পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র בנכסי হইলে শ্রোতৃবর্গ আমাকে উপহাস করিবেন না। আমাদের কলকারখানা নাই, আমরা জয়েণ্ট ষ্টক কোম্পানি চালাইতে পারি না, আমাদের দেশলাইয়ের কারখানা চলিল না, আমাদের প্রবিনশিয়াল রেলওয়ের শকটশ্রেণী অতি মন্থর গতিতে চলিতেছে, এই মনে করিয়া হা-হুতাশ করিয়া বিশেষ কোন লাভ নাই। আমাদের বর্তমান অস্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের উদ্যমের নিস্ফলতাই স্বাভাবিক। স্বতন্ত্র জাতি যাহা দশ বংসরে শিখিয়াছে, আমাদের মত পরতন্ত্র জাতিকে তাহা শত বৎসরে শিখিতে হইবে, পুনঃ পুনঃ ঠেকিয় শিখিতে হইবে ; এবং এই অবস্থাতেও আমরা যে অকৰ্ম্মণ্য হেয় জীব নহি, তাহাও নানা স্থানে সপ্রমাণ হইয়াছে। বৰ্ত্তমান কালকে.যাহারা জাতীয় জীবনের নবাভু্যদয়ের কাল বলিয়া নির্দেশ করেন, আমি কখনই তাহাদের মতের অনুমোদন করিতে পারি নাই ; শত শত বৎসরের অন্ধকারের পর যাহারা নূতন জ্যোতির আবির্ভাব দেখেন, তাহাদের নেত্রদ্বয়ের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আমার সন্দেহ আছে । আমি বৰ্ত্তমান কাল ও বর্তমান কালের অব্যবহিত পূৰ্ব্বের মুসলমানি কালকে জাতীয় জীবনের অপরাহ্ল মাত্র বলিয়া নির্দেশ করিব। তবে এই অপরাহের পরে সন্ধ্য। আসিবে কি না, তাহা বলিতে আমি সমর্থ নহি । আমাদের ধৰ্ম্মশাস্ত্রকারগণেব মানসিক প্রতিভাবলে আমাদের সমাজতন্ত্র এরূপে গঠিত ও পরিচালিত হইয়াছে যে, বৌদ্ধ চাৰ্ব্বাক নানকপন্থী কবীরপন্থী চৈতন্যপন্থী প্রভৃতি অন্তঃশত্রু ও শক পহলব হন যবনাদি বহিঃশত্রুর পুনঃ পুনঃ আক্রমণেও উহা অদ্যাপি ভাঙ্গিয়া যায় নাই ; পরস্তু যখন যে নূতন জাতির সহিত উহাকে দ্বন্দ্ব করিতে হইয়াছে, সেই দ্বন্দ্বের ফলেই আপনি নূতন শক্তির সঞ্চয় করিয়া নৃতন বলে আপনাকে জীবিউ রাখিয়াছে। সেই জন্য এই বর্তমান অবস্থাতেও আমাদের গৌরব করিবার আছে। বর্তমান কালে আমাদের মধ্যে সেক্সপীয়ার জন্মেন নাই, কিন্তু বঙ্কিকচন্দ্র জন্মিয়াছেন ; অৰ্দ্ধ শত বৎসর পাশ্চাত্ত্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রভাবে মাইকেল ফ্যারাডে জন্মেন নাই, কিন্তু আমরা জগদীশচন্দ্রকে পাইয়াছি । বিজ্ঞানপ্রধান উনবিংশ শতাব্দীর অন্তিম কালে পাশ্চাত্ত্য বৈজ্ঞানিক সমাজের অগ্রণীগণ জড় পদার্থের ও আকাশের সম্বন্ধ নির্ণয়ার্থ যে মহতী চেষ্টায় নিযুক্ত আছেন, আমাদের এই পতিত সমাজের অন্তভূক্ত আমাদেরই পরিচিত কোন পরমাত্মীয় ব্যক্তি উদাসীন স্বদেশীয়গণের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে বৈদেশিকগণের সন্দেহাকুল নয়নের সম্মুখে দাড়াইয় সহস্ৰ বিঘ্ন সত্ত্বেও পদার্থবিজ্ঞানের সেই মহাতথ্যের অনুসন্ধানে সাহায্য করিতে সমর্থ হইয়াছেন, ইহা আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিবৃত্তে শ্লাঘার ঘটনা বলিয়া বিবেচনা করি। বর্তমান কালেও যদি গৌরবের কথা না পাওয়া যায়, আমরা আমাদিগের অতীত ইতিহাসে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিব। অতীতের নাম উল্লেখ করিবা মাত্র এক সম্প্রদায়ের লোক আমার প্রতি ভীতিবিহবল নেত্ৰ স্থাপিত করিবেন। তাহারা ভাবিবেন,— হয়ত আমি আমার স্বদেশীয়গণকে ভবিষ্যতের মুখে অগ্রবর্তী হইতে নিষেধ করিয়া জুড়ীতের মুখে পশ্চাদ্বতী হইতে আহ্বান করিব। তাহানের আগে চলা বন্ধ করিতে ইলিয়া পাছু হঠিতে উপদেশ দিব। কিন্তু প্রথমেই বলিয়া রাখি, তাহায়ের এরূপ আশঙ্কার কোন কারণ নাই। সমাজ-ঘড়ীর কাটাকে ফিরাইয়া দিবার আমার আদৌ