পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যাধি ও প্রতিকার 8>● সময়ে ভাবের বৈদ্যুতী প্রয়োগে সেই পক্ষাঘাত দূর করা আবশ্বক , এবং ডাক্তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন স্বয়ং বৈদ্যুতিক ব্যাটারি হাতে লইয়া বোগীর শয্যাপার্থে বসিয়া আছেন, তখন আমরা একবারে ভরসা হারাই নাই। উত্তেজনাবলে বোগীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অস্বী ভাবিক আক্ষেপ দেখিয়া ডাক্তার যদি কিঞ্চিং চিন্তিত হইয়া থাকেন আমরা বরং পক্ষাঘাত নাশের লক্ষণ দেখিয়া অশান্বিত হইয়া উঠিয়াছি। হিন্দু-মুসলমান সমস্ত সম্বন্ধে দু-একটি কথা বলিয়া এষ্ট প্রবন্ধের উপসংহার করিব । হিন্দু মুসলমান একসঙ্গে দল না বাধিলে ভারতব্যাপী নেশন গঠিত হইবে না, ইহা সকলেই বুঝেন ; এবং ইংরেজও ইহা খুব ভাল করিয়া বুঝেন বলিয়াই উভয়ের মধ্যে বিদ্বেষবহ্নি ধূমাইতে দেখিয়া এতটা খুলী আছেন , মন্দ লোকে বলে, আগুনে কুলার বাতাস দিতেও তিনি ক্রটি করিতেছেন না। উভয়ের মিলনের, পথে যে একটা স্বাভাবিক অন্তরায় আছে, তাহা বলাও বাহুল্য মাত্র । উভয়ের মধ্যে একটা স্বাভাবিক ও সাহজিক বিদ্বেষভাব আছে, তাহাও অস্বীকার করি না । এবং যাহা বিদ্বেষ, তাহ পাপ, ইহাও বলা বাহুল্য। হিন্দু বহু দেবতার পূজা করেন , এমন কি, মাটির প্রতিম। পূজা করেন, ইহা মুসলমানের পক্ষে অসহ ; এবং মুসলমান গোহত্য করেন, ইহাও হিন্দুর পক্ষে অসহ। বিদ্বেষের মূল এইখানে ; এবং এই মূল উৎপাটিত হইবার যখন কোন উপায়ই দেখা যাইতেছে না, তখন এই স্বাভাবিক বিদ্বেষ যে কোনও কালে যাইবে, তাহারও উপায় দেখি না। "বাঙ্গলা দেশের অনেক স্থানে এক আসনে হিন্দু মুসলমান বসে না, ঘবে মুসলমান আসিলে এক অংশ তুলিয়া দেওয়া হয়, ইহার জল ফেলিয়া দেওয়া হয়” ইত্যাদি ষে কয়টি কারণের উল্লেখ রবিবাবুর প্রবন্ধমধ্যে দেখিলাম, সে কারণগুলিকে ততট ভয়াবহ মনে করি না। হিন্দুর শাস্ত্রে এরূপ বিধান থাক আর নাই থাক, মুসলমানের ইহ জানেন যে, হিন্দু জ্ঞানে হউক, অজ্ঞানে হউক, উহা শাস্ত্রবিধানবৎই মানিয় থাকেন। আজকাল রাগের মাথায় হিন্দুর বিরুদ্ধে আছিল খুজিতে গিয় মুসলমানেরা যদি ঐ সকল কথার উল্লেখ কবিয়াও থাকেন, তথাপি ইহা সত্য যে, বহুকালের একত্র বাসে বাঙ্গলা দেশের মুসলমান হিন্দুর ঐরূপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছেন এবং হিন্দুর ঐ ব্যবহার যে মুসলমানের প্রতি ঘৃণার ব্যঞ্জক নহে, কেবল হিন্দুর শাস্ত্রভক্তি বা লোকাচারভক্তিরই ফল মাত্র, তাহাও মানিয়া লইয়াছেন। ঐ ব্যবহারের আমি কোনরূপ সমর্থন করিতেছি না এবং ঐ ব্যবহারের মূলে যে ঘৃণা নাই, তাহাও বলিতেছি না। মূলে ঘৃণা থাকিলেও উহা এখন সামাজিক প্রথা বা convention মাত্রে পরিণত হইয়াছে। হিন্দু যেমন পুতুল পূজা করে, সেইরূপ পান, আহার, উপবেশন প্রভৃতি বিষয়েও কতকগুলি অদ্ভূত নিয়মের বাধ্য বলিয়া আপনাকে মনে করে,-মুসলমান সমাজ ইহা বহু বৎসরের একত্র বাসে স্বীকার করিয়া লইয়াছেন, এবং একত্র সম্ভাবে বাস করিতে হইলে এ বিষয়ে হিন্দুকে ক্ষমা করিয়া চলিতে হইবে, ইহাও মুসলমান সমাজ স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। মুসলমান সমাজ দেখিতেছেন ও জানেন, পানাহারাদি বিষয়ুে এই সকল অদ্ভুত খুটিনাটি যে কেবল মুসলমানের প্রতি ব্যবহারেই আছে, তাহা নহে ; হিন্দুসমাজের ভিতরে বিবিধ স্তরের মধ্যে পরস্পর ব্যবহার মধ্যেও আছে।