পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : মহাকাব্যের লক্ষণ 8› ግ উহাদের মাহাত্ম্য খৰ্ব্ব করা হয়। * বস্তুতই মাহাত্ম্য খৰ্ব্ব করা হয়। কুমারসম্ভব ও কিরাতার্জনীয় যে অর্থে মহাকাব্য, রামায়ণ মহাভারত কখনই সে অর্থে মহাকাব্য নহে। কুমারসম্ভব, কিরাতার্জনীয় যে শ্রেণীর—সে পৰ্য্যায়ের গ্রন্থ, রামায়ণ মহাভারত কখনই সে শ্রেণীর—সে পৰ্য্যায়ের গ্রন্থ নহে। একের নাম মহাকাব্য দিলে, অন্যকে মহাকাব্য বলা কিছুতেই সঙ্গত হয় না | রামায়ণ মহাভারতের ঐতিহাসিকত্বে ও ধৰ্ম্মশাস্বত্বে সম্পূৰ্ণ আস্থাবান থাকিয়াও আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য যে, উহাতে কাব্যরসও যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। মহর্ষি বাল্মীকি ও কৃষ্ণদ্বৈপায়নের মুখ্য উদ্দেশু যাহাই থাকুক, উহার যাহা লিপিয়া ফেলিয়াছেন, তাহাতে প্রচুর পরিমাণে কবিত্ব রাহয়। গিয়াছে,—হয়ত উহাদের সম্পূর্ণ আজ্ঞাতসাবে রহিয়া গিয়াছে , কিন্তু কবিত্ব যে আছে, সে বিষয়ে কাহারও সন্দেহ করিবার উপায় নাই। . রামায়ণ মহা ভারতে কবিত্বের অস্তিত্ব স্বীকার করিতে গেলেই মহর্ষিদ্বয়কে মহাকাপ ও তাহাদের কাব্যদ্বয়কে মহাকাব্য না বলিলে চলে না । কেন না, ভাষাতে আর কোন শব্দ নাই, যদ্বারা এই কাব্যদ্বয়ের সঙ্গত নামকরণ চলিতে পারে। কুমারসম্ভব কিরাত্যঞ্জনীয়কে আপাতত মহাকাব্যের শ্রেণী হইতে খারিজ করিয়া দিয়া আমরা রামায়ণ মহাভারতকেই মহাকাব্য বলিয়া গ্রহণ করিলাম । মনে হইতেছে, মেকলে কোথায় বলিয়াছেন, সভ্যতার সহিত কবিত্বের কতকট। খাদ্য-থfদক বা অহি-নকুল সম্বন্ধ রহিয়াছে। সভ্যতা কবিত্বকে গ্রাস করে , অথপ। সভ্যতার আওতায় কবিতার লতা বাড়িতে পায় না । বলা বাহুল্য, মেকলের অনেক উক্তির মত এই উক্তিটিকেও সুধী জনে উপহাস করির উড়াইয়া দিয়াছেন। বিগত উনবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার আস্ফালন সত্ত্বেও ইউরোপখণ্ডে কবিত্বের যেরূপ স্মৃত্তি দেখা গিয়াছে, তাহাই তাহার প্রমাণ। অন্য প্রমাণের প্রয়োজন নাই । কিন্তু আমার বোধ হয়, মেকলের ঐ উক্তির ভিতর একটু প্রচ্ছন্ন সত্য আছে। সভ্যতা কবিত্বের মস্তক চৰ্ব্বণ না করিতে পাবে, কিন্তু মহাকাব্যকে বোধ করি সশরীরে গ্রাস করিয়া ফেলে। আবার বলা আবশ্বক, মহাকাব্য শবদ আমি আলঙ্কারিকসন্মত অর্থে ব্যবহার করিতেছি না। রঘুবংশ, কুমারসম্ভব ও প্যারাডাইস্ লষ্ট কে আমি এ স্থলে মহাকাব্যের মধ্যে ফেলিতেছি না। রামায়ণ মহাভারত যে পৰ্য্যায়ের কাব্য, সেই পৰ্য্যায়ের কাব্যকেই আমি মহাকাব্য বলিতেছি । পুথিবীতে কত কবি কত কাব্য লিখিয়া যশস্বী হইয়াছেন, কিন্তু মহাকাব্য সেই কোন কালে রচিত হইয়া গিয়াছে, তাহার পর আর একখানাও রচিত হইল না । পাশ্চাত্য কাব্যসাহিত্যে লেখকের কিছু মাত্র ব্যুৎপত্তি নাই ; কিন্তু সন্দেহ হয়, কেবল হোমারের নামে প্রচলিত গ্রন্থ দুইখানি ব্যতীত আর কোন কাব্যকে রামায়ণ মহাভারতের সমান পর্য্যায়ে স্থান দেওয়া যাইতে পারে না। পাশ্চাত্য দেশে সভ্যতাবৃদ্ধির সহিত কবিত্বের অবনতি হইয়াছে, এ কথা কেহই বলিতে পারিবেন না ; কিন্তু শেকৃস্পীয়ারের নাম মনে রাথিয়াও অকুতোভয়ে বলা যাইতে পারে, ইউরোপ মহাদেশেও একবারের বেশী হোমারের জন্ম হয় নাই। ۹ -سس: