পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 ર রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র হাতে আপন মাথা ছিন্ন করিয়াছিলেন, তাহ প্রবন্ধলেখক খুলিয়া বলেন নাই । মায়ের এখনকার মূৰ্ত্তি ধূমাবতী-বর্ষীয়সীর দেহ কঙ্কালসার, চক্ষু কোটরগত, পরিধানে ছেড়। কাপড়, মাথায় রুক্ষ কেশ, গায়ে ধুলি উড়িতেছে। ভাঙ্গ রথের মাথার উপর কাক ডাকিতেছে। সেই বঙ্গদর্শনকে আশ্রয় করিয়াক্ট বঙ্কিমচন্দ্র যখন যুগধৰ্ম্মের ব্যাখ্যা করিতে প্রবৃত্ত হন, তখন তিনি জননীর মূর্ত্যস্তর দেখিয়াছিলেন ; সে মূৰ্ত্তি মায়ের ষোড়শী মূৰ্ত্তি—ম। যাহ ছিলেন, অথবা কমলামূৰ্ত্তি - ম যাহা হইবেন । এই মুক্তি তিনি দেখিয়াছিলেন, আর ভক্তিবিহবল স্বরে ডাকিয়াছিলেন— তুমি বিদ্যা তুমি ধৰ্ম্ম তুমি হৃদি তুমি মৰ্ম্ম ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে । বাহুতে তুমি মা শক্তি হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি তোমাবি প্রতিম। গডি মন্দিরে মন্দিরে । অতঃপর অাব ললিতে হইবে না, আমাদের যুগধৰ্ম্মেব লক্ষণ কি ? বঙ্গের সাহিত্য গুরু আমাদিগকে যে লক্ষ্য ধরিয়া যাইতে বলিয়াছেন, বঙ্গের সাহিত্যসেবী মাত্রকেই সেই লক্ষ্যের অভিমুখে চলিতে হইবে। প্রত্যেকের পক্ষে চলিবার পথ ভিন্ন হইতে পারে । সাহিত্যসেবীর মধ্যে কেহ কবি, কেহ ঔপন্যাসিক, কেহ দার্শনিক, কেহ বৈজ্ঞানিক, কেহ জ্ঞান প্রচারে ব্রতী, কেহ ভক্তিপদের উপদেষ্টা, কেহ কৰ্ম্মমার্গের পথপ্রদর্শক । কিন্তু আজিকার দিনে বঙ্গের সাহিত্যসেবীর এক বই দ্বিতীয় লক্ষ্য হইতে পারে ন৷ } যিনি যে কামনা করিয়া কৰ্ম্ম করিবেন, তাহাকে সেই শ্ৰামাঙ্গিনী জননীর চরণে সেই কৰ্ম্মফল অর্পণ করিতে হইবে। যিনি যে ফুল আহরণ করিবেন, সে সকল ফুলই সেই রাঙা চরণের রক্ত জবার সহিত মিশাইতে হইবে । পত্র, পুপ, ফল, তোয় —যাহা আহরণ করিবেন, তাহা ভক্তিপূৰ্ব্বক সেই স্থানেই অর্পণ করিতে হইবে। “যজুহোসি, যদপ্লাসি, যৎ করেষি, দদাসি যৎ”—ভগবতীর আদেশ–সে সমস্তই সেই এক চরণে অর্পণ করিতে হইবে। এই সাহিত্য সম্মিলনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নানা জনের নানা মত থাকিতে পারে। এই সভাস্থলে র্যাহারা উপস্থিত আছেন, তাহারা অনেকেই অনেক উদ্দেশ্য লইয়। এখানে আসিয়াছেন। কেহ বা এই সাহিত্য-সম্মিলনকে বঙ্গের দুঃস্থ সাহিত্যসেবকের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করিতে বলিবেন , কেহ বা ইহাকে সাহিত্যিকগণের স্বার্থরক্ষিণী সভায় পরিণত করিতে চাহিবেন ; কেহ বা বাঙ্গল সাহিত্যের আবর্জন অপসারণের জন্য সম্মার্জনী হাতে লইতে উপদেশ দিবেন ; কেহ বা বাঙ্গলা সাহিত্য হইতে গ্রাম্য অপভাষা নিৰ্ব্বাসনের জন্য কমিশন বসাইতে অনুরোধ করিবেন। এই সমুদয় উদ্দেশ্বের সহিতই আমার সহানুভূতি আছে। এ সকলই কাজের কথা ও পাক কথা, তাহা আমি সন্দেহ করি না। কিন্তু যিনি যে কাজেই লিপ্ত থাকুন, একটা উচ্চতর লক্ষ্যকে সৰ্ব্বদা সম্মুখে না রাখিলে চলিবে না। আপনার ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাথিয়াও