পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

성 88 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র তাহাতে সাহিত্য-পরিষদ গব্বিত হইতে পারেন। এই কয় বৎসরের চেষ্টায় সহস্ৰাধিক অজ্ঞাতপূর্ব বাঙ্গল গ্রন্থ পরিষৎ কর্তৃক আবিষ্কৃত হইয়াছে, এবং তাহার মধ্যে কতিপয় গ্রন্থ মুদ্রিত হইয়া কীটের ও অগ্নির কবল হইতে রক্ষা পাইয়াছে। বহুসংখ্যক গ্রন্থকারের নাম ও কীৰ্ত্তি সাহিত্য-পরিযৎ বিস্মৃতির কুক্ষি হইতে উদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছেন। কৃত্তিবাস কাশীদাসের মত বিখ্যাত কবিগণ কোন সময়ে আবিভূতি হইয়াছিলেন, পনের বৎসর পূৰ্ব্বে লোকের সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না , সাহিত্য-পরিষৎ অনেকাংশে সেই অস্পষ্টতা দূর করিয়াছেন। কবিকঙ্কণেব হাতের লেখা পুথি আশ্রয় করিয়া তাহার চণ্ডীগ্রন্থ প্রকাশ করিতে পরিষৎ প্রস্তুত হইয়াছেন। বাঙ্গলার পুরাতত্ত্ব ও বাঙ্গলা ভাষার গঠনপ্রণালী সাহিত্য-পরিষদের আলোচনার বিযয় হইয়াছে। সাহিত্য-পরিষদের ক্লত কৰ্ম্মেব ফর্দ দিয় তাহার পক্ষে ওকালতির জন্য আমি আজ আসি নাই, তবে সম্প্রতি সাহিত্য-পরিষদের একটি আকাজক্ষা উপস্থিত হইয়াছে, সেই আকাঙ্ক্ষাটি আমি আপনাদিগকে পরিষদের পক্ষ হইতে জানাইতে চাহি। সেই আকাঙ্ক্ষাটি অন্যতর প্রস্তাবরূপে আপনাদের সম্মুখে যথাসময়ে উপস্থিত করা হইবে। প্রস্তাবটির গুরুত্ব বোধে আমি একটু ভূমিকা করিয়া বাখিব । সাহিত্য-পরিষদ একটি মন্দির নিম্মাণ করিতে চাহেন, সেখানে বসিয়া আমরা বাঙ্গল দেশকে ও বাঙ্গালী জাতিকে প্রত্যক্ষভাবে ও স্পষ্টভাবে দেখিতে পাইব । সেইখানে বসিয়া আমরা বঙ্গভূমির বর্তমান অবস্থা তন্ন তন্ন করিয়া জানিতে পারিব ও অতীত ইতিহাসের সম্যকৃরূপে আলোচনার স্বযোগ পাইব । সেই মন্দিরের এক পাশ্বে একটি পুস্তকালয় থাকিবে, সেখানে বাঙ্গলা ভাষায় রচিত, মুদ্রিত, অমুদ্রিত, প্রকাশিত, অপ্রকাশিত যাবতীয় গ্রন্থ সংগৃহীত হইবে। বঙ্গের নানা স্থান হইতে সংগৃহীত হাতে-লেখা প্রাচীন পুথি সেইখানে সুপাকৃতি হইবে। সহস্ৰ বৎসরের ধারাবাহিক চেষ্টার ফলে বাঙ্গলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে কিছু ফসল জন্মিয়াছে, তাহা আমরা এক স্থানে সংগৃহীত ও সঙ্কলিত দেখিতে পাইব । গ্রীক ও রোমান হইতে আরম্ভ করিয়া আধুনিক মার্কিন ও জাপানী পৰ্য্যন্ত যে-কোন বৈদেশিক আগন্তুক বাঙ্গালীর সম্বন্ধে যাহা কিছু লিখিয়া গিয়াছেন, তাহাও সেই স্থানে দেখিতে পাওয়া যাইবে । ইংরেজ সরকার বাঙ্গলার ভূগোল, ইতিহাস, ভাষা; সাহিত্য, সমাজ, ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে যে সকল তথ্য সংগ্ৰহ করিয়াছেন ও করিতেছেন ও সরকারী সাহায্য ব্যতীত যিনি যাহা সংগ্ৰহ করিতেছেন, তাহা সেই স্থানে সযত্বে রক্ষিত হইবে । মন্দিরের অন্য স্থানে আমরা বঙ্গের সাহিত্যিকগণের স্মৃতিচিহ্ন দেখিতে পাইব । চণ্ডীদাস যে বাশুলী দেবতার পূজক ছিলেন, কবিকঙ্কণ স্বপ্নাবেশে চণ্ডীদেবীর যে মূৰ্ত্তি দর্শন করিয়া আপনার গৃহদেবতা প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, কৃত্তিবাস যে ভিটায় বসিয়া রামায়ণ রচনা করিয়াছিলেন, কাশীরাম দাস যে কেশে পুকুরের নিকট বাস *করিতেন, রামপ্রসাদ যে আসনে বসিয়া সাধনা করিতেন, এই সকলের ছায়াচিত্র বা তৈলচিত্র গৃহপ্রাচীর শোভিত করিবে। শ্রীচৈতন্যের হস্তাক্ষরের পার্থে নিত্যানন্দের ছড়ি বিদ্যমান থাকিবে। রামমোহন রায়ের পার্থে হেমচন্দ্রের-পাষাণমূৰ্ত্তি উপবিষ্ট