পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার \○み> আপনাকে আপনি গালি না দিলেও শ্রবণেন্দ্রিয়ের অতৃপ্ত থাকিবার সম্ভাবনা নাই।: অনেকে বলিয়া থাকেন, নিজের দোষ নিজে না দেখিলে চরিত্ৰশোধনের উপায় থাকে না ; কথাটা সত্য কথা ; কিন্তু কেবলই দোষের আলোচনায় কেবল আত্মগ্নানির অবতারণা করে। প্রতিনিয়ত আপনার ক্ষুদ্রত্বের আলোচনা করিলে ক্ষুদ্রত্বই ক্রমে জীর্ণতর হইতে থাকে ; কেবলই আপনার দৌৰ্ব্বল্যের বিষয় ভাবিলে স্বায়ুযন্ত্র আরও দুৰ্বল হইয় পড়ে। সংসারে বাহুবলে যাহা সম্পন্ন হয় না, তাহা মনের বলে অনেক সময় সম্পন্ন হইয়া যায়। মানসিক বল দুৰ্বল বাহুতে অনেক সময়ে দৈত্যের শক্তি আনিয়া দেয়। ইংরাজীতে যাহাকে বলে confidence, আপনার শক্তিতে অতিবিশ্বাস, তাহ সাংসারিক উন্নতির পক্ষে অনেক সময় অনুকূল হয়। এই বৃহৎ জগতের মধ্যে ক্ষুদ্রের ও দুৰ্ব্বলের ও দরিদ্রের স্থান যে একবারে নাই এমন নহে। আমাদের দৌৰ্ব্বল্য ও ক্ষুদ্রত্ব লইয়া যদি আমরা প্রবলের দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করিতে যাই, তাহা হইলে আমাদের অবমাননা অবশ্যম্ভাবী । * আমাদের দারিদ্র্য লইয়া যদি ঐশ্বৰ্য্যশালীর পশ্চাতে দাড়াইয়া- চাটুকারবৃত্তি অবলম্বন করিতে যাই, তাহা হইলে আমাদের মনুষ্যত্বের অবমাননা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যদি ঐশ্বৰ্য্য হইতে ও বৃহত্ত্ব হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকিয়া আমাদের ভগ্ন কুটারমধ্যে আমাদের পুরাতন জীর্ণ গৃহসজ্জাগুলির মধ্যে যাহা আমাদের নিজস্ব, অথবা র্যাহাদের শোণিত আমাদের ধমনীমধ্যে বহিতেছে— উহাদের নিকট হইতে প্রাপ্ত, পরের নিকট ভিক্ষালব্ধ বা ঋণলব্ধ নহে, তাহারই মধ্যে আমরা স্থির হইয়া থাকি, তাহা হইলে আমাদের মতুযুত্বের গৌরব কি কিছু বাড়িবে না ? ভগ্ন কুটীর কি অট্টালিকার প্রতি অবজ্ঞার দৃষ্টিনিক্ষেপে সাহসী হইবে না ? আমাদের সমাজশরীরে কি ধনসঞ্চয় ঘটবে না ? প্রকৃতি ও কাল কি চিরদিনই আমাদের প্রতিকূল থাকিবে। অন্তকার এই ধরাপৃষ্ঠে যে সকল জাতি জ্ঞানের ও গৌরবের ও মাহায্যের ধ্বজ ধরিয়া উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে আমাদের স্থান নাই । জ্ঞানের সহিত জ্ঞানের, শক্তির সহিত শক্তির, ঐশ্বর্য্যের সহিত ঐশ্বৰ্য্যের, জাতির সহিত জাতির, ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোলাহলে দিজুগুল আপূরিত হইতেছে, আমাদের ক্ষীণ কণ্ঠ সেই কোলাহলের তীব্রতাবৰ্দ্ধনে অধিকারী নহে। কিন্তু আমরা যদি সেই উচ্চ কোলাহল, উংকট উদ্যম ও অমাল্লষিক চেষ্টা দেখিয়া আত্মবিস্তৃত হইয়া কেবল মুগ্ধের ন্যায় চাহিয়া থাকি, এবং আত্মগ্লানি ও আত্মবিমাননার অভ্যাস দ্বারা আপনাদিগকে জড় পদার্থে পরিণত করি, তাহা হইলে আমাদের ভবিষ্যৎ বড় ভয়াবহ। পরন্তু যদি আমরা আমাদের প্রাচীন পুরাতন সভ্যতার ও মাহায্যের ভগ্নাবশেষের অন্তরালে দণ্ডায়মান থাকিয়া সাৰ্ব্বভৌমিকত্বের অসার উপহাস্য আস্ফালন ত্যাগ করিয়া আমাদের সীমাবদ্ধ সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে বিজনে লোকনয়নের অসাক্ষাতে আমাদের কালামুরূপ ও দেশানুরূপ ও অবস্থায়রুপ সাধনা অভ্যাস করিয়া ধনসঞ্চয়ে প্রবৃত্ত হই, তাহা হুইলে ভবিষ্যতের ইতিহাস অন্তরূপ আকার ধরিতেও পারে। আমার এই স্বদীর্ঘ প্রস্তাবের উপসংহারের পূর্বে আমার এত ক্ষণের স্বজাতিনিন্দারূপ মহাপাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ যদি একবার স্বজাতির গৌরব-কীৰ্ত্তনে প্রবৃত্ত হই, তাহ।