পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

•నిష్క్రి রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র চাহিয়া আছেন ; কিন্তু তাহার সাহস হয় না, এই মহারাষ্ট্রকে আক্রমণ করেন। কাজেই ভারতবর্ষব্যাপী রাষ্ট্রের এখন অস্তিত্ব আছে ; কিন্তু ভারতবর্ষে অদ্যাপি নেশন, স্বষ্টি হয় নাই। কেন না, ভারতে রাজশক্তির সহিত প্রজাশক্তির কোন দৃঢ় বন্ধন নাই। প্রজাশক্তির উপর রাজশক্তি প্রতিষ্ঠিত নহে ; প্রজাশক্তি রাজশক্তির সহায় নহে ; রাজশক্তিকে প্রজাশক্তি বিনীতভাবে ভয় করে ও ভক্তি করে, কিন্তু ভালবাসে না ও আপনার আত্মীয়রূপে জানে না। যতদিন এই উভয় শক্তির মধ্যে একাত্মতা না জন্মিবে, তত দিন ভারতবর্ষে নেশনের স্বষ্টি হইবে না। যদি কালক্রমে একাত্মতার উৎপত্তি অসম্ভব হয়, তাহা হইলে ভারতবর্ষে নেশনের উৎপত্তিও অসম্ভব। বর্তমান কালে আমাদের রাজশক্তি বৈদেশিকের হস্তে ; কাজেই রাজায় প্রজায় মমত্ব-বন্ধনের অভাব বেশ বুঝা যায় । কিন্তু যখন রাজশক্তি দেশীয় রাজার হাতে ছিল, তখনও এই রাজায় প্রজায় মমত্বের বন্ধন *কেন ছিল না, বিচাৰ্য্য বিষয় হইয়া পড়ে । মুসলমান আক্রমণকালে ভারতবর্ষে একতার অভাব বেশ বুঝা যায়। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে একতার অভাব, ভারতবর্ষের পতনের কারণ বলিয়া নির্দেশিত হইয় থাকে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের একতার অভাব, পতনের প্রধান কারণ বটে, সন্দেহ নাই , কিন্তু রাজার সহিত প্রজার ঐক্য-বন্ধনও অন্যতর প্রধান কারণ, তাহ ঐতিহাসিকেরা সৰ্ব্বদা লেখেন না। ভারতবর্ষে রাষ্ট্ররক্ষার কাজ চিরদিনই রাজার হাতেই অপিত আছে। রাজা আপনার সৈন্য সামন্ত লইয়া শত্রুর আক্রমণ ব্যর্থ করিবার চেষ্টা করিতেন ; কিন্তু প্রজা তাহার সাহায্য করিত, এরূপ প্রমাণ অধিক পাওয়া যায় না। রাজা র্যাহার নিকট পরাস্ত হইয়াছেন—প্রজা বিনা বাক্যব্যয়ে তাহার অধীনতা স্বীকার করিয়াছে। রাজার সহায়রূপে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া দাড়াম কৰ্ত্তব্য বোধ করে নাই ; অথবা রাজার পরাজয়ের পর স্বয়ং আক্রমণকারীকে নিরোধ করা কৰ্ত্তব্য বোধ করে নাই। ইহাই ভারতবর্ষের ইতিহাস। এখানে রাজায় রাজায় চিরকাল যুদ্ধ হয়। প্রজা উদাসীন হইয়া দাড়াইয়া দেখে, এবং যে জয়লাভ করে, তাহার নিকট অকাতরে আত্মসমর্পণ করে । ইউরোপের ইতিহাস অন্যরূপ। বোনাপার্টি ইংলণ্ড আক্রমণ করিবেন, এই আশঙ্কা উপস্থিত হইবা মাত্র ব্রিটিশ প্রজা দলে দলে ভলণ্টিয়রের খাতায় নাম লেখাইয়াছিল। সিডান ক্ষেত্রে তৃতীয় নেপোলিয়ান আত্মসমর্পণ করিৰার পরও ফরাসী প্রজা জাৰ্ম্মানের সহিত যুঝিয়াছিল। সেদিন বুয়র যুদ্ধে ইংরাজের রাজশক্তি কয়েক বার আঘাত পাইবা মাত্র ব্রিটিশ প্রজা দলে দলে সমুদ্রপারে দেহপাতের জন্য ছুটিয়াছিল। সেকালে ভারতবর্ষ শত খণ্ডে শত রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। ইহাতে বিস্মিত হইবার বড় কারণ নাই। ইংরাজদের মধ্যে কেমন ঐক্য আছে, ফরাসীদের মধ্যে কেমন ঐক্য আছে, জাৰ্ম্মানেরাও এত কাল পরে ঐক্যবন্ধনে বন্ধ হইয়াছে ; আর ভারত্তবাণীরা এক হিন্দুসমাজভূক্ত হইয়াও ঐক্য-বন্ধন লাভ করে নাই ; এ জন্ম ভারতবাসাকে তিরস্কার করা একটা প্রথা হইয়া দাড়াইয়াছে। কিন্তু এ বিষয়ে