পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র אףכ\ সিদ্ধান্ত হইয়া গেল, প্রাচ্য দেশের বীণাপুস্তকধারিণী, শতদলবাসিনী বাগ দেবীকে ভারতবর্ষ হইতে নিৰ্ব্বাসন দিয়া ঈজ চেয়ারশায়িনী, বুটপরিহিতা, পাউডারপরিলিপ্ত বিলাতী সরস্বতীকে এ দেশে আমদানি করিতে হইবে। প্রাচীন কল্পনাপ্রধান প্রাচ্য বিদ্যাকে বিসর্জন দিয়া, তাহার স্থানে বিজ্ঞানপ্রধান প্রতীচ্যু বিদ্যাকে স্থাপিত করিতে হইবে। প্রাচীন কালের পৌরাণিক ভূগোল বিবরণে দধিসমূদ্র ও ক্ষীরসমূদ্র প্রভৃতির বিবরণ আছে, অথচ কলম্বস, ড্রেকৃ ও ফ্রাবিশারের সময় হইতে ফ্রাঙ্কলিন, রস ও ন্যানসেনেব সময় পৰ্য্যন্ত নাবিকের সমস্ত পৃথিবী অঙ্গুসন্ধান করিয়া সমুদ্রমধ্যে নোনা জল ব্যতীত এক ছটাকও স্বাস্থ জল সংগ্ৰহ করিতে পারলেন না ! এই সকল কাল্পনিক বিববণে কেবল রসনেন্দ্রিয় দ্রাবিত হয় মাত্র অথচ তাহার পবিতৃপ্তির কোন সম্ভাবনা থাকে না , ইত্যাদি বিবিধ যুক্তিপরম্পরা দেখাইয়৷ বিখ্যাত লর্ড মেক্‌লে, তাহার মহোৎপাদিনী ভাষায় প্রতীচ্য শিক্ষানীতির সমখন করিলেন , এবং কবে সেই শুভ দিন আসিবে, যখন প্রাচ্য বৰ্বরগণ প্রতীচ্য শিক্ষার সহিত প্রতীচ্য সভ্যতা লাভ করিয়া প্রতীচ্য রাজনৈতিক অধিকার লাভের জন্য লালায়িত হইবে এই স্থত্রপাত হইল। ভারতবর্ষের রাজধানীতে ই-রাজ অধ্যাপকের পরিচালিত ই-রাজী বিদ্যালয় স্থাপিত হইল। ইংরাজী অধ্যাপকের পদপ্রান্তে বসিয়া বঙ্গীয় যুবকগণ বেকনের Essay ও মিলটনের Areopagatica অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। আরিংটলের সমাজনীত সম্বন্ধে উপদেশ গ্রহণ করিতে লাগিলেন। Paleyর Evidence ও Reidএর মনস্তত্ত্ব হইতে নুতন তত্ত্ব সংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন, বার্কের অনুকরণে প্রকাশু সভায় রাজনৈতিক বক্তৃতায় গলা সাধিতে আরম্ভ করলেন। হিন্দু কালেজ হইতে প্রতীচ্য সভ্যতাব ধ্বজ ধরিয়া যে সকল মহারথগণ বহির্গত হইলেন, তাহাদের আস্ফালনে ভূমিকম্পের স্বচনা হইল । বাঙ্গালীর ক্ষীণবল জাতীয় জীবনে এমন উৎসাহের আবেগ আর কখনও বুঝি দেখা যায় নাই। বহু কাল পূর্বে ত্রেতাযুগে স্বগ্রীব-পরিচালিত সেনা স্বর্ণলঙ্কার বেলাভূমিতে পদার্পণ করিয়া যে মহোৎসাহ দেখাইয়াছিল, বোধ হয়, তাহারই সহিত এই নবীন উৎসাহের কতকটা তুলনা হইতে পারে। সে ক্ষেত্রে সীতার উদ্ধার বিষয়ে সংশয় সকলের মন হইতে গিয়াছিল কি না, জানি না , কিন্তু বৰ্ত্তমান ক্ষেত্রে হিন্দুয়ানিরূপ বিকট দশাননের কবল হইতে ভারতমাতার উদ্বার ধে অবিলম্বেই সাধিত হইবে, সে বিষয়ে কাহারও দ্বিধা রহিল না। কিছু দিন মধ্যেই ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইল ; নগরে নগরে ইংরাজী বিদ্যালয় স্থাপিত হইল ; প্রতীচ্য শিক্ষা ও প্রতীচ্য সভ্যতার আলোক নিভূত পল্লীগ্রাম মধ্যেও কুসংস্কারের অন্ধকার দূরীকরণে প্রবৃত্ত হইল। ইংরাজী লেখকেও ইংরাজী কথাকে অচিরকাল মধ্যেই “ছাইল সকল ঘাট বাট” ; স্থির হইয়া গেল, ভারতের মুখচন্দ্রমার মালিন্ত আচরেই অপস্থত হইবে। তাহার পর অধিক দিন গত হয় নাই, কিন্তু ইহার মধ্যেই বায়ু প্রতিকূল মুখে ফিরিয়াছে। চারিদিকেই এখন হতাশের আক্ষেপ। বিলাতী বিদ্যা এ দেশে ফলিল না। প্রাচীনপন্থীরা বলিতেছেন, ইংরাজী শিখিয়া ছেলেগুলা কেবল সহবৎবজিত হইতেছে, ধৰ্ম্ম-জ্ঞানশূন্য হইতেছে, নাস্তিক হইতেছে। রাজপুরুষের।