পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 - রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র করতে চাইলেন ; আমরা ভাই-ভাই ঠাই-ঠাই হব না ; মা, তুমি কৃপা কর ; আমরা এখন থেকে মানুষের মত হব ; আর পুতুলখেলা করব না, কাঞ্চন দিয়ে কাচ কিম্ব না ; পরের দুয়ারে ভিক্ষা করব না ; মা, তুমি আমাদের ঘরে থাক। বাঙলার লক্ষ্মী বাঙালীকে দয়া করলেন। কালীঘাটের মা-কালীতে তিনি আবির্ভাব হলেন। মা কালী নববেশে মন্দিরে দেখা দিলেন। সে দিন আশ্বিনের অমাবস্ত, ঘোর দুর্য্যোগ। ঝমঞ্চম বৃষ্টি, হুহু ক’রে হাওয়া। পঞ্চাশ হাজার বাঙালী মা কালীর কাছে ধন্ন দিয়ে পড়ল। বললে, মা আমাদের রক্ষা কর। বাঙলার লক্ষ্মী যেন বাঙলা ছেড়ে না যান। আমরা আর অবোধের মত ঘরের লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলব না। কাঞ্চন দিয়ে কাচ নেবে। না। ঘরের জিনিষ থাকতে পরের জিনিষ নেবে না। মায়ের মন্দির হতে ম৷ ব’লে উঠলেন—জয় হউক, জয় হউক, ঘরের লক্ষ্মী ঘরে থাকবেন; বাঙলার লক্ষ্মী বাঙলায় থাকৃবেন ; তোমরা প্রতিজ্ঞ ভূলো না ; ঘরের থাকৃতে পরের নিয়ে না ; পরের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে না ; ভাই-ভাই ঠাই-ঠাই হয়ে না ; তোমাদের “এক দেশ এক ভগবান, এক জাতি এক মনপ্রাণ" হোক, ; লক্ষ্মী তোমাদের অচল হবেন। তিরিশে আশ্বিন, কোজাগরী পূর্ণিমার পর তৃতীয়া। পূর্ণিমার পূজা নিয়ে বাঙালীর লক্ষ্মী ঐ দিন বাঙলা ছাড় ছিলেন। ঐ দিন বাঙলার লক্ষ্মী বাঙলায় অচল হ’লেন। বাঙলার হাট-মাঠ-ঘাট জুড়ে বসলেন। মাঠে মাঠে ধানের ক্ষেতে লক্ষ্মী বিরাজ করতে লাগলেন। ফলে ফুলে দেশ আলো হ’ল । সরোবরে শতদল ফুটে উঠল। তাতে রাজহংস খেলা করতে লাগল। লোকের গোলাভর ধান, গোয়ালভরা গরু, গালভরা হাসি হ’ল। বাঙলার মেয়ের ঐ দিন বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রত নিলে। ঘরে ঘরে সে দিন উকুন জল্ল না । হিন্দু মোছলমান ভাই ভাই কোলাকুলি করলে। হাতে হাতে হলদে স্বতোর রার্থী বাধ লে। ঘট পেতে বঙ্গলক্ষ্মীর কথা শুনলে । যে এই বঙ্গলক্ষ্মীর কথা শোনে, তার ঘরে লক্ষ্মী অচলা হন । বচ্ছর-বচ্ছর ঐ দিনে বাঙালীর মেয়েরা এই ব্ৰত নেবে। বাঙালীর ঘরে ঐ দিন উতুন জলবে না। হাতে হার্তে হলদে স্বতোর রার্থী বাধ বে। বঙ্গলক্ষ্মীর কথ শুনে শাখ বাজিয়ে ঘটে প্রণাম ক’রে বাতাসা-পাটালি প্রসাদ পাবে। ঘরে ঘরে লক্ষ্মী অচলা হবেন। ঘরের লক্ষ্মী ঘরে থাকবেন । বাঙলার লক্ষ্মী বাঙলায় থাকবেন। সবাই বল— আমরা ভাই ভাই একঠাই । ভেদ নাই ভেদ নাই । ভেদ নাই ভেদ নাই ॥ ভাই ভাই একঠাই । ভাই ভাই একঠাই। ভেদ নাই ভেদ নাই । মা লক্ষ্মী, রুপ কর। কাঞ্চন দিয়ে কাচ নেবে না। শাখা থাকতে চুড়ি পরবো না ! ঘন্ধের থাকৃতে পরের নেবে না। পরের দুয়ারে ভিক্ষা করবে না। ভিক্ষার ধন হাতে তুলবো না। মোটা অন্ন ভোজন করবো। মোট বসন অঙ্গে নেবে। মোটা ভূষণ আভরণ করবো। পড়শীকে খাইয়ে নিজে থাব। ভাইকে খাইয়ে পরে খাব। মোট জন্ন অক্ষয় হোকৃ। মোট বস্ত্র অক্ষয় হোকৃ। ঘরের লক্ষ্মী ঘরে থাকুন। স্বাঙলার লক্ষ্মী-বাঙলায় থাকুন।