পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার צרס প্তাহাদিগকে আমার মনের ভাব স্পষ্ট করিয়া বুঝাইবার জন্য দুই একটা উদাহরণের উল্লেখ আবখ্যক হইতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে এইরূপ উদাহরণও নিতান্ত বিরল নহে, এবং তাহ সংগ্ৰহ করিবার জন্য আমাদিগকে অধিক দূর যাইতে হইবে না। আমরা যে কাজে হাত দিতে যাই, সেই কাজই শেষ পর্য্যন্ত পণ্ড হইয়া পড়ে। আমরা যে পথে কোন একটা লক্ষ্যেব অভিমুখে গমন করি, সেই পথ আমাদিগকে সেই লক্ষ্যের নিকটবৰ্ত্তী না করিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত মুখে লইয়া যায়। অন্যান্য দেশে যে প্রণালীতে যে কাৰ্য্য সম্পন্ন হয়, আমাদের দেশে সে প্রণালীতে সেই কাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে গেলে শেষ পর্য্যন্ত নিষ্ফল হইতে হয় । আমবা পূৰ্ব্ব হইতে গণনা করিয়া যে ফলের জন্য অপেক্ষা করিয়া থাকি, সে ফল যথাসময়ে উপস্থিত হয় না ; যাহা আমরা মনে ভাবি না, তাহাই আসিয়া উপস্থিত হয়। আমার বক্তব্য পরিস্ফুট করুিবার জন্য একটা উদাহরণের আলোচনা করিব, আমাদের দেশের শিক্ষা-প্রণালী ৷ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতবর্ষের প্রজাগণের শিক্ষাভার গ্রহণ করেন, তখন বাগ দেবী প্রাচ্য বা প্রতীচ্য কোন, মুত্তিতে আমাদের উপাসনা কবিলেন, এই কথা লইয়া একটা বিতণ্ডা উপস্থিত হইয়াছিল। সেই বিতণ্ডাব ইতিবৃত্ত ও চরম মীমাংসা সৰ্ব্বজনবিদিত , তাহার বিস্তৃত পুনবাবৃত্তির প্রয়োজন নাই। প্রাচ্য শিক্ষা ও প্রতীচ্য শিক্ষ, উভযের পক্ষেই বড় বড় মহারথ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া দ্বন্দুক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন । শেষ পর্য্যন্ত যাহারা প্রতীচ্য শিক্ষাপ্রণালীর পক্ষপাতী, তাহারাই জয়লাভ করেন। র্তাহাদের যুক্তি কতকটা এইরূপ —ভাবতবাসীর ধাতুতে ও মজ্জাতে বৈজ্ঞানিকতার অত্যন্ত অভাব ; প্রাচ্য প্রণালীর শিক্ষ। সেই অভাবের পূরণ করিতে কিছুতেই সমর্থ হইবে না। ভারতবাসী চিরদিন ধরিয়া কাব্য লিখিয়া আসিতেছে ও স্বপ্ন দেখিয়া আসিতেছে, তাহদের নিকট বাহ জগৎট। সমগ্রই একটা তরল পদার্থে অথবা একটা ছায়াময় কল্পনার সামগ্রীতে পরিণত হইয়াছে, সেই জন্য বাহা জগতের উপর তাহাদের কিছুমাত্র প্রসক্তি নাই। সেই জন্য তাহারা বাহা জগতের উপর প্রভুত্ব লাভেও সমর্থ হয় নাই। বাহা জগৎকে তাহাবা যথাসাধ্য অপমানিত করিয়াছে, তাহাতেই যেন জগৎও অপমানিত বোধ করিয়া আর তাহাদিগকে ধরা দিতে চাহে না ; তাহাদের স্পর্শের মধ্যে আসিতে চাহে না । ভারতবাসী যখন বাহ জগৎকে আলিঙ্গন করিতে উপস্থিত হয়, তখন বাহ জগৎ তাহার নিকট হইতে দূরে পালায়। ভারতবাসা যখন ধরাপৃষ্ঠে পদক্ষেপ করে, বম্বন্ধরা তখন তাহার পদতল হইতে সরিয়া যান। ভারতবাসী তখন শূন্য পথে পা ফেলিয়া চলিতে থাকে। বস্তুতঃ ত্রিশ কোটি মন্থয্যের সমবায়ে গঠিত একটা সমগ্র জাতি ইউলিসিসের দৃষ্ট লোটাইটারগণের মত নেশার ঘোরে ঝিম ধরিয়া বসিয়া আছে ; বিশ্বব্ৰহ্মাগুকে একটা প্রকাও ফঙ্কিক ভাবিয়া নিশ্চিন্ত মনে যন্তবিন্য সাজিয়া বসিয়া আছে, এরূপ দৃপ্ত পৃথিবীর অন্যত্র বিরল। একটা সমগ্র জাতি পুরাণ কথিত হরিশ্চন্দ্রের কটকের মত সংসারের সহিত সম্বন্ধ পরিত্যাগ করিয়া শূন্তমধ্যে নিরবলম্বভাবে অবস্থান করিতেছে, এইরূপ দৃগু আর কোথাও নাই।