র। এই সময়ে পশ্চিম দেশ হইতে যবন, শক, হ্ৰণাদি বিবিধ সমরপ্রিয় বর্বর জাতি হিন্দুস্থানে দলে দলে প্রবেশ লাভ করিতে থাকে ; অনেক বড় বড় রাজ্য স্থাপনেও কৃতকাৰ্য্য হয়। কিন্তু অল্প দিনেই তাহারা হিন্দুস্থানের সামাজিক আচার ব্যবহার গ্রহণ করিয়া হিন্দু সমাজের অন্তর্গত ও অঙ্গীভূত হইয়া পড়িল । এই সকল নবাগত সমরপ্রিয় জাতিগণকে লইয়া ভারতবর্ষের নূতন ক্ষত্রিয় রাজপুতের অভু্যখান হইল। যখন মুসলমান আসিয়া ভারতবর্ষ আক্রমণ করিল, ভারতবর্ষের প্রজাসাধারণ তাহাতে শঙ্কিত ও ত্রস্ত হইয়াছিল, কিন্তু তাহারা আত্মরক্ষণে সমর্থ হয় নাই। আত্মরক্ষার জন্য যে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন, সে শিক্ষা কখনও তাহারা পায় নাই । তাহারা দল বাধিয়। সাধারণ শত্রুর বিপক্ষে দাড়াইতে সমর্থ হয় নাই, অথবা ঐ কার্য্যের আবশ্বকতার উপলব্ধি করে নাই । নূতন ক্ষত্রিয় রাজপুত একা সেই দুরন্ত শক্রর প্রতিকূলে দাড়াইয়াছিল। বেগবতী প্রবাহীর গতিরোধ তাহাদের অসাধ্য হইয়াছিল বটে, কিন্তু মুসলমানের মত প্রচণ্ড শত্রুর সঙ্গে তাহারাও যেরূপ লড়িয়াiছল, তাহার বিবরণ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরকাল লিপিবব্ধ থাকিবে । মুসলমান আমাদের দেশের রাজা হইয়। রাজসিংহাসনে বসিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ প্রজার উপর উৎপীড়ন অত্যাচারও যথেষ্ট করিতেন ; কিন্তু মোটের উপর পারিবারিক ও সামাজিক, দৈহিক ও মানসিক স্বাতস্থ্যের দিকে তাহাদেরও লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হয় নাই। কিছু দিনের মধ্যেই হিন্দু ও মুসলমান ভারতবর্ষের অধিবাসী হইয়া ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছিলেন ; একই ভারতমাতা উভয়েরই জননীস্বরূপ হইয়া উঠিয়াছিলেন। সম্প্রতি বৈদেশিকের অধিকারে যেন উভয়ের সেই ভ্রাতৃভাবের ও সখ্যভাবের বন্ধন ছিন্ন হইবার উপক্রম হইয়াছে। উভয়ের মধ্যে সামাজিক আচারগত বন্ধন অসম্ভব ; কিন্তু ভরসা যে, বিশালচ্ছায় ব্রিটিশ রাজছত্রের তলে দণ্ডায়মান উভয় জাতি এক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সখ্যস্থত্রে আবদ্ধ থাকিয়া পরস্পরকে বঞ্চিত ও পোবিত করিতে থাকিবে । ( সাহিত্য, অগ্রহায়ণ, ১৩° ৪ ) ।