পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ঃ মহাকাব্যের লক্ষণ 8 Rや পড়িবার প্রয়োজন নাই। মূল হোমার পৃথিবীতে কয় জন লোক পড়িয়াছে ? পণ্ডিতসমাজের মধ্যে কয় জন লোক হোমারের তর্জমা পর্য্যস্ত পাঠ করিয়াছেন ? অধিকাংশের পক্ষে কেবল হোমারের গল্প শুনা আছে মাত্র। অথচ ট্রয় নগরের প্রাকারসম্মুখে সমুদ্রবেলা পূর্ণ করিয়া আমরা আগামেম্নন-পরিচালিত গ্রীক অক্ষৌহিণীর সন্নিবেশ বর্তমান মুহূর্ভে চক্ষের সম্মুখে স্পষ্ট তুলিকায় চিত্রিত দেখিতেছি। সেই বিস্তীর্ণ স্তব্ধ সেনাকুলিত রণাঙ্গনের উপর দিয়া একিলীস, আজাকৃস্ ও দায়োমীদের বিশালবক্ষ পরিণদ্ধকন্ধর শালপ্রাংশু জীবন্ত মূৰ্ত্তি বিচরণ করিতেছে ; বৎসরের পর বৎসর অতিক্রান্ত হইতেছে, কিন্তু ট্রয় নগরের দুর্ভেদ্য প্রাকার ভগ্ন হইল না , গ্রীক বীরগণের শিবিরমধ্যে মানবহৃদয়ের সনাতন ঈর্ষাবিদ্বেষ ধূমায়মান হইতে লাগিল। সেই ধূম হইতে অগ্নি জলিয়া উঠিল, গ্ৰীক বীরগণ ক্ষণেকের জন্য উদ্দেশুভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া পরস্পর আত্মকলহে প্রবৃত্ত হইলেন ; তার পর-অঙ্কের যবনিকা তুলিবা মাত্র অকস্মাৎ পাত্রোক্লসের চিতাধূম প্রশমিত হইতে না হটতে একিলীসের রোষাগ্নি প্ৰজলিত হইয়া উঠিল ; রোযাগ্নিদীপ্ত রুদ্রযুক্তি হুঙ্কার করিয়া গর্জন করিল ; পরক্ষণেই দেখিতে পাই, মহাবীর হেক্টবের শবদেহ সেই ভীমকৰ্ম্মাব বথচক্রে নিষ্পেষিত হইয়া রুধিবধারায় রণক্ষেত্র শোণিতাক্ত কবিতেছে ও মর্তে নরগণের ও আকাশে দেবগণের মুগ্ধ নেত্র বিস্ফারিত হইয়| সেই ক্রুব কৰ্ম্মের প্রতি নীববে নিক্ষিপ্ত বহিয়াছে। পাঠকবর্গ যদি এত ক্ষণ বুঝিয় থাকেন, রুক্তিবাস পডিলেই বাল্মীকি পড়ার কাজ হইবে, এবং যে সকল পাঁচালী পয়ার শুনিয়া কাশীদাস ভারতকথা বর্ণনা কবিয়া গিয়াছেন, সেই পাচালী পডিলেই আর দ্বৈপায়ন ঋষির শরণ লইতে হইবে না, তাহা হইলে লেখকেব নিতান্ত দুর্ভাগ্য ৷ বদরিকাশ্রমযাত্রী র্যাহার। হিমালয়েব চড়াই উতরাই অতিক্রম করিয়া আসিয়াছেন, কৈলাসযাত্রী যিনি যোল হাজার ফুট উপরে উঠিয়৷ "নীতি-পাস অতিক্রম করিয়া আসিয়াছেন, এমন কি, দাৰ্জিলিঙে কিংবা সিমলা-শৈলের আলোকমণ্ডিত রাজপথে র্যাহারা বিহার কবিয়া আসিয়াছেন, র্তাহারা হিমালয়ের যে সৌন্দর্য্য দেখিয়াছেন, হিমালয়ের পাদদেশের সমতলবাসীর পক্ষে তাহা ইন্দ্ৰিয়মনের অগোচর, সন্দেহ নাই । কিন্তু আশঙ্কা হয়, হিমালয়ের এক এক দেশে, এক এক অঙ্গে, তাহার কিন্নরীসেবিত গুহামধ্যে, তাহার সরলদ্রমছিন্ন সাহ্রদেশে, তাহার গৈবিকখচিত উপত্যকায়, তাহার মারুতপূর্ণরন্ধ আপাদিতবেণুকৃত্য কীচক-বনে, তাহার হিমশীকরবাহিপবন-সেবিত গিরিনিঝ রপ্রান্তে চিত্রবিভ্রমকর অতুল্য শোভা আছে সত্য , কিন্তু সেই একদেশব্যাপী শোভা, সেই প্রাদেশিক মূৰ্ত্তি, সমগ্র হিমাচলের প্রতি নিরীক্ষণের বড় অবকাশ দেয় না। হিমাচলেব বিরাট মূৰ্ত্তিব শোভ হৃদগত করিতে হক্টলে যেমন দূরে থাকিয়া তাহার তুঙ্গ শিখররাজির দিকে অবলোকন আন্গুক, সেইরূপ রামায়ণ মহাভারতের বিশাল মহাকাব্যেব মধ্যে অসংখ্য খণ্ড কাব্য নিবিষ্ট রহিয়াছে ; অনেক বনজঙ্গল ভেদ করিয়া, অনেক প্রস্তরকঙ্কর অতিক্রম করিয়া, অনেক চড়াই উতরাষ্ট পার হইয়া, ক্লাস্তশরীরে সেই সকল খণ্ড কাব্যের সৌন্দৰ্য্যদর্শনে অধিকারী হইতে পারিলে, দর্শকের মন আনন্দরসে অভিপ্লুত হয়, সন্দেহ নাই ; সেই সকল খণ্ড কবিতার উপমাও অন্যত্র দুর্লভ, সন্দেহ নাই ; কিন্তু সমগ্র মহাকাব্যের মাহাত্ম্য উপলব্ধির বিষয়ে সেই খও কাব্যের আলোচনা বিশেষ সাহায্য করে না। সমগ্র মহাকাব্যের মহিমা উপলব্ধি