পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89 е রামেন্দ্র মুন্দর রচনাসমগ্র রহস্তালাপ করিতেন, এবং লাঙ্গল হাতে জমি চষিতে প্রবৃত্ত হইয়া মশার কামড়ে বিপন্ন হইতেন, ধর্মের গাজনে ঢাকের বাদ্যে পল্লীসমাজ যখন উন্মত্ত হইয়া উঠিত, সেই অদ্ভূত রসের একত্র সমাবেশের সময়ে, বাঙ্গলার শস্তক্ষেত্রের উপর শ্রাবণের বারিধারার বেগ মাথালির উপর বহন করিয়া, উৎখাত-প্রতিরোপিত ধান্যের হরিদ্বর্ণ চারাগুলি জমিতে গুছাইবার অবকাশে, বাঙ্গলার কৃষকের কণ্ঠে গোপীৰ্চাদ ও মাণিকচাদ, লাউসেন ও ইছাই ঘোষের যে কীৰ্ত্তিকথা গীত হইত, তাহা হইতেই আমাদের বাঙ্গলা সাহিত্যের উৎপত্তি হইয়াছে, আপাততঃ এইরূপ মনে করিয়া লইতে পারি। দক্ষিণ দেশ হইতে ওষধিনাথবংশীয় সেনরাজার বাঙ্গল দেশে প্রবেশ করিয়া হাওয়ার গতি ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। এই সময়ে ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম বঙ্গের সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে । তৎকালের ভ্রষ্টাচার ব্রাহ্মণকে সদাচার শিখাইবার জন্য তৎকালের রাজা ও রাজমন্ত্রী একযোগে দানসাগর ও ব্রাহ্মণসৰ্ব্বস্ব রচনা করিলেন, আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ কায়স্থকে কৌলীন্য মর্য্যাদা দিলেন, যে জনগজঘ শাস্বশাসন অবহেলা করিয়া যোগী গুরু ও ডোম পুরোহিতের অনুবর্তন করিয়াছিল, তাহাদিগকে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্থান দিলেন। জয়দেবের মধুরকোমল-কান্তপদাবলী দেবভাষায় গ্রথিত হইয়া ভাবুক জনকে নূতন রসের আস্বাদন দিয়া নূতন পথের পথিক করিল। মুসলমান আসিয়া সেনরাজাকে রাজ্যচু্যত করিয়াছিলেন, কিন্তু সেনরাজারা যে নূতন বাতাস বহাইয়৷ গিয়াছিলেন, তাহ এই রাষ্ট্রবিপ্লবে ও নিবৃত্ত হয় নাই। দণ্ডধারী রাজা যে সমাজ সংস্কার ও সমাজ শাসনের কার্য্য প্রবর্তন করিয়াছিলেন, রাজার হস্ত হইতে রাজদণ্ড স্বলিত হইলেও সমাজ সেই কাৰ্য্য স্বয়ং চালাইতে আরম্ভ করিয়াছিলেন । হিন্দুসমাজে শ্রেীত ও স্মাৰ্ত্ত আচারের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য ব্রাহ্মণের বন্ধনের পর বন্ধন আঁটিতে লাগিলেন ; কুলীনদিগের মেল বন্ধনে ও রঘুনন্দনের অষ্টাবিংশতি তত্ত্বে তাহার পরাকাষ্ঠ ঘটিল। রামায়ণ ও মহাভারতের পুরাণ কথা ক্রমশঃ মহীপালকে ও মাণিকচাদকে স্থানভ্রষ্ট করিতে লাগিল। বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস যে সুধাম্রোত বহাইলেন, শ্রীচৈতন্য ও র্তাহার পার্ষদের তাহাতে গৌডভূমি ভাসাইয়া দিলেন। এই কাহিনী সৰ্ব্বজনবিদিত, ইহার সবিস্তার বর্ণনা অনাবশ্যক। চৈতন্যদেবের তিরোভাবের পর কয়েক শত বৎসর অতীত হইয়াছে। ঠিক দেড় শত বৎসর পূৰ্ব্বে এই সভাস্থলের অনতিদূরে বাঙ্গলার ইতিহাসের এক অঙ্কের অভিনয়ে যবনিকাপাত হইয়া গিয়াছে। স্বদেশী বা বিদেশী যে সকল অভিনেতা সেই যবনিকাপাতকালে অভিনয় কার্য্যে লিপ্ত ছিলেন, তাহাদের প্রেতাত্মা এখন কোথায় কি অবস্থায় বিদ্যমান আছেন, তাহা বলিতে পারি না ; কিন্তু চিত্রগুপ্তের কোন খাতায় উহাদের নাম লেখা আছে, তাহা আমরা কতকটা অহমান করিতে পারি। পিতৃপুরুষের কৰ্ম্মের ফলভাগ যদি বংশধরকে গ্রহণ করিতে হয়, তাহা হইলে সেই সময়ে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যে ধ্বজ তুলিয়া গিয়াছেন, তাহা সম্মুখে রাখিয়া বিধাতার দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া দাড়াইবার অধিকার আমাদের কিছুতেই থাকে না । যাহাই হউক, বিধাতা কি মনে করিয়া এই পতিত জাতির মধ্যে আজ একটা নূতন হাওয়া তুলিয়াছেন ; এবং সেই হাওয়ার বেগেই নীয়মান হইয়া আধুনিক বঙ্গের সাহিত্যসেবীরা আজ এখানে উপস্থিত হইয়াছেন। হাওয়ার গতিবিধি নিরূপণ করিয়া আমাদের