পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ર রামেজমুন্দর রচনাসমগ্র শ, ষ, স, এই তিনটি বর্ণ আছে ; জিহা ঘেষিয়া বায়ু বাহির হইবার সময় বায়ুর ঘর্ষণে এই এই ধ্বনি জন্মে, ইহাদের নাম উষ্মবর্ণ। র্যাহারা বলেন, বাঙ্গালায় তিনটি উন্মবর্ণের প্রয়োজন নাই, এক ‘শ'য়েই কাজ চলিতে পারে, তাহাদের কথা গ্রাহ নহে। যুক্তাক্ষরের উচ্চারণে আমরা উন্মবর্ণের বিশুদ্ধ উচ্চারণ রক্ষা করিয়াছি, না রাখিয়া উপায় নাই। অবধান করিলেই বুঝা যাইবে। যথা—নিশ্চয়, পশ্চাং, এ স্থলে তালব্য উচ্চারণ, কষ্ট, ওষ্ঠ, এ স্থলে মূৰ্দ্ধন্য উচ্চারণ; হস্ত, মস্তক এ স্থলে দন্ত্য উচ্চারণ। ইংরেজী 2এর উচ্চারণ তালব্য উন্মবর্ণের উচ্চারণ ; বাঙ্গালায় ঐ উচ্চারণ আসিয়া পড়িয়াছে; কিন্তু উপযুক্ত চিহ্ন নাই । নরকষ্ঠানঃস্থত যে সকল ধ্বনি সংস্কৃত ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তাহাদের উৎপত্তি ও প্রকৃত মোটামুটি দেখান গেল । সংস্কৃত ভাষায় যে সকল ধ্বনি আছে, অন্যান্য ভাষাতেও তাহার অনেকগুলি আছে, কোথাও গোটাকতক কম, কোথাও বা গোটাকতক বেশী আছে মাত্র। স স্কৃত ভাষার বর্ণমালা যেরূপ বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে সাজান হইয়াছে, অন্য কোন ভাষার বর্ণমালা সেরূপ সাজান হয় নাই । আমরা বাঙ্গালী ভাষায় ঐ বর্ণমালাই গ্রহণ করিয়াছি, তবে সকল বর্ণের যথাযথ উচ্চারণ fস্থর রাখিতে পারি নাই, এব বাঙ্গfল ভাষায় সংস্কৃত বর্ণমালার অতিরিক্ত দুষ্ট একটা ধ্বনি ব্যবহাব করিয়া থাকি, তাহার স্থান ঐ সংস্কৃত বর্ণমালায় নাই । নৈসৰ্গিক ধ্বনির অনুকরণে ময়ূন্যের ভাষার কিয়দংশ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে, ইহা স্বীকাৰ্য্য। বাঙ্গালা ভাষায় নিৰ্ম্মাণকার্য্যে এই অনুকরণ কতদূর চলিয়াছে, তাহাই এ স্থলে বিচাৰ্য্য । কতিপয় ধ্বনির একযোগে এক একটি শব্দ গঠিত হয়। এক শব্দের উপর এক বা একাধিক অর্থ আরোপ করা হয়। সেই শব্দের সেই অর্থ কোথা হইতে আসিল । শবের গঠনে যে যে ধ্বনি উপাদানরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে, সেই সেই ধ্বনির সহিত সেই সেই অর্থের কোনরূপ সম্পর্ক আছে কিন, তাহা দেখান আবশ্যক; তাহা হইলেই বুঝিতে পারা যাইবে, কেন ঐ শব্দ ঐকপ অর্থে প্রযুক্ত হইতেছে। দৃষ্টান্ত দ্বারা আমর। এ বিষয়ের আলোচনায় প্রবৃত্ত হইব । বলা বাহুল্য যে, অধিকাংশ স্থলেই আমাদিগকে নিরবচ্ছিন্ন অনুমানের উপর নির্ভর কারতে হইবে । শব্দশাস্বের পক্ষে বর্তমান অবস্থায় অন্য উপায় নাই । প্রথমে অ ই উ এই স্বরএয়ের ভেদ কোথায় দেখা যাউক, ‘অ’ উচ্চারণে আমরা বদন ব্যাদান করি; মুখকোটরের পরিসর ও বিস্তার যথাশক্তি বাড়াইয়া লই । ‘ই’ উচ্চারণে মুখকোটরের বিস্তার ছোট হইয় পড়ে। ’উ’ উচ্চারণে আরও ছোট হয়। আমি বলিতে চাহি ষে, for to soft law of association onto ‘অ’ ই উ তিন স্বরের মধ্যে অ। বড় বুঝায় ; ই তার চেয়ে ছোট, উ আরও ছোট বুঝায়। বাঙ্গালায় টা, টি, টু, এই তিনটি প্রত্যয় আছে। যথা--একট, একটি, একটু। একটা বললে যত বড় জিনিস বুঝায়, একটি বলিলে তার চেয়ে ছোট বুঝায়, একটু বলিলে আরও ছোট, অর্থাৎ অতিঅল্প মাত্র বুঝায়। পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন নাকি কোন রাজাকে বলিয়াছিলেন, “তুমি রাজা-টি নও, রাজা-ট, আমিও পণ্ডিতটি নই, পণ্ডিত-টা।”