পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার ❖ጫ¢ দূর বদ্ধিত হইবে, তাহাতে অনেকেব মনে গভীর সংশয় রহিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয় নূতন নূতন উপাধির প্রলোভন সম্মুখে ধরিতে পারেন, এবং বড় বড় কেতাবের তালিকা দ্বারা র্তাহাদের ক্যালেণ্ডারের পাতা সুশোভিত করিতে পারেন ; কিন্তু শিক্ষার ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নাই। বিজ্ঞান শিখিতে যে যন্ত্র তন্ত্র কারখানা আবশ্যক তাহ বিশ্ববিদ্যালয় যোগাইতে পারেন না । বিশ্ববিদ্যালয়ের সে ক্ষমতা নাই। গবর্ণমেণ্ট এ সম্বন্ধে অর্থব্যয়ে পরায়ুৰ্থ । লর্ড কেল্‌বিনের ন্যায় বড় বড় বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতের অনুরোধ সত্ত্বেও প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিক্যাল ল্যাবরেটারি স্থাপনের ব্যয়ভার গ্রহণ কবিতে আমাদের গবর্ণমেণ্ট অক্ষমতা স্বীকার করিয়াছেন। অথচ এই প্রেসিডেন্সি কালেজেই যে কিছু সামান্য উপকরণ আছে, তাহার অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও সপ্রমাণ হইয়াছে যে, বাঙ্গালীর মস্তিক খেলিবার অবসর পাইলে খেলিতে না পারে এমন নহে। এই প্রেসিডেন্সি কালেজ হইতেই দুই জন বাঙ্গালী বিজ্ঞানবিদের নাম ভারতবর্ষের চতুঃসীমা ছাড়াইয়া বহু দূর পর্য্যস্ত বিস্তার লাভ করিয়াছে। গবর্ণমেণ্টের পরিচালিত মফস্বলের কালেজগুলির ও আমাদের দেশীয় লোকদিগের পরিচালিত কালেজ গুলির অবস্থা অতিশয় শোচনীয়, সেখানে বিজ্ঞান শিখাইবার যেরূপ ব্যবস্থা আছে, তাহ স্মরণ করিলে চক্ষে জল আসে। এইরূপ মশলা লইয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গদেশে বৈজ্ঞানিক বানাইবার চেষ্টা করিতেছেন। এরূপ অস্বাভাবিক শিক্ষাপ্রণালীর ফল যে স্বভাবসঙ্গত হইবে, তাহার আশা একরূপ নাই বলিলেই চলে। উনানে আগুন ধরাইবার জন্য বাতাস দিতে ও ফু দিতে হয়, কিন্তু বাতাস দিবার পূর্বে যথেষ্ট পরিমাণে ইন্ধন যোগান আবশ্যক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডদ্বয় যথাসাধ্য বিস্ফারিত করিয়া প্রাণপণে ফুৎকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করিতেছেন, কিন্তু উপযুক্ত ইন্ধনের যেরূপ ঐকান্তিক অভাব, তাহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট গগুপীড়া হইবার সম্ভাবনা, কিন্তু দেশের মধ্যে বিজ্ঞানাগ্নি সন্দীপিত হইবার আশা স্বদূরপরাহত। বিজ্ঞানশিক্ষার সহিত নিকট সম্পর্কবিশিষ্ট আর একরকম শিক্ষা আছে, তাহাকে টেকৃনিক্যাল শিক্ষা বা হাতে কলমে শিক্ষা বলে। অনেকের মুখে আজকাল শুনিতে পাওয়া যায় যে, এই টেকৃনিক্যাল শিক্ষার বন্দোবস্ত হইলেই দেশের অবস্থা ফিরিয়া যাইবে । হাতে-কলমে শিক্ষা যে জাতীয় উন্নতির জন্য নিতান্ত আবশ্বক, তাহা নিতান্ত নিৰ্ব্বোধ ব্যতীত কেহ অস্বীকার করিবেন না। কিন্তু এই শিক্ষার জন্য যে সকল বুদ্ধিমান ব্যক্তি বক্তৃতা করেন ও হা হুতাশ করেন, তাহারা এ পর্য্যন্ত টেকৃনিক্যাল শিক্ষার প্রণালীটা কিরূপ হইবে, তাহার একটা পরিষ্কার উত্তর দিতে সমর্থ হন নাই। অনেকের মতে ডাক্তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানসভাকে দেশলাইয়ের বা সাবানের কারখানাতে পরিণত করিলেই আমাদের টেকৃনিক্যাল শিক্ষার একরকম বন্দোবস্ত হইয়া যাইবে । বঙ্গদেশের অদৃষ্টে নানাবিধ বিধিবিড়ম্বনা ঘটিয়াছে ; বিজ্ঞানসভার অদৃষ্টেও এইরূপ শোচনীয় পরিণতি আছে কি না জানি না ; তবে আশা করি, সেই পরিণতি যেন বিলম্বিত হয়। হাতে কলমে শিক্ষা আমাদের দেশে কখনও ছিল না, এবং এখনও নাই, এমন নহে। মন্থয় যে দিন তাহার আদিম বৰ্ব্বর অবস্থায় পাথর ভাজিয়া অস্ত্রনিৰ্ম্মাণ অভ্যাস