পাতা:রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী.djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী।
১৭

কিছু অধিকতর স্পষ্ট হয়, সুতরাং লোকে তৎকীর্ত্তনে প্রবৃত্ত হয়। দ্বিতীয়, গুণের সঙ্গে দোষের চিরবিরোধ, দোষযুক্ত ব্যক্তিগণ গুণশালী ব্যক্তির সুতরাং শক্র হইয়া পড়ে। তৃতীয়, কর্ম্মক্ষেত্রে প্রবৃত্ত হইলে কার্য্যের গতিকে অনেক শত্রু হয়; শত্রুগণ অন্যপ্রকারে শক্রতা সাধনে অসমর্থ হইলে নিন্দার দ্বারা শক্রতা সাধে। চতুর্থ, অনেক মনুষ্যের স্বভাবই এই, প্রশংসা অপেক্ষা নিন্দা করিতে ও শুনিতে ভালবাসে; সামান্য ব্যক্তির নিন্দার অপেক্ষা যশস্বী ব্যক্তির নিন্দা বক্তা ও শ্রোতার সুখদায়ক। পঞ্চম, ঈৰ্ষা মনুষ্যের স্বাভাবিক ধর্ম্ম; অনেকে পরের যশে অত্যন্ত কাতর হইয়া যশস্বীর নিন্দা করিতে প্রবৃত্ত হয়েন। এই শ্রেণীর নিন্দকই অনেক, বিশেষ বঙ্গদেশে।

 দীনবন্ধু স্বয়ং নির্ব্বিরোধ, নিরহঙ্কার, এবং ক্রোধশূন্য হইলেও এই সকল কারণে তাঁহার অনেকগুলি নিন্দুক হইয়া উঠিয়াছিল। প্রথমাবস্থায় কেহ তাঁহার নিন্দক ছিল না, কেননা, প্রথমাবস্থাতে তিনি তাদৃশ যশস্বী হয়েন নাই। যখন “নবীন তপস্বিনী” প্রচারের পর তাঁহার যশের মাত্রা পূর্ণ হইতে লাগিল, তখন নিন্দকশ্রেণী মাতা তুলিতে লাগিল। দীনবন্ধুর গ্রন্থে যথার্থই অনেক দোষ আছে,—কেহ কেহ কেবল সেই জন্যই নিন্দা করিতেন। তাহাতে কাহারও আপত্তি নাই; তবে তাঁহারা যে দোষের ভাগের সঙ্গে গুণের কাগ বিবেচনা করেন না, এই জন্যই তাঁহাদিগকে নিন্দক বলি।

 অনেকে দীনবন্ধুর নিকট চাকরির উমেদারী করিয়া নিষ্ফল হইয়া সেই রাগে দীনবন্ধুর সমালোচক-শ্রেণী-মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। এশ্রেণীস্থ নিন্দকদিগের নিন্দায় দীনবন্ধু হাসিতেন,—নিম্নশ্রেণীর সংবাদপত্রে তাঁহার সমুচিত ঘৃণা ছিল, ইহা বলা বাহুল্য। কিন্তু “কলিকাতা রিবিউ”র ন্যায় পত্রে কোন নিন্দা দেখিলে তিনি ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত হইতেন। কলিকাতা রিবিউতে সুরধূনী কাব্যের যে সমালোচনা প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহা অন্যায় বোধ হয় না।