পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8११ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র না। আগে কি ছিল, পরে কি হইল, কত অাগে এইরূপ ছিল, কত পরে এইরূপ হইল, ইহা না জানিলে কাৰ্য্যকারণসম্বন্ধের নির্ণয় কিরূপে হইবে ? কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাসে সেই পৌৰ্ব্বাপর্য্য নিরূপণের উপায় নাই ; অন্ততঃ ভারতবর্ষের প্রাচীন পুরুষেরা সেই উপায় রাখিয়া যান নাই। অতীত কাল বর্তমানের পশ্চাতে আপনার কায় প্রসার করিয়া রহিয়াছে, কিন্তু সেই অতীতের কোন স্থানে সমাজের কোন চিত্রপটখানি দেখিতে পাইতেছি, তাহা স্পষ্টভাবে নিরূপণের কোন উপায় নাই । ভারতবর্যের যে প্রাচীন সাহিত্য রহিয়াছে, তাহার সহিত পরিমাণে বা গৌরবে অন্য কোন দেশের প্রাচীন সাহিত্যের তুলনা হয় না। হয় ত এই সাহিত্যরাশির মধ্যে ভারতবর্ষের সমাজতন্ত্রের ইতিহাস সঙ্কলন করিবার প্রচুর উপাদান রক্ষিত আছে। অনুসন্ধান দ্বারা এই উপাদান সমস্ত একত্রে সংগ্ৰহ করিয়া তাহাদিগকে সাজাইয়৷ গোছাইয়া আমাদের সমাজতন্ত্রের ইতিহাস সঙ্কলিত হইতে পারে। হইতে পারে মাত্র, কিন্তু এখনও হয় নাই। হয়ত চেষ্টার আরম্ভ হইয়াছে, কিন্তু ফলপ্রাপ্তিতে এখনও বিলম্ব আছে । இ. আবার রাষ্ট্ৰতন্ত্রের ইতিহাসকে একেবারে উপেক্ষা করিলে ভারতবর্ষেও চলিবে না। উদাহরণস্বরূপ মৌর্য্যবংশের উত্থানের সহিত বৌদ্ধ পন্থার বিস্তারের ও গুপ্তবংশের উখানের সহিত বৈদিক পন্থার পুনরভু্যদয়ের সম্পর্কের উল্লেখ করা যাইতে পারে। রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোক বুদ্ধপন্থা আশ্রয় না করিলে ভারতবর্ষের সমাজতন্ত্র কোন পথে চলিত, বলা কঠিন। সমাজতন্ত্র রাষ্ট্ৰতন্ত্র হইতে সম্পূর্ণ স্বাধীন হইতেই পারে না। যে শক্তির দ্বারা সমাজতন্ত্রের রক্ষা ও পরিচালনা ঘটে, আমাদের শাস্ত্রে তাহার পারিভাষিক নাম ধৰ্ম্ম । ভারতবর্ষে এই ধৰ্ম্মের সংস্থাপনকর্তা রাজা নহেন ; র্যাহার এই ধর্মের সূত্রগুলি আবিষ্কার করিতেন ও দেশ কাল পাত্র বিচার করিয়া প্রয়োগ করিতেন, র্তাহারাও আপনাদিগকে ধৰ্ম্মসংস্থাপক বলিয়া পরিচয় দিতে সাহসী হন নাই। এই সনাতন বস্তুর মূল কোথায়, তাহার ঠাহর না পাইয়া, তাহারা ইহাকে অনাদি বলিয়াই স্থির করিয়া গিয়াছেন। এ দেশে রাজা ধৰ্ম্মের সংস্থাপক ও নহেন ; ব্যবস্থাপকও নহেন ; কিন্তু রাজা ধৰ্ম্মের রক্ষাকৰ্ত্ত, ইহা শাস্ত্রে ও স্বীকৃত হইয়াছে। রাজা সৰ্ব্বদা উদ্যতদগু হইয়া ধৰ্ম্মকে রক্ষা না করিলে ধৰ্ম্ম পলায়ন করেন ; ইহা শাস্ত্রে পুনঃ পুন: উক্ত হইয়াছে ; অতএব রাষ্ট্রতন্ত্র হইতে সমাজতন্ত্রকে একবারে বিচ্ছিন্ন করা চলে না। সম্প্রতি বিদেশী লোক আমাদের রাষ্ট্ৰতন্ত্রের নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়াছেন। র্তাহারা ধর্মের একাঙ্গে ব্যবস্থাপকের পদ বলপূর্বক গ্রহণ করিয়াছেন ; তাহারা নিজের ইচ্ছামত আমাদের আইন তৈয়ার করেন। ইহা ভারতবর্ষের প্রাচীন প্রথার বিরুদ্ধ ; প্রাচীন ভারতবর্ষের রাষ্ট্রনেতার এই ক্ষমতা ছিল না। আবার ধর্মের অপরাঙ্গে হস্তক্ষেপে এই বিদেশী রাজ সাহসী হন না ; আমাদের religion ও আচার ব্যবহারকে ইহার আইনের আমলে আনেন না । ভালই করেন ; কিন্তু ধর্মের এই অঙ্গের রক্ষার ভার, স্বাহ রাজার উপরে শাস্ত্রমতে অপিত আছে, সেই রক্ষার ভারও তাহারা লন নাই ; আমরাও তাহাদিগকে দিতে সম্মত হইব না ; অতএব ধৰ্ম্মের এই অঙ্গ সম্প্রতি অরক্ষিত। বিধৰ্ম্মী রাজা আমাদের ধর্থের একাঙ্গে ব্যবস্থাপকের কাজ বলপূৰ্ব্বক