পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার ©ፃ ግ বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতির উৎকর্ষ ও স্বাস্থ্যের উৎকর্ষ বিধানের কোনরূপ বন্দোবস্ত নাই দেখিয়া, কলিকাতা শহরে ছাত্রদিগের জন্য হায়ার ট্রেনিং ক্লাব স্থাপিত হইয়াছে। বাঙ্গাল! গবর্ণমেণ্টের প্ররোচনায় শিক্ষা-বিভাগের মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় বাঙ্গালীর ক্ষীণপ্রাণ শিশুগণের প্রতি রুপাপরবশ হইয়া তাহাদিগকে দুৰ্ব্বহ ভূতের বোঝা বহিবার অকারণ পরিশ্রম হটতে অব্যাহতি দিয়া নিয় শিক্ষাপ্রণালীর আমূল সংস্কারের প্রস্তাব করিয়াছেন। পশ্চিম-ভারতবর্ষে যে সমাজ হইতে আমাদের দাদাভাইকে আমরা পাইয়াছি, সেই সমাজের অপর এক স্বদেশবংসল মহাত্মা উচ্চতর শিক্ষা বিস্তারের জন্য ব্যান্যতার পরাকাষ্ঠ দেখাইতে প্রস্তুত হুইয়া আমাদের ধনিগণের সম্মুখে মহাদশ স্থাপন করিয়াছেন । • এত দিন আমরা যে প্রাচ্য শিক্ষাকে অবজ্ঞার চক্ষে নিরীক্ষণ করিয়া আসিতেছিলাম, আজকাল তাহার প্রতি অনেকের দৃষ্টি পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। সংস্কৃত সাহিত্যে কেবলই যে ক্ষীরসমূদ্রেব ও দধিসমূদ্রের কথা নাই, সেখানে যাস্ক ও পাণিনি ও আৰ্য্যভট্ট ও ভাস্করাচার্য্যের মত মনস্বিগণও লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন, তাহ কেহ কেহ যেন স্মরণ করিতেছেন। ফলে চতুষ্পাঠীর অধ্যাপকগণের প্রতিও একালেব ইংরাজী শিক্ষিতগণের শ্রদ্ধা ধীরে ধীরে প্রবত্তিত হইতেছে । ইংরাজী শিক্ষার সঙ্গে ংস্কৃত শাস্ত্র শিক্ষার আবশ্ব্যকতা অনেকের মনে স্থান লাভ করিয়াছে। স্থানবিশেষে এই চেষ্টা নিতান্ত অদ্ভূত ফলের উৎপাদন করিয়াছে। আমাদের মত ফিলজফিক্যাল জাতি স্বভাবতঃই হাস্যরসের আস্বাদনে বঞ্চিত ; কিন্তু বৰ্ত্তমান কালে ইংরাজী বিদ্যা গলাধঃকরণের সহকারে গীত ও চাণক্যশ্লোকের চাটনির ব্যবস্থা হইয়া যে নিতান্ত আংগ্লোবেদিক থেচরান্ন ভোজনের ব্যবস্থা হইয়াছে, তাহাতে নিতান্ত অরসিকেরও রসপ্রবৃত্তি না হইয়া যায় না। যাহারা সনাতন ধৰ্ম্মেব বা জাতীয় আচারের প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য ঈদৃশ কৌতুকের অভিনয় করিতেছেন, তাহাদের অভিনয় দেখিয়া রস গ্রাহী লোকের হাস্য সংবরণ কঠিন হয় বটে, কিন্তু তাহাদের অস্তিরিক উদেতকে আমি শ্রদ্ধ করি। বস্তুতঃ ষে শিক্ষাপ্রণালী জাতীয়তার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহা নিতান্ত অস্বাভাবিক ; এবং যাহা অস্বাভাবিক, তাহা হইতে স্থায়ী ফক্স লাভের সম্ভাবনা অল্প। যুগান্তর হইতে যে জাতীয় স্বভাব বধিত, পুষ্ট ও বিকশিত হইয়া আসিযাছে, তাহার সাহত একবারে সকল সম্পর্ক রহিত করিলে, কেবল শিক্ষাপ্রণালী কেন; কোন, প্রণালীই অভিব্যক্ত হইতে পারে না। আমাদের বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীর প্রতিষ্ঠাতাগণ এই সরল স্কুল কথাটা বুঝিতে পারেন নাই। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে সম্বন্ধ, যে আদান-প্রদান না থাকিলে সমগ্র শরীরের পুষ্টিসাধন হয় না, আমাদের শিক্ষাসমাজের শরীরমধ্যে যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৰ্ত্তমান আছে, তাহাদের পরস্পরের মধ্যে সেই সম্পর্ক, সেই আদান-প্রদান, সেই সমবেদনা বর্তমান নাই ; তাই উহা বর্ধিত ও পুষ্ট ও শ্রযুক্ত হইতে পারিতেছে না। বিলাত হইতে যে শিক্ষাপ্রণালী সশরীরে আমাদের দেশে আমদানি করা হইয়াছে, তাহ আমাদের জাতীয় ভাবের সহিত মিশিতে পারে নাই ; সেই অস্বাভাবিক প্রয়াসে যে অস্বাভাবিক ফল প্রসব করিবে, তাহাতে আর বিস্ময়ের কথা কি ? বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীতে নীতি শিক্ষার ও ধৰ্ম্ম শিক্ষার আদর নাই বলিয়াই-সচরাচর