পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○。 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দেশেই অন্তরীক্ষ চিরকাল প্রশাস্ত থাকে না। চিরবসন্ত কোন দেশেই বিরাজ করে না। বৎসরে যেমন ঋতুর পরিবর্তন হয়, মানবসমাজের ইতিহাসে তেমনই যুগের পরিবর্তন ঘটে, এক এক যুগের হাওয়া এক এক দিকে। যুগের যাহা লক্ষণ—যাহাকে যুগধৰ্ম্ম বলা যায়, হাওয়ার গতি দেখিয়া তাহার নিরূপণ १भुं । আমাদের বাঙ্গলা দেশেও কত বার এইরূপ হাওয়া বহিয়াছে ; কত বার কত যুগপরিবর্তন ঘটিয়াছে, সেই হাওয়াব বেগে নীয়মান হইয়া দেশের লোকে বিক্ষিপ্ত ও উদভ্ৰাপ্ত হইয়াছে। ভাবের পাথাবে তখন তরঙ্গ উঠিয়াছে, কখনও বা পাথারের উপরে তুফানের স্বষ্টি হইয়াছে। তৎকালিক সাহিত্যিকেরা সেই হাওয়াতে গ৷ ঢালয় - দিয়াছেন ; সেই তরঙ্গ ঠেলিয়া পাথারের মধ্যে র্তাহারা সাতার থেলিয়াছেন। বাঙ্গল দেশের, নাঙ্গালী জাতির • ধাৰাবাহিক ইতিহাস নাই , কিন্তু বাঙ্গলা দেশের অতি পুরাতন সাহিত্য আছে। সেই সাহিত্য বাঙ্গালীর পক্ষে অগৌরবের বস্তু নহে। এমন কি, সেই সাহিত্যই বাঙ্গালীর পক্ষে এক মাত্র গৌরবের ধন। চণ্ডীদাস মধুর রসের স্বধার ধাব। ঢালিয়। যে সাহিত্যকে আর্দ্র করিয়াছেন, রামপ্রসাদ তাহার মায়ের চরণে আপনাকে নৈবেদ্যস্বরূপে অৰ্পণ করিয়া যে সাহিত্যে ভক্তিরসের স্নেহ সেচন করিয়াছেন, সেই সাহিত্য শিরে ধরিয়া ভবের বাজারে মাথা তুলিয়া দাড়াইবার অধিকাবে আমাদিগকে বাধা দিতে কেহ সাহস করিবে | || বসুমতীর বড়বাজারের প্রদর্শনীতে বাঙ্গালাব পক্ষে আর কোন পণ্য দ্রব্য দেখাইবার আছে কি ? ধনপতি সদাগরেব ডিঙ্গায় চাপিয়া সিংহল যাত্রাব সময়ে যাহারা সাত সাগরের জল খাইয়াছিলেন, তাহাদের কাহিনী তুলিয়া আমরা প্রাচীন বাঙ্গালীর বাণিজ্যের প্রসার প্রতিপন্ন করিতে পারি ; কিংবা প্রতাপাদিত্য দিল্লীপতির সহিত লড়াই করিবার পূৰ্ব্বে আপন পিতৃব্যের মাথা কাটিয়া ফেলিয়াছিলেন, এই প্রমাণে আমরা প্রাচীন বাঙ্গালীর বাহুবল প্রতিপন্ন করিতে পারি। কিন্তু তথাপি আমার সংশয় আছে যে, প্রাচীন বাঙ্গালীর এই বৈশ্ববৃত্তির উদাহরণ বড়বাজারে অধিক মূল্যে বিকাইবে না। জাতির সহিত জাতির ও রাষ্ট্রের সহিত রাষ্ট্রের জীবনদ্বন্দ্বের বিকট কোলাহল যাহা শত শতাদের নীরবতা ভঙ্গ করিয়া আজ পর্য্যন্ত মানবের ইতিহাস ধ্বনিত হইতেছে, সেই কোলাহলের মধ্যে বাঙ্গালীর ক্ষীণ কণ্ঠ শ্রুতিগোচর হয় না বলিলেই চলে। বাঙ্গালীর ভবিষ্যতের আশা ও ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা যাহাই হউক, বঙ্গের প্রাচীন ইতিহাসে বাঙ্গালীর বৈশুবৃত্তির ও বীরবৃত্তির কীৰ্ত্তিকথা লইয়া জগতের সম্মুখে উপস্থিত হইতে আমরা কখনই সাহসী হইব না। নাই বা হইলাম! তজ্জন্য লজ্জিত বা কুষ্ঠিত হইবার হেতু দেখি না। বাঙ্গলার পুরুষপরম্পরাগত সহস্ৰ বৎসরের ধারাবাহিক সাহিত্য রহিয়াছে। সেই সাহিত্য লইয়া আমরা ভবের হাটে উপস্থিত হইব ; সেখানে কেহ আমাদিগকে ধিক্কার জিতে পরিবে না ।