পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রস্বগরে রচনাসমগ্র יש ללא মহন্তের অন্তরের মধ্যে আরামের দিকে, স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে, বিলাসের দিকে একটা স্বাভাবিক টান আছে। বিশেষতঃ, মহুষ্যসমাজে যাহাকে সভ্যতা বলে, তাহার সহিত বিলাসপ্রিয়তার যেন একটা কিছু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সকল দেশেরই ইতিহাস একই রকম সাক্ষ্য দেয়। আমাদের এই ভারতবর্থেই বৌদ্ধধর্মের প্রাবল্যের সময় যখন সংসারে আমুরক্তির প্রতি ও বিষয়ম্প্রহার প্রতি ঘোরতর সংগ্রাম চলিয়াছিল, ভগবান বুদ্ধদেবের শিষ্যগণ যখন সমস্ত জগৎ-সংসাবকে শূন্য পদার্থে পরিণত করিয়াছিলেন, এবং সেই শৃষ্ঠের প্রতি অল্পরাগকে অজ্ঞানের ও মুঢ়তার পরাকাষ্ঠী বলিয়া প্রচার করিতেছিলেন, ঠিক সেই সময়ই তদানীন্তন সমাজে বিলাসের স্রোতেও যেন জোয়ারের বানু ডাকিয়াছিল। তদানীন্তন প্রাচীন কাব্য ও প্রাচীন স্থাপত্য যাহা এ পর্য্যন্ত বর্তমানু আছে, তাহাই তাহার প্রধান সাক্ষী । মকুন্যের এই স্বাভাবিক বিলাসপ্রিয়তার ও আরামপ্রিয়তার সহিত সংগ্রাম বোধ করি, নিরর্থক শ্রম। কিন্তু আমাদের বর্তমান কালের বিলাসপ্রিয়তার যে অংশ পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার অনুকরণ"চষ্ট হইতে উৎপন্ন, তাহা নিতান্ত অস্বাভাবিক ; স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হক্টতে উৎপন্ন বিলাসপ্রিয়তার দমনের জন্য স্বভাবনিদিষ্ট ব্যবস্থা আছে । স্বাভাবিক প্রবৃত্তি মাত্রেরই একটা সীমা আছে ; যখন শারীরিক অবসাদ উপস্থিত হয়, তখন আকাঙ্ক্ষারও তৃপ্তি হয় ; কিন্তু যে প্রবৃত্তির মূল অস্বাভাবিক, তাহা শরীরের অবসাদ ও ইন্দ্রয়ের গ্লান সত্ত্বেও বিবিধ অস্বাভাবিক ইন্ধন সংগ্ৰহ করিয়া আগুনের মত ক্রমে ক্রমে জালিয়া যায়। একটা অন্ধ অল্পকরণপ্রবৃত্ত বা ফ্যাশান হইতে যাহার উদ্ভব, তাহার তৃপ্তি সহজে ঘটে না । আমাদের বিলাসিত ও সাহেবিয়ান অস্বাভাবিক ; কেন না, ইহা আমাদের মত দরিদ্রের আর্থিক অবস্থার অনুরূপ নহে ; এই সাহেবিয়ানা আমাদের পক্ষে শোভন হয় না ; পরের নিকট ধার করিয়া যে জিনিস লওয়া যায়, তাহার উপর স্বত্ব স্বামিত্ব ও অধিকার অত্যন্ত শিথিল থাকে। পরের পোষাক শরীরে কোন মতেই মানায় না, প্রত্যুত অনেক সময় সংএর মত দেখায়। আবার আমাদের এই যে অন্ধ ফ্যাশানের অমুকৃত্তি, এই পরামুকরণচেষ্টা, ইহাকেও ঠিক স্বাধীন ইচ্ছা হইতে উৎপন্ন বলিতে পারি না ; কেন না, এখন আমাদের অবস্থা এইরূপ দাড়াইয়াছে যে, ইচ্ছা না থাকিলেও ও সামর্থ্য না থাকিলেও লোক দেখাইবার জন্য ও পরকে দেখাইবার জন্য পরের খাতিরে আমাদিগকে সাহেব সাজিতে হয় ও সভ্যতা ফলাইতে হয় । স্বভাবতঃ যে দরিদ্র, তাহার পক্ষে ঐশ্বৰ্য্যের আড়ম্বর অস্বাভাবিক। স্বভাবতঃ যে ছোট, তাহার পক্ষে ছোট হইয়া থাকা স্বাভাবিক। ক্ষুদ্র যদি অস্বাভাবিক বল প্রয়োগ করিয়া বড় হইবার চেষ্টা করে, তাহার সেই অস্বাভাবিক প্রয়াসের পরিণাম কল্যাণপ্ৰদ হয় না। আমরা হুঙ্কার ও কলরবের সহিত বড় বড় কাজ করিবার জন্য প্রস্তুত হই, আর কাজ সফল হইল না দেখিয়া নৈরাপ্তের আক্ষেপ করিতে থাকি । আমরা বামন হইয়া টাণের আশায় হাত বাড়াই ও চাদ ধরা পড়িল না দেখিয়া শেষে টাঙ্গের নিন্দ। করি। মানবশিশু হামাগুড়ি অভ্যাস করিয়া পরে চলিতে শিখে, আমরা বড় মানুষকে চলিতে দেখিয়া একবারে পদক্ষেপের জন্ত দণ্ডায়মান হই; হামাগুড়ির অভ্যাল দরকার বোধ করি না। অামাজের ষে সকল পৈতৃক স্বকীয় সম্পত্তি আছে, ৰাহা আমাদের