পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ૨૨ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সহিত তাহার তুলনা করিতে গিয়া লেখক মহাকাব্যের একটা লক্ষণ নিৰ্দ্ধারণ করিয়া ফেলিয়াছেন। বলা বাহুল্য, এই আবিষ্কার জগতের যাবতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রের রোমহর্ষ উৎপাদন করিবে। তাহা জানিয়াও সেই আবিষ্কারটি পাঠকগণের সম্মুখে উপস্থিত করিবার দুঃসাহস আশ্রয় করিলাম ; আশা করি, তাহাদের শুভ্রোজ্জল দর্শনচ্ছটা লেখককে রণারম্ভেই পৃষ্ঠপ্রদর্শনে বাধ্য করিবে না। লেখকের মতে যে কাব্য পডিতে হয় না, তাহারই নাম মহাকাব্য। না পডিয়াই আমরা মহাকাব্যের কাব্যরসাস্বাদনে অনেকটা অধিকারী হটতে পারি। রামায়ণের চতুবিংশতি সহস্ৰ শ্লোকের ও মহাভারতের লক্ষ শ্লোকের অধিকাংশই অপঠিত রহিয়াছে, ইহা স্বীকার কবিলে বোধ করি পাঠকসমাজের অধিকাংশষ্ট লজ্জিত হইবেন না। তথাপি এই পাঠকসমাজ উভয় মহাকাব্যের কাব্যরসের আস্বাদন জানেন না, ইহা স্বীকার করিতে র্তাহার কখনই সম্মত হইবেন না। রামচরিত্র ও ক্লষ্ণচরিত্র, লক্ষণচরিত্র ও কর্ণচরিত্র, দশাননচরিত্র ওঁ দুর্য্যোধনচরিত্র, ভরতচরিত্র ও ভীষ্মচরিত্র, মহাকাব্যের গহন বন ভেদ করিয়৷ এই সকল মহামানব-চরিত্রের স্পর্শ লাভ আমাদের অধিকাংশের ভাগ্যেই ঘটে নাই। আমরা দূর হইতে উহা নিরীক্ষণ করিয়াছি মাত্র ; তথাপি দূব হইতেই তাহার মাহত্ম্যে আমরা বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইয়। রহিয়াছি। জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে, ভাবতবর্ষে আৰ্য্যসমাজে জন্মগ্রহণ করিয়া যে ব্যক্তি মাতৃস্তন্য পান করিয়া বদ্ধিত হইয়াছে, অথচ রামচরিত ও সীতাচরিতেব পুণ্যধার। সেই মাতুস্তন্যের প্রবাহেব মত তাহীর আধ্যাত্মিক জীবনের শিরায় শিরায় সঞ্চারিত হয় নাই, স্বায়ুতন্ত্রীতে তাড়িত স্রোতের সঞ্চালন করে নাই, তাহার অস্থিতে, তাহার মজ্জায়, তাহার পেশীতে বল বিধান করে নাই, সেই হতভাগ্যের—সেই পিণ্ডীভূত জড়ের ভারত-সমাজে স্থান কোথায় ? পঞ্চবিংশতি কোটি হিন্দুসন্তানের অধিকাংশ অন্য কারণ । না থাকিলেও, শুদ্ধ ভাষাজ্ঞানের অভাবে, সেই পুণ্য স্রোতস্বিনীর মূল প্রস্রবণে গিয়া তুষ্ণানিপারণে অশক্ত আছে, সন্দেহ নাই ; কিন্তু লক্ষ্মণের মত ভাই, হকুমানের মত দাস, ভীষ্মের ন্যায় পিতামহ ও কর্ণের ন্যায় বৈরীর জাগ্রত জীবন্ত প্রতিমূৰ্ত্তি কয় জনের মানস চক্ষুর সম্মুখে দণ্ডায়মান নাই ? অামাদের বঙ্গদেশেরই অসংখ্য নরনারী মাতৃমুখে লঙ্কাদহনের ও লক্ষ্মণভোজনের কথা শুনিয়াছে ; কথকের মুখে, গায়কের মুখে মন্থরার লাঞ্ছনা ও অঙ্গদ-রাবণ-সংবাদের অতিরঞ্জনে আমোদিত হইয়াছে , যাত্রায়, গানে ভরতমিলন ও সীতানিৰ্ববাসন অভিনীত হইতে দেখিয়া অশ্রু বিসর্জন করিয়াছে : রম্ভিবাসী রামায়ণ হস্তে অবকাশরঞ্জন করিয়াছে ; এবং শেষের সে দিন রামনাম শুনিতে শুনিতে জগৎসংসারের নিকট হইতে চিরবিদায় গ্রহণ করিয়াছে ; কিন্তু সেই আদিকবির অমৃতলেখনীর সহিত সাক্ষাৎ পরিচয় তাহাদের ভাগ্যে ঘটে নাই । কিন্তু আপনি জ্ঞানী, আপনি পণ্ডিত, আপনি কলাবিৎ, আপনি সমালোচক, আপনি সমজদার, আপনি সস্তরণ দিয়া সংস্কৃত-সাহিত্য-সমুদ্রের পার দেখিয়াছেন, আপনার সপ্তকাগু রামায়ণ আছন্ত কণ্ঠস্থ রহিয়াছে, আপনার যদি বিশ্বাস থাকে যে, ঐ পল্লীবাসিনী মূর্থ বৃদ্ধার অপেক্ষ আপনি নিঃসংশয়ে রামরসায়নে অধিকতর রসগ্রাহী হইয়াছেন, তাহা হইলে আপনাকে ভ্রান্ত বলিয়া নির্দেশ করিব। বস্তুতই আমার বিশ্বাস, মহাকাব্যের লক্ষণ এই যে, উহার আগাগোড়া অক্ষরে অক্ষরে