পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : ব্রাহ্মণ কি প্রীই ? 8鲁世 হিন্দু সমাজের অধিকাংশই শূদ্ৰশ্রেণীভুক্ত। দ্বিজাতিগণ যেন স্বাধীনভাবে ধৰ্ম্মাচরণে অধিকারী, কিন্তু এই বৃহৎ শূদ্ৰজাতি ব্ৰাহ্মণের আহুকূল্য ব্যতীত ধৰ্ম্মাচরণে অনধিকারী ও কাজেই তাহারা ব্রাহ্মণের অর্থাৎ পুরোহিতের- পদানত। ইহা কি ভয়ানক অত্যাচার নহে? শৃত্রের এই পরাধীনতার কৈফিয়ত কি আছে ? কিন্তু তাই কি ? শূত্র কি প্রকৃতই ধৰ্ম্মাচরণে অনধিকারী ? শাস্ত্রবেত্তারা উত্তর দিবেন। লেখক শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ ; লেখকের যেরূপ বিশ্বাস, এখানে তাহাই লিখিত হইতেছে মাত্র। শূদ্রের বেদপাঠে, বেদ উচ্চারণে, বৈদিক অনুষ্ঠানে অধিকার নাই। বৈদিক যাগযজ্ঞে শৃত্রের অধিকার নাই। কিন্তু তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ, পৌরাণিক ব্ৰত পূজাদিতে শূত্রের অধিকার অব্যাহত। শূদ্র শিবপূজা কবিতে পারে, শক্তিপূজা করিতে পারে, ইষ্টদেবতার পূজা করিতে পারে। পুরোহিতের দ্বারা করাইতে হয় না। ভজন্য ঐহিক বা পারিত্রিক যে ফললাভ সম্ভব, তাহা শূন্দ্রেব হস্তগত হইতে বাধা আছে কি ? কেবল বৈদিক অনুষ্ঠানেই শূদ্রের অধিকার না থাকিয়া যদি অপর সমুদয় অনুষ্ঠানে অধিকাব পূর্ণমাত্রায় থাকে, তাহ হইলে শূদ্রের স্বৰ্গপ্রবেশ নিষেধ হইল কি ? এরূপ ব্যবস্থা কোথাও আছে কি, বৈদিক অনুষ্ঠানের অকরণে স্বৰ্গবাস ঘটিতে পাবে না ? বৈদিক অনুষ্ঠানে শূদ্রের অধিকার নাই, অপিচ বৈদিক অনুষ্ঠান শূন্দ্রের পক্ষে আবশ্বকও • হে। জীবনে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ না করিয়াও সে তাহার স্বধৰ্ম্ম পালন করিতে পারে, এবং স্বধৰ্ম্ম পালনের সমগ্র ফল হইতে সে বঞ্চিত হক্টবে না । এক হিসাবে দেখিতে গেলে বলা যাইতে পারে, ব্রাহ্মণ-প্রণীত শাস্ত্র শূদ্রের প্রতি অত্যন্ত পক্ষপাত দেখাইয়াছে। দ্বিজাতির জন্য কঠোর অনুষ্ঠান, কঠোর তপস্যা, যাগযজ্ঞ, নানাবিধ সংস্কারাদি বিহিত হইয়াছে। সেই সকল শ্রমসাধ্য, ব্যয়সাধ্য, কঠোর অনুষ্ঠান শৃত্রের পক্ষে আীে আবশ্বক নহে। শূদ্রের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ পন্থা নির্দিষ্ট আছে। শূত্র সেই সহজ পন্থায় চলিলেই তাহার স্বধৰ্ম্মপালন হইবে , এবং কোন যমদূত তাহাকে নরকে টানিতে পারিবে না । এই হিসাবে দেখিলে বলিতে হয়, ব্রাহ্মণ আপনার জন্য কঠোর বিধি প্রণয়ন করিয়াছেন, কিন্তু শূদ্রের জন্য সহজ পথ ব্যবস্থা করিয়া বরং উদারতা দেখাইয়াছেন। এইরূপ ব্যবস্থা কোথাও আছে কি যে, ব্রাহ্মণের পৌরোহিত্য ব্যতীত শূন্দ্রের স্বধৰ্ম্মপালন চলিবে না ? তবে শূদ্র ব্রাহ্মণকে সম্মান করিতে বাধ্য, সে স্বতন্ত্ৰ কথা । যত দূর দেখা গেল, তাহাতে বোধ হয় খ্ৰীষ্টানদের পুরোহিতে ও আমাদের পুরোহিতে আকাশ পাতাল বিভেদ । খ্ৰীষ্টান পুরোহিতের একটি সমাজকর্তৃক স্বীকৃত নির্দিষ্ট পদবী আছে ; এ দেশে পুরোহিতের সেরূপ সমাজসম্মত কোন পদ নাই। ব্রাহ্মণগণ সমাজের সম্মতিক্রমে উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু ব্রাহ্মণ মাত্রই পুরোহিত নহেন । অন্য ব্রাহ্মণ অপেক্ষ যাজক ব্রাহ্মণের অধিক সামাজিক সন্মান নাই, বরং শাস্ত্রব্যবসায়ী অধ্যাপক ব্রাহ্মণ অপেক্ষ যাজক ব্যবসায়ী পুরোহিত ব্রাহ্মণের সম্মান অল্প । খ্ৰীষ্টানদের দেশে পুরোহিত বা গ্ৰীষ্ট, কোন সমাজসম্মত প্রভূশক্তি কর্তৃক স্বপজে. নিয়োজিত হয় ; ষে ব্যক্তি একের পুরোহিত, সে অন্যেরও নিকট পুরোহিত । অামাদের দেশে সেরূপ প্রভুশক্তি কোথাও নাই। হিন্দু সমাজে পোপ নাই, চার্চের অধ্যক্ষ মাই ; সকলেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র । কাজেই পুরোহিত সমাজ হইতে বা