পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

30 s রামেন্দ্রস্বন্দর রচনাসমগ্র তার পর পুরোহিতের কর্তব্য লইয়া কি বিভেদ আছে, দেখা যাইতে পারে। পুরোহিতের একটা কাজ প্রতিনিধিত্ব। তিনি উপাস্ত ও উপাসকের মধ্যস্থ ; উপাসকের প্রতিনিধিস্বরূপে তিনি উপাসকের পূজা উপাস্তের প্রতি অর্পণ করেন ; এবং উপাস্তের তরফ হইতে উপাসককে পূজার প্রতিদান অর্পণ করেন বা অর্পণ করিবার ভরসা দেন। এই অর্থে তাহার হস্তে স্বর্গের দ্বারের চাবি থাকে ; তিনি যজমানকে উপাস্যের সম্মুখে উপস্থিত করেন, তিনি র্তাহার পরিচয় দিয়া দেন ; র্তাহার হাত দিয়াই উপাস্য উপাসকের মধ্যে সমুদয় কারবার চলে। তিনি যেন ক্ষমতাপ্রাপ্ত উকীল ; তাহার হস্তেই এটনির পাউয়ার আছে । তিনি ভিন্ন অন্যের হাত দিয়া উপাস্য উপাসকের মধ্যে কোন কারবার চলিবার যো নাই ; চালাইলেও চলিবে না। স্বীকৃত উকীল ব্যতীত অন্যের হস্থ দ্বারায় যেমন নালিশ রুজু হয় না, সেইরূপ উপাস্যের স্বীকৃত পুরোহিতের হাত ভিন্ন অন্যের হাতে আবেদন গৃহীত হয় না। ফলে পুবোহিত প্রতিনিধি, তাহার প্রতিনিধিত্ব দুই রকমের । এক শ্রেণীর পুরোহিত ব্যক্তির প্রতিনিধি। প্রাচীন ইহুদীরা জীহোবা দেবের উপাসক ছিল। জীহোবা ভিন্ন অন্য দেবতাকে তাহারা পূজা করিতে পাইত না, অন্যকে পূজা কবিলে জীহোলা অত্যন্ত রাগ করিতেন ও শাস্তি দিতেন ; ইহুদী জাতি জহোবার আপনার লোক ছিল । জীহোবার মন্দিরের পাণ্ডারা সমগ্র ইহুদী জাতির প্রতিনিধিস্বরূপে জীহোবার উপাসনা করিত। পৌরোহিত্য বংশবিশেষে আবদ্ধ ছিল। এক সময়ের রাজা স্বয়ং ইহুদী জাতির প্রতিনিধিস্বরূপে পুরোহিত ছিলেন। খ্ৰীষ্টান সমাজেও পুরোহিতের সমাজ প্রতিনিধিত্ব স্পষ্ট দেখা যায় । পোপ স্বয়ং ক্যাথলিক সমাজের প্রতিনিধিস্বরূপে উপাসকমণ্ডলী ও উপাস্য দেবতার মধ্যস্থত করেন। সমগ্র যাজক সম্প্রদায় পোপের অধীন ও পোপের নিযুক্ত। পোপের সনন্দ যাহার নাই, তিনি যাজক নহেন। প্রকৃতপক্ষেই স্বর্গের চাবি পোপের হস্তে । পোপ যে যজমানকে দরজা খুলিয়া দিলেন, তিনি প্রবেশে অধিকার পাইলেন ; পোপ যাহার প্রতি বিরূপ, তাহার প্রবেশপথ রুদ্ধ। ক্যাথলিক সমাজের কোন ব্যক্তির ধৰ্ম্মজীবন স্বাধীন বা স্বতন্ত্র নহে । চার্চের বাঙ্গালায় সঙ্ঘ শব্দ ব্যবহার করা যাইতে পারে। ক্যাথলিক সমাজে প্রত্যেক খ্ৰীষ্টানের ব্যক্তিগত জীবন সঙ্ঘের জীবনের অঙ্গীভূত। সঙ্ঘ ছাড়িয়া কোনও ব্যক্তি খ্ৰীঃান হইতে পারেন না। সঙ্ঘ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া কোন ব্যক্তি খ্ৰীষ্টান হইতে পারেন না ; অন্তত ক্যাথলিক সমাজের খ্ৰীষ্টান হইতে পারেন না। খ্ৰীষ্টান উপাসক স্বাধীনভাবে ঘরের ভিতর ঈশ্বরের স্তুতি উপাসনা করিতেও হয়ত পারেন ; কিন্তু সে স্তুতি উপাসনার বিশেষ মূল্য আছে বোধ হয় না। ক্যাথলিক সমাজ ভিন্ন অন্যান্য খ্ৰীষ্টীয় সমাজেও এইরূপ সঙ্ঘের গৌরব স্পষ্ট দেখা যায়। সঙ্ঘ ছাড়িয়া যেন ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য নাই। সঙ্ঘের নির্দিষ্ট পুরোহিত ভিন্ন অপরে খ্রষ্টের মিনিষ্টার হইতে পারেন না। র্তাহার হাত দিয়া উপাসনা উপাস্তের নিকট পৌছিবে, তিনিই দেবতার স্বীকৃত ক্ষমতাপ্রাপ্ত উকীল, অন্যের হাত দিয়া নালিশ রুজু হইবে না । ইংরাজ সমাজে রাজা স্বয়ং সঙ্ঘের অধ্যক্ষ। রাজা স্বয়ং যাজকতা করেন না ; কিন্তু তিনিই যাজকমণ্ডলীর নিয়োগে কৰ্ত্ত ও অধ্যক্ষ । সমাজের, প্রতিনিধিস্বরূপে তিনি