পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; মাতৃমন্দির B\రిపా করিয়া মহধিত্ব লাভ করিয়াছিলেন, সেই দেবভাষা প্রাকৃত ভাষার নিকট অভিভূত হইয়া থাকিবে, তাহাতে বিস্ময়ের কারণ নাই। আধুনিক বাঙ্গাল সাহিত্যের ভাষা হইতে সংস্কৃত শব্দের নিৰ্ব্বাসনের র্যাহারা পক্ষপাতী, তাহাদিগকে নজীর সংগ্রহের জন্য অন্যত্র যাইতে হইবে না। মহারাজ আদিশূর বঙ্গদেশে বৈদিক পন্থা প্ৰবৰ্ত্তনের জন্য যে সকল বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ আনাইয়াছিলেন, তাহাদের বংশধবদের নামকরণেই এই নজীর মিলিবে। শাগুিল্যগোত্রীয় ভট্টনারায়ণের পাচ পুরুষ পরে যে বংশধরগণ বৰ্ত্তমান ছিলেন, তাহাদের নাম-‘আউ' আর ‘গাউ’ ; কাশুপগোত্রীয় দক্ষের পঞ্চম পুরুষগণের নাম ‘হারো আর 'নারো ; ভরদ্বাজগোত্রজ শ্রীহর্ষের পঞ্চম পুরুষ আবর’ আর ‘পাবর’ আর ‘সাবর’ । সেকালের আদর্শ রাজার নাম লাউসেন, রাজমহিষীদের নাম ‘উন্নুন' আর 'পুদুন ; শ্রেষ্ঠ বণিকের পত্নীদের নাম ‘খুল্পনা’ আর ‘লহনা’। র্যাহার খাটি বাঙ্গাল শব্দ ব্যবহারের একান্ত পক্ষপাতী, তাহাদিগকে আপনার পুত্রকন্যার নামকরণে এই খাটি বাঙ্গল নামগুলির ব্যবহারের জন্য অামি সবিনয়ে অন্তরোধ করিতেছি । র্তাহার অগ্রণী হউন , আমির তাহাদের অনুসরণ কবিৰ । আজ হইতে হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে পালরাজাব। বর্তমান ছিলেন , এবং সে সময়ে দেশের মধ্যে যে হাওয়া বহিয়াছিল, তাঁহারই প্রবাহে বাঙ্গলা সাহিত্যের উৎপত্তি হষ্টয়াছিল, এইরূপ আমরা অনুমান করি। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ সম্প্রতি শূন্তপুরাণ নামক একখানি অপূৰ্ব্ব গ্রন্থ প্রকাশ করিতেছেন , সেই গ্রন্থের ভাষা ও বিষয় দেখিয়া আজি পৰ্য্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রন্থমধ্যে উহাকে বাঙ্গল সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ মনে করা যাইতে পারে । এই মুর্শিদাবাদের অন্তঃপাতী লালগোলার বিদ্যোৎসাহী রাজ শ্রযুক্ত যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় বাহাদুরের অর্থাত্নকূল্যে ঐ গ্রন্থ সাহিত্য-পরিষং কর্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে। আপনাদিগকে ঐ গ্রন্থখানি পাঠ করিতে অনুরোধ করিতে পারি। বাঙ্গল সাহিত্যে উহ এক নূতন জিনিষ,-কতকটা কিন্তুতকিমাকার পদার্থ। আমাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধু শ্ৰীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বস্ব মহাশয় ঐ গ্রন্থের বয়স কিরূপ নিরূপণ করিয়াছেন জানি না, কিন্তু আমার বিবেচনায় উহা অন্ততঃ ছয় শত বৎসর পূৰ্ব্বে রচিত হইয়াছিল, এরূপ অনুমান অসঙ্গত হইবে না। পচিশ বৎসর পূৰ্ব্বে আমাদের ধারণা ছিল, বাঙ্গলা সাহিত্য তিন শত বৎসরের অধিক পুরাতন নহে। বঙ্গবিজেতা উপন্যাসের বিখ্যাত গ্রন্থকার তোড়র মলের সভায় কৃত্তিবাস, কালিদাস ও কবিকঙ্কণকে এক সঙ্গে উপস্থিত করিয়া সেই ধারণার পরিচয় দিয়াছিলেন । আজ আমর। বাঙ্গলা সাহিত্যকে অন্ততঃ আরও তিন শত বৎসর পিছাইয় দিতে সমর্থ হইয়াছি। এবং এই শূন্তপুরাণই যে বাঙ্গলা সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ, তাহাই বা কিরূপে বলিব ! মহীপাল ও যোগীপালের গীত আমাদিগকে আরও পূর্ববর্তী পালরাজ্যের কথা স্মরণ করাইয়া দিতেছে। যে অধুনাবিলুপ্ত হাকন্দপুরাণ বাঙ্গলা দেশে এক কালে ভাগবতপুরাণের অপেক্ষা বেশী আদর পাইত, তাহার নামেই বোধ হয়, উহা সংস্কৃত ভাষার বড় ধার ধারিত না । এই শূন্যপুরাণের কত কাল পূর্বে পালরাজাদের সময়ে ডোমে যখন পৌরোহিত্য করিত ও হাড়িতে যখন গুরুগিরি করিত, ব্রাহ্মণ্য যখন অবসন্ন ও ম্ৰিয়মাণ হইয়া মুখ লুকাইয়াছিল, মহাদেব যখন কোচপাড়ায় ভিক্ষার জন্য বাহির হইয়া কোচবধূদের সহিত