পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র میدہ . রাজার ভাগ্যবিপৰ্য্যয়ে প্রজা উদাসীন ছিল। রাজার পশ্চাতে দাড়াইয়া প্রজা রাষ্ট্র রক্ষার জন্য আপনার দুর্জয় শক্তি প্রয়োগ করিতে শিখে নাই। রাজশক্তি ও প্রজাশক্তি যেখানে এইরূপ বিচ্ছিন্ন, সেখানে নেশন জন্মে না। ভারতবর্ষে নেশনের অস্তিত্ব ছিল না ; সেই জন্য ভারতবর্ষ পরাক্রমণ নিরোধে সফল হয় নাই। নেশন, জন্মিবার বীজ ভারতক্ষেত্রে না ছিল, এমন নহে, কিন্তু সেই বীজ হইতে অস্কুরোদগম ঘটে নাই । এইখানে ইউরোপের ইতিবৃত্তের সহিত ভারতবর্ষের ইতিবৃত্তে অনৈক্য আছে। উভয়ত্র ইতিহাস ভিন্ন পন্থায় চলিয়া ভিন্ন ফল উৎপাদন করিয়াছে। উভয়ত্র এই প্রভেদের মূল কারণ কি, তাহ ঐতিহাসিকগণের বিচাৰ্য্য বিষয়। প্রস্তাবান্তরে আলোচনার চেষ্টা করা যাইবে । ( 'বঙ্গদর্শন, ভাদ্র ১৩০৮)। সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার মানবদেহে কতকগুলি ব্যাধি আছে, তাহাদের প্রত্যেকের জন্য সহস্রবিধ ঔষধের ব্যবস্থা শুনিতে পাওয়া যায়। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনস্তম্ভে এই শ্রেণীর প্রত্যেক রোগের জন্য সংখ্যাতীত অব্যর্থ ঔষধের নূতন আবিষ্কার, আড়ম্বর সহকারে প্রতিনিয়ত ঘোষিত হইয় থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য রোগিসম্প্রদায় মধ্যে র্যাহার কিছু অভিজ্ঞতা জন্মিয়াছে, তিনিই জানেন, যেখানে অব্যর্থ ঔষধের সংখ্যা যত অধিক, রোগমুক্তির আশাও সেখানে ততই সামান্ত । এই ঘটনাকে একট। নৈসৰ্গিক নিয়মের একটা উদাহরণ বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। যে স্থলে উপদেষ্টার সংখ্যাবাহুল্য বিদ্যমান, সেখানে উপদেশ বিশেষ ফল প্রসব করে না বলিয়াই বুঝিতে হইবে। যেখানে শিক্ষাদানের জন্য বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের স্বষ্টি আবখ্যক হয় নাই, সেখানে ফলোৎপত্তিও শিক্ষকদত্ত উপদেশের অপেক্ষায় বসিয়া থাকে না। পৃথিবীর বর্তমান দেড় শত কোটি অধিবাসীর মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই জননীগর্ত হইতে ভূমিষ্ঠ হইয়া জননীর স্নেহে পালিত হইয়া মানুষ হইয়াছে, কিন্তু এই অত্যন্ত প্রাচীন। বসুন্ধরার পৃষ্ঠদেশে এমন কত দেড় শত কোটি মানব এ পর্য্যন্ত মর্ত্যলীলা সমাপন করিয়৷ চলিয়া গেল ; কিন্তু জননীগণকে অপত্যস্নেহের উপদেশ দিবার জন্য একখানাও নীতিপুস্তক এ পর্য্যস্ত রচিত হইল না, অথবা ধৰ্ম্মপ্রচারকমুখে একটাও গুরুগম্ভীর Sermon প্রদত্ত হইল না। অথচ সৰ্ব্বদেশে সৰ্বকালে প্রত্যেক জননী বিনা উপদেশে, বিন। আইনে, বিনা পুলিসে অপত্যের প্রতি আপনার কর্তব্য যথোচিতরূপে সম্পাদন করিয়৷ আসিতেছে। পক্ষাস্তরে, যে দিন হইতে বিদ্যালয় নামক শিশুজন-ভয়ঙ্কর পদার্থের আবিষ্কার হইয়াছে, সেই দিন হইতেই পণ্ডিত মহাশয়ের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের ঔচিত্য সম্বন্ধে কত সালঙ্কার বক্তৃতামালা ছাত্রবৃন্দ্রের প্রতি প্রদত্ত হইয়া আলিতেছে ; তথাপি ভিসিপ্লিনের ও ইন্টার-স্কুল-কলের এত কড়াকড়ির দিনেও এই ছাত্রবৃন্ধের মধ্যে এমন উদাহরণ বিরল নহে, জাহারা জনাস্তিকে মাষ্টান্ন মহাশয়কে নিতান্ত অশাস্ত্রীয় বিশেষণে সম্বোধন করিতে কিছু মাত্র কুষ্ঠিত হয় না।