পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : ব্রাহ্মণ কি গ্ৰীষ্ট । otö হয় না। এই সকল কৰ্ম্মজ্ঞ ব্রাহ্মণকে প্রীষ্ট বলা হয়, তাহাদের প্রীষ্ট নাম সঙ্গত কি না জানি না ; কিন্তু তাহারা পুরোহিত ছিলেন না, ইহা নিশ্চয় ; তবে যিনি পুরোহিত, তিনি হয়ত কোন এক ঋত্বিকের কার্য্যভার গ্রহণ করিতেন, সে স্বতন্ত্র কথা । সে যাহাই হউক, এ-কালে দেশে হিন্দু রাজাও নাই, রাজপুরোহিতও নাই। হিন্দু সমাজে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন; সমাজের প্রতিনিধিস্বরূপে দেবাচ্চনা করেন বা কল্যাণকামনার জন্য নিযুক্ত আছেন বা দায়ী আছেন, এরূপ কোন পুরোহিত বা বা পুরোহিতসম্প্রদায় অন্ততঃ এ-কালে অস্তিত্বহীন। বড় বড় দেবস্থানের বা তীর্থস্থানের পাণ্ডাদিগকে সমাজের প্রতিনিধি বলিতে পারি না। দূর দেশ হইতে তীর্থযাত্রীরা এই সকল দেবতার নিকট ব্যক্তিগত কল্যাণকামনায় উপস্থিত হয় এবং পাগুদিগের হাত দিয়া যখন পূজা দেয়, তখন পাণ্ডাদের অর্থাগমটাও মন্দ হয় না ; কিন্তু এই পাণ্ডাদের-সমাজপ্রতিভূত্ব নাই। ইহারা সমাজসম্মত, সমাজ হইতে নিযুক্ত পুরোহিত নহেন। যে-কোন হিন্দু কোন পাণ্ডার মধ্যবৰ্ত্তিত ব্যতিরেকে বিশ্বেশ্বরমন্দিরে উপস্থিত হইয়া বিশ্বেশ্বরকে গঙ্গাজল ও বিল্বপত্র অর্পণ করিয়া আসিতে পারেন, কাহারও তাহাতে বাধা দিবার অধিকার নাই। স্থানবিশেষে হয়ত কোন পাণ্ড বা মোহন্ত দেবতাদিগকে নিজস্ব করিয়া লইয়াছেন এবং অর্চনার্থীদিগকে প্রবেশাধিকার দেন না, সেট নিতান্তই গায়ের জোর মাত্র। অথবা সে স্থলে দেবতা পাণ্ডার নিজস্ব দেবতা, হিন্দু সমাজের দেবতা নহেন । যেমন আমার বাড়ীর ঠাকুরকে পূজা করিতে অন্যের অধিকার নাই, এও কতকটা সেইরূপ। আর এক কথা, মন্দিরসংহষ্ট পাণ্ডার পদবী সাধারণতঃ ব্রাহ্মণ সমাজে নিকৃষ্ট স্থানে । আর যেখানে মন্দিরের প্রভুত্ব মোহান্তের হাতে, সেখানে মোহাস্তকেও পুরোহিত বল। যায় না । মোহাস্ত ব্রাহ্মণ নহেন, তিনি সন্ন্যাসী এবং সন্ন্যাসী যাজক হইতে পারেন না। কাজেই বর্তমান হিন্দু সমাজে সমাজের প্রতিনিধিস্বরূপে দেবতার আরাধনা করেন, এরূপ পুরোহিত অস্তিত্বহীন। তবে ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন, এরূপ পুরোহিতের অসদ্ভাব নাই । - আমাদের বাংলা দেশে গৃহস্থ মাত্রেরই নিরূপিত ব্রাহ্মণ পুরোহিত আছেন। জাতকৰ্ম্ম হইতে অস্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্য্যন্ত সমুদয় অনুষ্ঠানে তাহাকে ডাকিতে হয়, অথবা ডাকিবার প্রথা আছে । ডাকিবার প্রথা আছে, কেন না, এই সকল অনুষ্ঠান স্বসম্পন্ন করিবার জন্য অভিজ্ঞ ব্রাহ্মণের প্রয়োজন এবং গৃহস্থ মাত্রেরই অভিজ্ঞতা নাই। কিন্তু যিনি অভিজ্ঞ, তিনি পুরোহিত ডাকিতে বাধ্য কি ? শাস্ত্রে এরূপ বিধান আছে কি যে, পুরোহিতের সাহায্য ব্যতীত কৃতী যজমান স্বয়ং কৰ্ম্ম সম্পাদন করিলে তাহার সে কৰ্ম্ম পণ্ড হইবে ? জাতকৰ্ম্ম হইতে, অথবা আরও একটু আগে গিয়া গর্ভাধান হইতে অস্ত্যেষ্টিক্রিয়। পৰ্য্যস্ত সমুদয় অনুষ্ঠানে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের আবশ্বকতা ; কেন না, ঐ সকল অনুষ্ঠান অধিকাংশই শ্রেীত আচার, বৈদিক মন্ত্র সহকারে ঐ সকল অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়। কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈগু, এই তিন বর্ণের অর্থাৎ হিন্দু সমাজের উচ্চতর স্তরের প্রত্যেক ব্যক্তিরই বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে বৈদিক কর্ণের অনুষ্ঠানে পূর্ণ মাত্রায় অধিকার আছে। যেকোন গৃহস্থ, প্রক্ষিণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশু, স্বয়ং কোনও পুরোহিতের কোন